g ঈদ উৎসব দেশে দেশে | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বুধবার, ৬ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ইং ২২শে ভাদ্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

ঈদ উৎসব দেশে দেশে

AmaderBrahmanbaria.COM
সেপ্টেম্বর ১, ২০১৭

---

ঈদ মানে উৎসব। ঈদ মানে আনন্দ।

পৃথিবীর সব দেশেই ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদ জাঁকজমক করে উদযাপন করা হলেও ঈদুল আজহার আনন্দে কিন্তু খুব একটা ভাটা পড়ে না। ত্যাগের মহীমায় উজ্জীবিত হয়ে প্রতিটি দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। একেক দেশে একেকভাবে পালিত হয় কোরবানির ঈদ। তবে ইউরোপ ও আমেরিকার ঈদ বাংলাদেশ বা উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের মতো তেমন আড়ম্বরপূর্ণ হয় না।

প্রবাসে ঈদ উৎসব

প্রিয়জনের সান্নিধ্য ত্যাগ করে সুদূর প্রবাসে পবিত্র ঈদ উদযাপন করেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসীরা। উৎসবের দিনে তারা প্রিয়জনকে মনে-প্রাণে স্মরণ করেন। তাদের স্মৃতি মনে করে কতজন যে নীরবে-নিভৃতে চোখের পানি ফেলেন, তার খবর কে রাখে? বর্তমানে ইন্টারনেট বিপ্লবের যুগ। তাই ঈদের দিনে বেশির ভাগ সময় কাটে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে। প্রবাসী ব্যক্তিটি নিজের জন্য নতুন কাপড় না কিনলেও বাড়ির সদস্যদের জন্য কেনার তাগিদ থাকে ষোল আনা। নতুন পোশাকে হাসিমুখগুলো আর বাড়িতে তৈরি বাহারি খাবারের ছবি দেখেই তাদের তৃপ্তি। অপরদিকে মায়ের হাতের মজার খাবারের কথা চিন্তা করে প্রবাসী ব্যক্তি হয়তো নিজেই কিছু তৈরি করতে গেল। সেটা খাদ্য হোক আর অখাদ্য হোক, তৃপ্তির হাসি নিয়ে বাড়ির লোকের সঙ্গে সেসব কথা শেয়ার করা, হাসাহাসি করার মাঝে খুঁজে নেন ঈদের আনন্দ। তাদের কেউ কেউ দুঃখ-কষ্ট ভুলতে, একাকিত্বের অসহায়ত্ব থেকে কিছু সময়ের জন্য মুক্তি পেতে প্রবাসেই গড়ে তোলেন আপন জগৎ। হয়তো কখনো ঘুরতে বের হন। কখনোবা বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা চলে। খাবার-দাবার রান্না করা, খাওয়াতেও কাটে কিছুটা সময়। তাদের একজন বাংলাদেশি ৩০ বছর বয়সী পেইন্টার জাকারিয়া। তিনি সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছেন প্রায় সাত বছর আগে। এরপর থেকে প্রতিটি ঈদ উদযাপন করেছেন পিতা-মাতা ও স্বজন ছাড়া। তিনি জানান, ‘মা-বাবা ও ভাইবোন ছেড়ে ঈদ করাটা প্রথম বছর খুব কষ্ট হয়েছিল।

কিছুতেই বাড়ির কথা ভুলতে পারছিলাম না। এখানে আসার পর আর বাংলাদেশে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারিনি। তাই ঈদের দিন মাকে খুব মনে পড়ে। তার হাতের সেমাই-পায়েসের স্বাদই আলাদা। ঈদের দিন এখানে থাকা আমার বাঙালি বন্ধুদের নিয়ে সময় কাটাই। কিন্তু সব সময়ই মনে রাখি আমার পরিবারকে। দেশে না ফেরার এ যাতনার পেছনে রয়েছে অর্থ বাঁচানোর কারণ। যে অর্থ আমার আসা-যাওয়ায় খরচ হতো তা আমি জমা করতে পারছি এখানে বসে। তবে ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে কয়েক হাজার টাকা পাঠাই। ঈদের দিন বাবা-মা ও ভাইবোনের সঙ্গে ফোনে কথা বলি। এখন ভিডিও চ্যাটিংও হয়। ২৬ বছর বয়সী ভারতীয় হাফসা এ দেশে তার তৃতীয় ঈদ উদযাপন করবেন পরিবারহীন। ‘ঈদের পরদিন কাজ শুরু করতে হয়; সবাইকে খুব মিস করি। ’

 

‘কুরব’ থেকে কোরবানি

কোরবানি অর্থ উৎসর্গ।

এ উৎসর্গের মূল্যায়ন আর্থিক ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় না, বরং হয় একমাত্র আল্লাহ ভীরুতার ওপর। কোরবানি কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হতে হবে। কোরবানি শব্দটি এসেছে ‘কুরব’ শব্দ থেকে, যার অর্থ নৈকট্য, সান্নিধ্য ও নিকটবর্তী হওয়া।

কোরবানির মাধ্যমে হালাল পশু আল্লাহর নামে উৎসর্গ করে তার নিকটবর্তী হওয়া। কোরবানি করার জন্য নির্দেশ রয়েছে সূরা কাউসারে।

আমাদের দেশে কোরবানির ঈদের পরিচিতি ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ নামে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর আরও অনেক নাম আছে। মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনেশিয়া, মিসর এবং লিবিয়ায় কোরবানির ঈদকে বলা হয় ঈদুল কিবির। আফ্রিকার অনেক এলাকায় এর পরিচয় তাবাসকি বা তোবাসকি নামে। নাইজেরিয়া এবং পূর্ব আফ্রিকায় পরিচিত বাব্বার সালাহ নামে। সোমালিয়া, কেনিয়া এবং ইথিওপিয়ায় বলা হয় সিডওয়েনি। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পাকিস্তানে ঈদুল আজহাকে বলা হয় বকরি ঈদ। এসব দেশের বেশির মানুষ ভাগ ছাগল-ভেড়া দিয়ে কোরবানি করে। একমাত্র ইন্দোনেশিয়াতেই বলা হয় ঈদুল আজহা। তুরস্কে বলা হয় কোরবান বেরামি বা ত্যাগের উৎসব। অন্যদিকে বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, আলবেনিয়া এবং বুলগেরিয়ায় বলা হয় কোরবান বাজরাম। কাজাখস্তানে বলা হয় কোরবান এইত। কুর্দিশরা বলে সেজনা কোরবানে। আফগানিস্তানে আছে কয়েকটি নাম। দারি ভাষার লোকেরা বলে ঈদ-ই কোরবান। পোশতু ভাষার লোকেরা বলে লয় আখতার বা কোরবানি আখতার। আফ্রিকারই আরেকটি দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় একে বলা হয় ‘বকরি ঈদ’। অনেকটা ভারত আর পাকিস্তানের মতোই। ইন্দোনেশিয়ায় এর নাম ‘ঈদুল আদহা’ হলেও মালয়েশিয়ায় বলা হয় ‘আইদিল আদহা’। আবার মালয়েশিয়ায় একে ‘হারি রায়া কোরবান’ নামেও ডাকা হয়ে থাকে। এর অর্থ হচ্ছে ত্যাগ স্বীকারের উৎসব। এদিকে কুর্দিরা বলে ‘সেজনা কুরবান’। কোরবানির ঈদ একেক দেশে একেকভাবে পালিত হয়। তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এ ধারা একই রকম। ঈদের নামাজের পরপরই মুসলমানরা তাদের পশু নিয়ে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে যান। হোক সেটা রাস্তা অথবা কোনো খেলার মাঠ। আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান ও মালদ্বীপে একই চিত্র।

কোরবানির পশু নির্বাচন

ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। কোরবানির পশু কেনার ক্ষেত্রে অনেকেরই পশু পছন্দ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই অথবা থাকলেও খুব কম। তাই পশু নির্বাচনের কিছু মৌলিক বিষয় আমাদের জানা থাকলে নির্বাচনের ভুল-ভ্রান্তি কম হবে। পশু জবাই করার পর পশু আর পশু থাকে না হয়ে যায় কোরবানির মাংস। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা কি কোরবানির মাংস পেতে চাই, না কি কোরবানির চর্বি পেতে চাই? আমাদের বেশির ভাগ মানুষই চর্বিযুক্ত নাদুস-নুদুস পশু নির্বাচন করে থাকি। এটা একটি ভুল চিন্তা বা আমরা ব্যাপারটা এতটা তলিয়ে কখনো ভাবিনি। পশুর চর্বি মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। এতে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও শারীরিক ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। তাই স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে চর্বিসম্পন্ন পশু নির্বাচন যুক্তিযুক্ত নয়। পশুর চর্বিতে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল বিদ্যমান থাকায় তা হৃৎপণ্ডে ব্লক তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এত সব বিবেচনা করলে কম চর্বিযুক্ত পশু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তবে কীভাবে পশু দেখে তা বোঝা যাবে তার কিছু মৌলিক বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে। পশুর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য দেখে তা চেনা যেতে পারে। যেমন : অধিক চর্বিসম্পন্ন পশু দেখতে নাদুস-নুদুস হবে, পেট সাধারণত বুক থেকে নিচে নেমে থাকবে, পশুটি তুলনামূলকভাবে কম নড়াচড়া করবে, মানে পশুটি একটু অলস প্রকৃতির হবে, পশুর শরীর লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, এটা অনেকটা বেলুন আকৃতির, মানে চামড়ার উপরে কোনো রকম উঁচু-নিচু বা গর্ত পরিলক্ষিত হবে না, পশুটি তুলনামূলক কম আওয়াজ করবে, পশুটি চলাফেরা করার সময় চামড়ার নিচে মাংসে সঙ্কোচন ও প্রসারণ চোখে পড়বে না, পশুটি তুলনামূলকভাবে কম শক্তিশালী হবে। যদি পশুটিকে বেশি করে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের মাধ্যমে মোটাতাজা করা হয়ে থাকে, তবে এসব বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে আরও একটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় যে, এর শরীরে হাতের আঙ্গুল দিয়ে ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড চাপ দিয়ে ধরে থাকলে চামড়ায় একটি গর্ত সৃষ্টি হবে এবং আঙ্গুল সরিয়ে নেওয়ার পর অনেকক্ষণ ধরে গর্তটি বিদ্যমান থাকবে। এসব পশুর শরীরে লোমের পরিমাণ কমে যেতে পারে। কম চর্বিসম্পন্ন পশু নির্বাচন করতে চাইলে পশুটি হওয়া চাই যথাসম্ভব কম বয়স্ক চঞ্চল, যা বেশি নড়াচড়া করতে থাকবে, পশুটি হবে শক্তিশালী, বেশ বড় করে আওয়াজ করবে, পেট অপেক্ষাকৃত ছোট, শারীরিক গঠনে উঁচু-নিচু বা গর্তের মতো জায়গা চামড়ার উপরে ভেসে উঠবে। চলাফেরার সময় চামড়ার নিচের মাংস পেশির নড়াচড়া নজরে আসবে যেমন বডি বিল্ডারদের শরীরে পেশিগুলো নজরে আসে। যারা অনেক দামি পশু কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন তারা একটি বড় নাদুস-নুদুস পশু না কিনে শারীরিক যোগ্যতাসম্পন্ন একাধিক পশু ক্রয় করতে পারেন।

 

কোরবানি দেশে দেশে

 

ইন্দোনেশিয়ায় কেবল হাজীরাই কোরবানি দেন

আয়তনের দিক দিয়ে ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ। পোশাকে ইউরোপিয়ানের মতো হলেও এখানকার বেশির ভাগ মানুষ নামাজ পড়েন। এরা ধর্মভীরু কিন্তু কোনো রকম ধর্মীয় গোঁড়ামি কাজ করে না। রোজার ঈদ খুব আনন্দের সঙ্গে পালন করলেও কোরবানিটা এরা কোনো রকমে কাটিয়ে দেয়। ইন্দোনেশিয়ায় সাধারণত যারা হজ করেছেন কেবল তারাই কোরবানি দেন এবং শুধু তাদের ওপর নাকি কোরবানি ফরজ। গরু বা ছাগল কিনে হাজীরা এলাকার মসজিদে দিয়ে দেন। এ রকম করে দেখা যায় একটা মসজিদে দুই-একটা গরু এবং ৮/১০টা ছাগল জমা হয়। মসজিদের ইমাম ওই এলাকায় ঘর হিসাব করে কোরবানির গোশত ভাগ করে দেন সমানভাবে। যাদের অবস্থা ভালো তারা ফিরিয়ে দিয়ে বলেন, আমি গোশত কিনতে পারি, তাই আমার অংশটা গরিব কাউকে দিয়ে দাও। এর বাইরেও কেউ কোরবানি দিলে সেটাতেও কোনো বাধা-নিষেধ নেই।

 

চীনে অন্যরকম ঈদ

চীনে আছেন সাড়ে ১৬ কোটি মুসলমান। সংখ্যালঘু গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছেন। হুই, উইঘুর, কাজাক ও সালার জনগোষ্ঠী চান্দ্র বছরের পঞ্জিকা দেখে ঈদ উদযাপন করেন। নিংঝিয়া প্রদেশের হুই মুসলমানরা ঈদুল ফিতরকে বড় ঈদ মনে করে থাকেন এবং গানসু ও চিংহাইয়ের হুই মুসলিমরা এটিকে মনে করেন বছরের শুরু। আবার ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাকে বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করা হয়। চীনের মুসলমানরা যেখানেই কাজ করুন না কেন দুটি ঈদেই তারা বাড়িতে আসেন এবং পরিবারের সবাই একত্রে ঈদ উদযাপন করেন। ঈদুল আজহার মতো ঈদুল ফিতরও তারা তিন দিনব্যাপী উদযাপন করেন। নারী-পুরুষ সবাই নতুন জামা-কাপড় পরেন। রঙিন কাগজ, বাণী সংবলিত ব্যানার ও পোস্টার ব্যবহার করে মসজিদ সাজানো হয়। ঈদের নামাজের আগে মসজিদে সাঁইরেন বা ঘণ্টা বাজানো হয়। ঈদুল আজহায় তারা সাধারণত কয়েকজন মিলে একটি পশু কোরবানি করেন।

 

কোরবানির অর্ডার নেওয়া হয়

যুক্তরাজ্যে মুসলমান আছেন প্রায় ৩০ লাখ। যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ ভাগ। অধিকাংশ মুসলমানই ইংল্যান্ড ও ওয়ালেসে বসবাস করেন। যুক্তরাজ্যের মুসলমানরা খুব বেশি ধর্মভীরু নন। যারা কেবল মসজিদ ও তাবলিগ জামাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত তারাই দৃঢ়ভাবে ইসলাম পালন করে থাকেন। দুই ঈদে মুসলমানরা ট্রাফালগার স্কয়ারে মিলিত হন এবং ঈদ উদযাপন করেন। তবে সেখানকার ঈদ বাংলাদেশ বা উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের মতো তেমন আড়ম্বরপূর্ণ হয় না। যুক্তরাজ্যে প্রকাশ্যে পশু জবাই করা নিষিদ্ধ। তাই ঈদে নির্ধারিত এলাকায় সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান থেকে কোরবানি দেওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে অনেক এশিয়ান গ্রোসারি ঈদের সময় কোরবানির জন্য আগ্রহীদের নাম সংগ্রহ করে থাকে। ঈদের প্রায় এক মাস আগে থেকে দোকানে দোকানে সাইনবোর্ড ঝোলানো থাকে : ‘এখানে কোরবানির অর্ডার নেওয়া হচ্ছে’। এর অর্থ হচ্ছে এখানে নাম লিখিয়ে প্রতি নামের বিপরীতে অর্থ দিয়ে যেতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোরবানির পর গরু বা ভেড়ার গোশত ঈদের পরের দিন প্রাহকদের কাছে সরবরাহ করে তারা। এত বাধা সত্ত্বেও ধর্মীয় বিধান মানতে এখানে কোরবানি করা হয়।

 

স্থানীয় মসজিদে পশু কোরবানি করা হয়

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সুইডেনে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় মসজিদের উদ্যোগে ওসা জিমনেশিয়ামে বৃহত্তম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামাতে প্রবাসী অনেক বাঙালি আছেন। বাংলাদেশের মতো সেখানেও নামাজের আগে কোরবানির তাৎপর্যের ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহর সুখ-সমৃদ্ধি কামনায় করা হয় বিশেষ মোনাজাত। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে নানান আয়োজনে ঈদুল আজহা পালন করা হয়। মালয়েশিয়ায় কোরবানিতে ভেড়াই প্রধান পশু। তবে গরু, ছাগলেরও বিপুল উপস্থিতি দেখা যায়। মালয়েশিয়ানরা সাধারণত সমাজবদ্ধভাবে কোরবানি করতে পছন্দ করেন। স্থানীয় মসজিদে সেখানকার সব পশু একসঙ্গে করে সব গোশত একসঙ্গেই বণ্টন করা হয়। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার ঐতিহ্যে বেশ সামঞ্জস্য রয়েছে।

 

ছুটিহীন ঈদ কাটান জার্মানির মুসলমানরা

৬০ ও ৭০ দশকের পর জার্মানিতে ইসলাম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী জার্মানিতে মুসলমান আছেন ৪৩ লাখ (মোট জনসংখ্যার ৫.৪ ভাগ) এবং তাদের মধ্যে জার্মান নাগরিক হলেন ১৯ লাখ (মোট জনসংখ্যার ২.৪ ভাগ)। জার্মানির মুসলমানদের শতকরা ৬৩ ভাগ তুর্কি বংশোদ্ভূত। জার্মান মুসলমানরাও দুই ঈদসহ কোনো ধর্মীয় উৎসবেই সরকারি ছুটি পান না। যেসব মুসলমান সরকারি চাকরিজীবী তাদের খ্রিস্টান সহকর্মীদের ধর্মীয় উৎসবে ছুটি দেওয়া হলেও মুসলমানরা তা পান না। ওখানে কেবল খ্রিস্ট ধর্মীয় উৎসবেই জাতীয় ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়। জার্মানিস সেন্টার কাউন্সিল অব মুসলিমের সভাপতি আইমান মাজইয়াক বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরকারের কাছে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবেও ছুটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। জার্মানিতে তাই মুসলমানদের ঈদে ততটা সমারোহ হয় না। অধিকাংশ মুসলমান বার্লিনে বা শহরাঞ্চলে থাকেন বলে ওখানেই ঈদের নামাজ আদায় করেন।

 

অস্ট্রেলিয়ায় ছুটিহীন ঈদ

ঈদুল আজহার দিন অস্ট্রেলিয়ায় সরকারি ছুটি থাকে না। তবে ইসলামিক স্কুল, সামাজিক ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলো এ দিনটিতে বন্ধ থাকে। অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়ের বসবাস প্রধানত সাবারবান শহরকে কেন্দ্র করে। এখানে আলাদা কোরবানির পশু কিনে লালন-পালন করার সুযোগ না থাকায় কয়েকটি পরিবার মিলে একজনকে পশু কেনার এবং যত্ন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ঈদের দিন সকালে মুসলমানরা মসজিদে নামাজ আদায় করেন। তারপর কোরবানি দিয়ে গোশত এবং চামড়ার টাকা গরিবদের মধ্যে দান করেন। মুসলমান ছাড়াও অন্য ধর্মাবলম্বীদেরও এই গোশত উপহার হিসেবে দান করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার মুসলমানরা এ দিন ‘বাকলাঙা’ এবং ‘লোকুম’ নামের দুটি তার্কিশ ডিম রান্না করেন।

 

জ্যামাইকায় সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত

নিউইয়র্কে প্রায় ৮০ হাজার বাংলাদেশির বসবাস। যাদের বেশির ভাগই মুসলিম। ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করে থাকেন তারা। সবচেয়ে বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সেখানকার অন্যতম বাংলাদেশি প্রধান এলাকা জ্যামাইকায়। শহরের ম্যানহাটন, জ্যাকসন হাইটস, উডসাইড ও ব্রুকলিন এলাকায় বাংলাদেশিদের পরিচালিত জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি) হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয় জামাতটি। প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লি জামাতে অংশ নেন। ঈদে জেএমসিতে তিনটি জামাতের ব্যবস্থা হলেও বহু মুসল্লি জামাতে অংশ নিতে না পারায় জেএমসি গত দুই বছর ধরে ১০টি খোলা মাঠে নামাজের ব্যবস্থা করে আসছে।

 

ত্যাগের মহিমা ফিনল্যান্ডে

ফিনল্যান্ডজুড়ে মুসলমানরা উদযাপন করেন বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। নতুন পোশাক পরে কনকনে শীতের মধ্যেও ফিনল্যান্ডে বাংলাদেশিরা সমবেত হন ঈদের জামাতে। রাজধানী হেলসিংকিতে অনুষ্ঠিত হয় এই জামাত। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি এবং সমৃদ্ধি কামনায় করা হয় দীর্ঘ মোনাজাত। ঈদ উৎসবে খোঁজখবর নেওয়াসহ নানা আয়োজনে মশগুল থাকবেন তারা।

 

ভেদাভেদ ভুলে মশগুল হোন দাওয়াত দেওয়া-নেওয়ায়

বিশ্বের অন্য সব দেশের মতো পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করেন দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলমানরা। দেশটির রাজধানীতে ঈদের জামাতগুলোতে চোখে পড়ে লাখো মুসল্লির ঢল। নামাজ শেষে সবাই নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি করেন। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই ভেদাভেদ ভুলে মশগুল হন একে অপরকে দাওয়াত দেওয়া-নেওয়ায়। দিন শেষে বাঙালিসহ সব প্রবাসীই দেশে পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এ জাতীয় আরও খবর