বৃহস্পতিবার, ১৫ই জুন, ২০১৭ ইং ১লা আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

ন্যায্য মূল্য মিলছে না: পোশাক প্রস্তুতকারকরা উদ্বেগে

AmaderBrahmanbaria.COM
জুন ১৩, ২০১৭
news-image

---

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কঠিন সময় পার করছেন বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুতকারকরা। পাশাপাশি রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের দিক থেকে কর্মপরিবেশ উন্নয়নের জন্য অসম চাপও রয়েছে। পোশাক প্রস্তুতকারকরা জানান, পশ্চিমা ক্রেতা, রিটেইলার ও ব্র্যান্ডগুলোর দাবির মুখে কারখানা সংস্কারের জন্য এ পর্যন্ত তারা ১০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছেন। তারপরও রিটেইলার ও ব্র্যান্ডগুলো পোশাকের দাম বাড়ায়নি।

ক্রেতারা এখনো আগের মতোই পোশাকের মূল্য কম দিচ্ছে এবং লাগামছাড়া মুনাফা অর্জন করছে। কোনো কোনো পণ্যে তার ছয়শ শতাংশেরও বেশি মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। জানা গেছে, তারা বাংলাদেশ থেকে একটি শার্ট ৩ থেকে ৫ ডলারে কিনে তা অনায়াসে ২৫ থেকে ৩০ ডলারে বিক্রি করছে। একই দৃশ্য দেখা যায় বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর রপ্তানি হওয়া উন্নতমানের মূল্য সংযোজিত গার্মেন্টস পণ্যের ক্ষেত্রেও যা মোট রপ্তানির ৩০ শতাংশ।

প্রস্তুতকারকরা বলেন, এমএনসির একটি উন্নত মানের মূল্য সংযোজিত শার্ট স্থানীয় প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে রিটেইলাররা ৮ থেকে ১২ ডলারে কিনেন এবং সেই শার্ট ১০০ ডলারে বিক্রি করেন। এমনকি কখনো কখনো ১৫০ ডলারেও বিক্রি করা হয়।

প্রস্তুতকারক ও অর্থনীতিবিদরা এ জন্য ত্রুটিপূর্ণ ও ভারসাম্যহীন আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যবস্থাকে দায়ী করেন।

অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘বর্তমান ব্যবসায়িক মডেলটি এমন যে, রপ্তানিকারকরা ৫ ডলারে একটি শার্ট উৎপাদনের জন্য শ্রমিকদের ওপর সর্বোচ্চ শক্তি (জবরদস্তি) প্রয়োগ করেন। তিনি বলেন, পোশাক প্রস্তুতকারকরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হন, তা সমাধানে বিষয়টির তদন্ত হওয়া দরকার।

অন্যদিকে ইউরোপীয় ব্র্যান্ডগুলোর দাবি, বাংলাদেশ বা অন্য সোর্সিং কান্ট্রি থেকে কেনা সব পোশাকই তারা নির্ধারিত উচ্চ মূল্যে বিক্রি করতে পারে না। তাদের ৬০ শতাংশ পণ্য ট্যাগ মূল্যে, বাকি ৪০ শতাংশের মধ্যে ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট মূল্যে এবং ২০ শতাংশ পণ্য স্টোরের ক্লিয়ারেন্স বা ডোনেটেড মূল্যে বিক্রি করতে হয়। ফলে ব্র্যান্ড ও স্টোর মালিকরা সবসময় যে মুনাফা করেন তা নয়।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু ব্যবসায়ীদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে বলেন, রিটেইলারদের ৭৫ শতাংশ পোশাক তালিকা মূল্যে এবং বাকিটা ডিসকাউন্ট মূল্যে বিক্রি করার টার্গেট আছে। এছাড়া কোম্পানিগুলো বছরে রাঘব-বোয়ালদের লাখ লাখ টাকা দেয়। অভ্যন্তরীণ পোশাক প্রস্তুতকারকদের মধ্যে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা পোশাকের কম মূল্যের জন্য দায়ী।

এর সমাপ্তি কবে? উৎপাদনকারীরা যতদিন পর্যন্ত এটাকে না বলবে, ততদিন পর্যন্ত পোশাকের মূল্যের এই করুণ অবস্থা চলতে থাকবে। এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুব উদ্দীন বলেন, উৎপাদনকারীরা তাদের প্রতিশ্রুত মূল্যে পোশাক সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুত থাকায় রিটেইলাররা কম মূল্যে পণ্য পাচ্ছে। পোশাকের উচ্চমূল্য পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের উচিত মৌলিক পণ্য উৎপাদন বাদ দিয়ে উন্নত মানের পণ্য উৎপাদন করা।

বিশ্লেষকরা বলেন, পোশাক রপ্তানি ক্রেতাদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো বাজার নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে। যদি উৎপাদনকারীদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া থাকে, তাহলে তারা যৌক্তিক এবং একটা নির্ধারিত মূল্যে পোশাক বিক্রি করতে পারবে। কিন্তু তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে তাদের মধ্যে সেই সম্পর্ক গড়ে উঠছে না।

আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে ব্র্যান্ডগুলোকে ন্যায়ভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য করার ব্যাপক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তা হচ্ছে না। কিছু ট্রেড ইউনিয়ন এবং এনজিও এশিয়ায় পোশাক শ্রমিকদের মজুরির একটা লেভেল নির্ধারণের জন্য কাজ করছে। আর যদি সেটা করা যায়, তাহলে উৎপাদনকারীরা পোশাকের উচ্চমূল্য পাবে।

এ জাতীয় আরও খবর