ডেস্ক রিপোর্ট : বর্তমানে চিকুনগুনিয়ায় মারাত্মক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। অসংখ্য মানুষ ইতিমধ্যে চিকুনগুনিয়াতে ভুগছেন; অনেক মানুষ এখনো চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ চিকুনগুনিয়া জ্বরের ঝুঁকিতে বসবাস করছে। সব বয়সের সব স্তরের মানুষ প্রায় সমহারে এতে আক্রান্ত হন। এটি একটি মশাবাহিত রোগ। সাধারণত জ্বর, ব্যথা বিশেষত জয়েন্টের ব্যথা, ক্ষুদা-মন্দা ও বমি ভাব— চিকুনগুনিয়ার প্রধান লক্ষণসমূহ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। ৫-৭ দিনের মধ্যে জ্বর কমে যাচ্ছে। কিন্তু জয়েন্টের ব্যথা (বিশেষ করে পায়ের গোড়ালি) ও পা ফুলা থেকে যাচ্ছে পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ যাবৎ।
কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে চিকুনগুনিয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ জ্বর। কেননা, এ সময়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে, রক্তের গ্লুকোজ কমে যেতে পারে, চিকুনগুনিয়ার পরবর্তী শ্বাসনালির সংক্রমণ হতে পারে (নিউমোনিয়া)। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে। চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছেন তাদের মধ্যে ডায়াবেটিসের রোগীরা সবচেয়ে বড় দল। একইভাবে চিকুনগুনিয়া জ্বরে যাদের মারাত্মক পরিণতির স্বীকার হতে যাচ্ছে। সে দলেও ডায়াবেটিস রোগীরা সবচেয়ে আগানো। ঢাকাতে ইতিমধ্যে অনেক ডায়াবেটিসের রোগীর চিকুনগুনিয়া জ্বর ও ডায়াবেটিসের জটিলতা নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপণ্ন হচ্ছেন। অথবা হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছেন। ডায়াবেটিস রোগীর চিকুনগুনিয়া হলে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।
১। রক্তের গ্লুকোজ বেশি বেড়ে যাওয়া : যে কোনো রকম সংক্রমণ বা প্রদাহে রক্তের গ্লুকোজ বেড়ে যেতে পারে। যেমন- চিকুনগুনিয়া হতে পারে। যাদের টাইপ ১ ডায়াবেটিস আছে তাদের অবস্থা আরো মারাত্মক হতে পারে। এই ক্ষেত্রে রক্তের কিটোন বডি পেতে পারে। যা একটি মৃত্যু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা অনেকে ভাবেন, যেহেতু ঠিকমতো খেতে পারছেন না, তাই রক্তের গ্লুকোজ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু এই রকম জ্বরের কোনো বাস্তবভিত্তি নেই। উল্টোটাও হতে পারে।
২। রক্তের গ্লুকোজ কমে যাওয়া : ডায়াবেটিস রোগীর চিকুনগুনিয়া জ্বর হলে, যদি ঘন ঘন বমি হতে থাকে, তাহলে রক্তের গ্লুকোজ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, আবার কিছু কিছু ওষুধ ও এর জন্য দায়ী হতে পারে। সেজন্য রক্তের গ্লুকোজ মেপেই সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। তবে নিজ থেকে কোনো ওষুধ পরিবর্তন না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সামগ্রিকভাবে ডায়াবেটিস রোগী চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে, নিম্নলিখিত বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবেন—
অতি দ্রুত আপনার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।
পূর্ণ বিশ্রাম নেবেন (কমপক্ষে এক সপ্তাহ) প্যারাসিটামল ওষুধ গ্রহণ বাদে অন্য কোনো ওষুধ শুরু করবেন না বা ডায়াবেটিসের কোনো ওষুধ বন্ধ করবেন না। কোনো কোনো সময় সেবন করা উপকারি হতে পারে। দিনে ছয়বার বা তার চেয়ে বেশি বার রক্তের গ্লুকোজ মাপবেন। জল বা জলীয় খাদ্য গ্রহণ বাড়িয়ে দেবেন তবে তা যত কম ক্যালরি সমৃদ্ধ হয় তত ভালো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফলের রস পান করা সুবিধাজনক হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীর চিকুনগুনিয়া হলুে কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন : রক্তের গ্লুকোজ অনেক বেড়ে গেলে (১৬ মিলি মোল/লিটার), রক্তের গ্লুকোজ বাড়তে না পারলে। তাই এসব ক্ষত্রে আরও সচেতন হতে হবে।
ডা. শাহজাদা সেলিম, সহকারী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
সূত্র : বিডি প্রতিদিন