ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন দলেই শিল্পপতি প্রার্থীর ছড়াছড়ি
---
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বইছে ঢাকার অদূরের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও। সংসদীয় ছয়টি (২৪৩, ২৪৪, ২৪৫, ২৪৬, ২৪৭ ও ২৪৮) আসনে এরই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। মনোনয়ন পেতে অনেকেই তৃণমূলের পাশাপাশি কেন্দ্রেও তৎপরতা বাড়িয়েছেন। তবে এ জেলায় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। বয়সে প্রবীণদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাঠে নেমেছেন অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রার্থীও। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যেই বেশি তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে জাতীয় পার্টি, জাসদ ও ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছেন। জামায়াত ও অন্য ছোটখাটো দলের নেই কোনো তৎপরতা। বিগত রমজান ও ঈদুল ফিতরকে ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে জানান দিয়েছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুব একটা দূরে নয়। ঈদুল আজহাকে ঘিরেও প্রার্থীরা শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে ব্যানার ও ফেস্টুন তৈরি করছেন। শিল্পপতি প্রার্থী হওয়ায় আগামী নির্বাচনে মনোনয়নকে ঘিরে টাকার ছড়াছড়ি হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা বর্তমান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হক দলীয় একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপি থেকেও দলের সম্ভাব্য একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও শিল্পপতি সৈয়দ এ কে এম একরামুজ্জামান। একইভাবে জাতীয় পার্টির নেতা ও শিল্পপতি রেজওয়ান আহমেদও প্রার্থী হতে পারেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) এ আসনে বর্তমান এমপি ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা আগামী নির্বাচনে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এবার ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হান্নান রতনও শক্ত প্রার্থী হিসাবে মাঠে রয়েছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ সহসভাপতি মঈনউদ্দিন মঈন, ধানমন্ডি আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক উম্মে ফাতেমা নাজমা শিউলী আজাদও মনোনয়নপ্রত্যাশী। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তারও দলের পক্ষে মনোনয়ন চাইবেন। তবে এই আসনে দলের শক্ত প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা শেখ মোহাম্মদ শামীম। এ ছাড়া সাবেক উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান এবং আশুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদও মনোনয়নপ্রত্যাশী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) মর্যাদার এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। সভা-সমাবেশে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ করছে। নাসিরনগর হিন্দুপল্লীতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দায়ভার আওয়ামী লীগের একাংশের। এ কারণে এই আসনে আওয়ামী লীগ নাজুক অবস্থায় পড়েছে। তবে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। দলের নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশই তার পক্ষে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক মেয়র মো. হেলাল উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তাজ মো. ইয়াছিন ও মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বিএনপির অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল। এলাকায় নেতা-কর্মীদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন তিনি। এ ছাড়াও সাবেক মন্ত্রী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট হারুন আল রশীদও মনোনয়ন চাইতে পারেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের যুববিষয়ক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াও দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত আমিনীও প্রার্থী হতে পারেন। হেফাজতে ইসলাম নির্বাচনে অংশ নিলে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) এ আসনের বর্তমান এমপি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। কসবা-আখাউড়ায় নানামুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। এলাকার সর্বসাধারণের কাছেও তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়। তবে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট শাহ আলমও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনিও এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা বিশিষ্ট শিল্পপতি নাছির উদ্দিন হাজারী। দীর্ঘদিন এলাকার নেতা-কর্মীর দুর্দিনে পাশে রয়েছেন তিনি। নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছেও বেশ জনপ্রিয় বিএনপির এই নেতা। তবে এ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুশফিকুর রহমানের নাম শোনা গেলেও বার্ধক্য ও শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন কানাডায় মেয়ের সঙ্গে বসবাস করছেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি থেকে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতা ও কসবা উপজেলা আহ্বায়ক তারেক-এ আদেল দলীয় প্রার্থী হতে পারেন বলে নেতা-কর্মীদের মুখে শোনা যাচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) : এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান এমপি ও উপজেলা সভাপতি ফয়জুর রহমান বাদল। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট শিল্পপতি এবাদুল করিম বুলবুল, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী মোরশেদ হোসেন কামাল, সাবেক ছাত্রনেতা আবু আব্বাস ভূঁইয়াও মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দৌড়ঝাঁপ করছেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তকদীর হোসেন মোহাম্মদ জসিম। তিনি নিজ এলাকার পাশাপাশি কেন্দ্রেও তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন ভূঁইয়া শিশির ও সাবেক এমপি মরহুম কাজী আনোয়ার হোসেনের পুত্র কাজী নাজমুল হোসেন তাপসও মনোনয়নপ্রত্যাশী। শিশিরের পক্ষেও এলাকার নেতা-কর্মীদের একটি অংশ মাঠে নেমেছেন। জাসদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট শাহ জিকরুল আহমেদ খোকনও তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা কাজী মামুনুর রশীদও দলের প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) : এ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম এমপি। তিনি নিয়মিত এলাকায় জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে রয়েছে তার নিবিড় সম্পর্ক। কয়েক বছরে তিনি বাঞ্ছারামপুরে নজিরবিহীন উন্নয়ন করেছেন। বিএনপি থেকে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা রফিক শিকদার। নিয়মিত এলাকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তবে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি ডিআইজি (অব.) এম এ খালেকও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। অন্যদিকে জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেনও দলের প্রার্থী হতে পারেন।
সুএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন