ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিখ্যাত গ্রে-হাউন্ড কুকুর বিলুপ্তির পথে
---
তৌহিদুর রহমান নিটল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইল উপজেলার গ্রে-হাউন্ড কুকুরের পরিচিতি রয়েছে উপমহাদেশ জুড়ে। দেশ-বিদেশ থেকে এখানে কুকুর কিনতে আসে অনেক মানুষ। রক্ষণাবেক্ষণ আর বাজারে খাদ্যের উর্ধ্বগতির কারণে এই বিখ্যাত প্রাণীটি অনেকটাই বিলুপ্তরি পথে।
প্রকৃতিগত ভাবে দেখতে এরা সাধারণ কুকুর থেকে কিছুটা আলাদা। মুখটা দেখতে অনেকটা শেয়ালের মতো আর লম্বা দুটো কান। সাদা, কালো, লালসহ বিভিন্ন রঙের এসব কুকুর একসময় ব্যবহার করা হতো শিকারের কাজে। শিয়াল, বনবিড়াল, বাঘডাস আর
চোর-ডাকাতদের কাছ থেকে মালিকের বাড়ি পাহারায় তাদের পারদর্শীতা অনেক বেশিই তাই এই গ্রে-হাউন্ডকে ভয় পায় সকলেই। সরাইলের এসব বিখ্যাত গ্রে-হাউন্ড কুকুরের দামটাও অনেক বেশি। একটা বাচ্চা কুকুর ২০-২৫ হাজার আর বড় কুকুরের দাম ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়।
একসময় এ অঞ্চলের বিভিন্ন বাড়িতে কেউ শখের বশে আবার কেউ আভিজাত্যের জন্য পালন করত এই বিখ্যাত কুকুর। বর্তমানে উপজেলার নোয়াগাঁও, শাহজাদাপুর ও দিডপুর এলাকায় কয়েকটি পরিবার এই কুকুর পালন ধরে রেখেছে।
সরেজমিনে যাওয়া হয় নোয়াগাঁও গ্রামের
অজিত লাল বাড়িতে তিনি জানান , টাইগার, মধু, পপি, কালী, লালী, টমি, কালাসহ বিভিন্ন নামে ডাকা হয় তাদের। জন্মের কিছুদিন পরই বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এ নাম দেওয়া হয় তাদের। বর্তমানে তার বাড়িতে ছোট-বড় মিলিয়ে ১২/১৫ টি কুকুর আছে। ৩ থেকে ৫ মাসের একটি বাচ্চা কুকুর গড়ে ২০-২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আর বড় ও সুশ্রী কুকুরের দাম উঠে ৬০-৬৫ হাজার টাকা ।
সরাইলের এই গ্রে-হাউন্ডের উৎপওি সমন্ধে কয়েকজন বলেন, এই কুকুর সরাইলে বহুকাল আগে এক দেওয়ান সাহেব হাতি নিয়ে সরাইল পরগনা থেকে কলকাতা যাচ্ছিলেন। পরে তিনি হাতির বিনিময়ে মালিকের কাছ থেকে কুকুরটি নিয়ে আসেন। আর শিয়ালের সাথে মিলনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে এই জাতের কুকুর। আবার অনেকে বলে থাকেন দেওয়ান সাহেবের একদিন জঙ্গলে শিকার করতে এই কুকুর নিয়ে গিয়েছিলেন। পরে মা কুকুরটি হারিয়ে গিয়েছিল। কিছুদিন পর সে আবার ফিরে আসে। তখন সে মা কুকুরটি বাঘের সাথে মিলনের ফলে শিকারি প্রকৃতির এই গ্রে হাউন্ড কুকুরের উৎপত্তি।
সরাইল উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা:মুজিবুর রহমান মানিক বলেন, দেশের ঐতিহ্যের সাথে এই গ্রে-হাউন্ড জড়িত। তাই এটিকে আবারও পুরোদমে রক্ষণা বেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু লিখে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।সরাইল গ্রে-হাউন্ড ধ্বংস হতে দেওয়া যাবেনা।