‘রোহিঙ্গা নির্মূল’ অস্বীকার করলেন সু চি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দেশটির রাষ্ট্রীয় পরামর্শদাতা ও নোবেলজয়ী অং সান সু চি। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, সেখানে কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
গত ছয় মাস ধরে চলা নির্যাতন, ধর্ষণ, সহিংসতার মুখে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে জীবন নিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এ সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার।
এ নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনার মধ্যে রয়েছে মিয়ানমার। তার মধ্যেই বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সু চির এ বক্তব্য এলো। যদিও এর আগে সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম চ্যানেল নিউজ এশিয়াকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ নোবেলজয়ী প্রায় একই প্রতিধ্বনি করেছিলেন।
বিবিসিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে নোবেলজয়ী সু চি রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী মুসলিম জনগোষ্ঠীর ‘স্বীকৃত সমস্যার’ কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, ‘জাতিগত নির্মূল’ একটি ‘অনেক কঠিন’ শব্দ।
এ ছাড়া সু চি বলেন, তাঁর রাষ্ট্র দেশে ফিরে আসা যেকোনো রোহিঙ্গাকে সাদরে স্বাগত জানাবে।
বিবিসির বিশেষ সংবাদদাতা ফারগেল কিয়ানের প্রশ্নের জবাবে সু চি বলেন, ‘আমি মনে করি না, এখানে জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়া চলছে। আমি মনে করি, প্রকৃত অবস্থা বোঝাতে জাতিগত নির্মূল শব্দটি একটি অত্যন্ত কঠিন।’
সু চি আরো বলেন, ‘এটা সত্যি যে প্রদেশটিতে কিছু সহিংসতা চলছে। সেখানে মুসলমানরাও মুসলমানদের হত্যা করছে। এ ছাড়া তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরোয়া করে না।’
মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান এই নেতা ব্যাখ্যা করে বলেন, জাতিগত নির্মূল শব্দটি বলে ফেললেই পুরো বিষয়টি বোঝানো যাবে না। এটা ওই অঞ্চলে ভিন্ন জাতিসত্তার বিভক্ত মানুষের লড়াই। আমরা ওই বিভক্ত মানুষকে এক করার চেষ্টা করছি।
গত অক্টোবরে মিয়ানমারের সেনাচৌকিতে হামলায় নয়জন নিহত হন। এরপর দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা রাজ্যে অভিযান শুরু করে।
এর পর থেকেই মিয়ানমারের সীমান্ত অঞ্চলে মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর সে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিনিয়ত হামলা চালাচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হচ্ছে। এতে বেশ প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। সেখানকার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল ধ্বংস করে দিচ্ছে, নারী-পুরুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, এমনকি অবিবাহিত নারীদের ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে এসব প্রতিবেদনে। এ নিয়ে জাতিসংঘসহ সারা বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সোচ্চার ভূমিকার মধ্যেই মিয়ানমারের বিজিবি রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুতের বিষয়টি স্বীকার করেছে।
এর মধ্যেই জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক কমিশন রাখাইনের রোহিঙ্গাদের অবস্থা সম্পর্কে তদন্ত করছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরুর পরই নয় সদস্যের এই আন্তর্জাতিক কমিশন গঠন করা হয়।
কমিশনে মিয়ানমারের ছয়জন এবং কফি আনান ছাড়া আরো দুজন বিদেশি প্রতিনিধি আছেন। তীব্র আন্তর্জাতিক সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমারের নেত্রী আং সান সু চি এই কমিশন গঠনে বাধ্য হয়েছিলেন।