ধর্ষণের দায়ে ‘বাবা’ রাম রহিমের ১০ বছরের জেল
---
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :দুই নারী শিষ্যকে ধর্ষণের দায়ে স্বঘোষিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ভারতের হরিয়ানার সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত। সোমবার বেলা ৪টার দিকে তার এ শাস্তি ঘোষণা করা হয়।
গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের বিরুদ্ধে ১৫ বছর আগে ১৯৯৯ সালে দুই নারী শিষ্যকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। ২০০২ সালে সিবিআই ডেরা-প্রধানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করে। ওই মামলায় শুক্রবার রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করে সোমবার শস্তি ঘোষণার দিন ধার্য করে আদালত। সেদিন থেকেই রোহতকের সুনারিয়ার জেলে বন্দি ডেরা সচ্চা সৌদার প্রধান রাম রহিম।
আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর থেকে উত্তাল হরিয়ানা। রাম রহিমের ভক্ত-অনুগামীদের হামলায় মারা যান ৩৮ জন। বিক্ষোভ সামাল দিতে না পারায় দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে পাঁচকুলার ডিএসপিকে।
সেদিনের কথা মাথায় রেখে আর কোনো রকম ঝুঁকি নিতে চাইছিল না প্রশাসন। নিরাপত্তার স্বার্থে রাম রহিম যে জেলে বন্দি, সেখানেই উড়িয়ে নেয়া হয় বিচারকসহ গোটা আদালত। ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে ফেলা হয় গোটা এলাকা।
জেলের বাইরের নিরাপত্তায় প্রায় তিন হাজার আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। জেলের দিকে যেসব রাস্তা গেছে, তার সবগুলোই আটকে দেয়া হয়েছে। হরিয়ানার সব স্কুল, কলেজ বন্ধ। পার্শ্ববর্তী রাজ্য পাঞ্জাব এবং গাজিয়াবাদ ও নয়ডাতেও স্কুল, কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রোহতকের ডেপুটি কমিশনার জানান, কেউ গোলমাল বাঁধানোর চেষ্টা করলে একবার সতর্ক করা হবে, না শুনলেই গুলি।
সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক জগদীপ সিংকে ইতিমধ্যেই বিশেষ নিরাপত্তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। হাঙ্গামা ঠেকাতে ইতিমধ্যে আটক করা হয়েছে প্রায় এক হাজার জনকে। ডেরার সদর দফতর থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৩০ হাজার ভক্তকে। জেলায় মোতায়েন রয়েছে ২৮ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী।
আনন্দবাজার পত্রিকায় বলা হয়, দুপুর আড়াটার দিকে জেলে পৌঁছান বিচারক জগদীপ সিং। এর আগে হেলিকপ্টারে করে জেলে প্রবেশ করেন দু’পক্ষের আইনজীবীরা। রাম রহিমের আইনজীবী আদালতে বলেন, রাম রহিম একজন সমাজসেবক। জনগণের কল্যাণের জন্য তিনি কাজ করেন। এসব মাথায় রেখেই বিচারের অনুরোধ জানান তিনি।
রাম রহিম সমাজ সেবা করেন তাই তাকে কম সাজা দেয়ার অনুরোধ করেন স্বয়ং বিচারকও। এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন রাম রহিম। হাত জোড় করে বিচারকের কাছে ক্ষমা চান তিনি।
এদিকে, রায় ঘোষণার পর ডেরা চেয়ারপারসন বিপাস্যনা ইনসান সমস্ত অনুগামীদের শান্তি বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে হরিয়ানার সিরসায় দুটি গাড়িতে আগুন লাগিয়েছে ডেরা সমর্থকেরা।
ভারতের অসংখ্য ধর্মগুরুর মধ্যে বাবা রাম রহিমের চরিত্র বড়ই বর্ণময়। তিনি একাধারে ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, সিনেমার নায়ক ও পরিচালক। শিখ, হিন্দু, মুসলিম সব ধর্মের চেতনার মিশেলেই তৈরি হয়েছে এ ধর্মগুরুর কাল্ট। হরিয়ানার সিরসায় তার ‘ডেরা সাচ্চা সওদা’ আশ্রম প্রাঙ্গণে নিয়মিত বসে পপ কনসার্ট। সেখানে ডেরা প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিং নিজেই তার ব্যাপক জনপ্রিয় ‘ইউ আর মাই লাভ চার্জারে’র মতো আরো অনেক গান গেয়ে থাকেন। সূত্র: ডেককান ক্রনিকল ও আনন্দবাজার পত্রিকা