ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মহিলা মহিলা আওয়ামীলীগের একতরফা সম্মেলন
আমিরজাদা চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের এক তরফা সম্মেলন নিয়ে বিরাজ করছে উত্তেজনা । সভানেত্রীর চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারন করা হয়েছে সম্মেলন। দলের সাধারন সম্পাদককে কেন্দ্র থেকে এবিষয়ে কোন চিঠি পর্যন্ত দেয়া হয়নি। তার সাথে কোন যোগাযোগও করা হয়নি। সেকারনে সম্মেলন উদ্দেশ্যেমূলক হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় জেলা মহিলা আওয়ামীলীগ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। মুখোমুখি দু-গ্রুপ। তবে জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী-সমর্থকসহ জেলার আওয়ামীলীগ সমর্থক নারী সমাজের নেতৃত্বদানকারী জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাতের নাম ব্যবহার করে সম্মেলন জমাতে পোষ্টার-নিমন্ত্রনপত্র করা হয়েছে। একপক্ষের প্রতারনামূলক এ কর্মকান্ডে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী মিনারা আলম একাই সম্মেলনের আয়োজক। তার সঙ্গে দলের আরো ৩ জন সদস্য রয়েছেন। এরমধ্যে সক্রিয় শুধু সভানেত্রীই। বাকী ৩ জনের ১ জন সরকারী চাকুরীজীবি,২ জন দলের অন্য ইউনিটে রয়েছেন। অবশ্য সম্মেলনের হাওয়ায় সবমিলিয়ে সক্রিয় এখন ৮/১০ জন । তাদের মধ্যে বিএনপি মনাও আছে ২/১জন । সম্মেলন দাবীদার এই নেত্রীদের বাইরে ৮ উপজেলা ও জেলার বেশীরভাগ নেত্রীরা। বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করেই ঘোষনা করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের তারিখ। এ তারিখের বিষয়টি কেন্দ্র থেকে সাধারন সম্পাদককে জানানো হয়নি। এ সম্মেলনে সায় নেই জেলা আওয়ামীলীগেরও। তবে সভানেত্রীর এক আত্বীয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও জেলা আওয়ামীলীগের আরেক নেতা এই সম্মেলনের পক্ষে সক্রিয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের বর্তমান কমিটির বয়স প্রায় ১৯ বছর। সম্মেলন হয়েছিলো ১৯৯৮ সালের ২৬ শে ফেব্রুয়ারী। সেসময় সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকসহ ৪৫ জনের নাম ঘোষনা করা হয়। এরমধ্যে সভানেত্রীর পরিবারের সদস্য আছেন কয়েকজন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তখন কমিটি ছিলো ৫১ সদস্য বিশিষ্ট। বাকী কয়েকজনের পদ পূরন হয়নি দেড় যুগ পেরিয়ে গেলেও। ৪৫ সদস্যের মধ্যে মারা গেছেন কয়েকজন। শারিরীক অসুস্থতাসহ নানা কারনে সক্রিয় নন আরো কয়েকজন। এমনি অবস্থায় সম্মেলনের তাগিদ জোরদার হয়। সর্বশেষ ৭ ই ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সম্মেলন করার তাগিদ দেন। অবশ্য জেলা মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রীরা জানিয়েছেন- তারা আরো আগেই বেশ কয়েকবার সম্মেলনের তারিখ চেয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্র সারা দেয়নি। এখন হুট করেই সভানেত্রী মিনারা আলমের কাছে একটি তারিখ দিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এই তারিখে সম্মেলন করতে এখন তিনি একাই তৎপর। অভিযোগ উঠেছে পরিবারের সদস্য আর অনুগত নিস্ক্রিয় লোকজনকে নিয়ে সভানেত্রী আগের মতোই আরেকটি নামসর্বস্ব কমিটি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাড়াহুড়ার এই সম্মেলনে।
তবে এমনিভাবে সম্মেলন না করার পক্ষে জেলা মহিলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক এডভোকেট তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাতের নেতৃত্বে জেলা,উপজেলা ও শহর মহিলা আওয়ামীলীগের নেত্রীরা ঐক্যবদ্ধ। তারা বলছেন-আমরা কেউই ওইদিনের সম্মেলনের ব্যাপারে জানিনা। সম্মেলনে আমরা অংশও নেবোনা। জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে ১৮ ই ফেব্রুয়ারী মহিলা আওয়ামীলীগের বৃহৎ অংশের এক সভায় সম্মেলনের তারিখ পেছানোর দাবী উঠেছে। বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির কাছে এব্যাপারে লিখিত আবেদনও দেয়া হয়েছে। ওই আবেদনে স্বাক্ষর করেন জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত, কসবা উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা শাহীন সুলতানা, বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য সৈয়দা নাখলু আক্তার, সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফয়জুন নাহার টুনি, নবীনগর উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক ও জেলা পরিষদের সদস্য অধ্যাপিকা নুরুন্নাহার বেগম, আশুগঞ্জ উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহেনা বেগম, সাধারণ সম্পাদক জোৎস্না বেগম, আখাউড়া উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পিয়ারা বেগম পিওনা, সদর উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ারা বেগম, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা আক্তার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর কাউন্সিলার শামীমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক নাজমুন নাহার। কেন্দ্রে পাঠানো আবেদনপত্রে সম্মেলনের ঘোষিত তারিখ বদল করে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চের মধ্যে যে কোন সুবিধাজনক তারিখ নির্ধারন করার দাবি জানানো হয়েছে। জেলা ও উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের এই নেত্রীরা বলছেন – জেলা ইউনিটের সম্মেলনকে সামনে রেখে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও উপজেলার সম্মেলন সম্পন্ন করা হয়েছে। ১৯ বছরে অনেক শিক্ষিত নারী দলে এসেছেন। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদে যোগ্য নারী প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। তাদেরকে নিয়ে ব্যাপক আয়োজনে একটি সম্মেলন আকাঙ্খার মধ্যে হঠাৎ জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের এই তারিখটি ঘোষনা করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় যেখানে অর্ধেকের বেশী নারী ভোটার সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে ওই ক’জন নেত্রীর কথামতো একটি পকেট কমিটি করতে কেন তোড়জোর সেটিই আমাদের প্রশ্ন। ২৬ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্র থেকে জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারন করার বিষয়টি আমরা লোকমুখেই শুনেছি। সম্মেলন নিয়ে তাড়াহুড়া কোন কারনে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলা-উপজেলার এই নেত্রীরা। তাদের প্রশ্ন প্রস্তুতি ছাড়া এতো দ্রুত সম্মেলন কেন ?
এ ব্যাপারে জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত বলেন, কেন্দ্র থেকে সম্মেলনের বিষয়ে আমি কোন চিঠি পাইনি। একটি সম্মেলন হবে জেলা ও উপজেলার নেত্রীদের কাউকে তারা জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি। সম্মেলন নিয়ে মহিলা আওয়ামীলীগের কোন সভাও করা হয়নি। তাই প্রস্তুতি নিয়ে জাকঝমকপূর্ন সম্মেলন করার জন্য সম্মেলনের তারিখ পেছাতে আমরা বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির কাছে লিখিত আবেদন করেছি। আমি সম্মেলনের বিষয়ে কোন কিছু না জানলেও আমার নাম ব্যবহার করে তারা পোষ্টার-নিমন্ত্রনপত্রসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমি এর প্রতিবাদ জানাই।
এ ব্যাপারে জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মিনারা আলম সাংবাদিকদের বলেন, নির্ধারিত তারিখেই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্র থেকে তাকে চিঠি দেয়া হয়েছে জানিয়ে বলেন সম্মেলন সফলে কাজ করছি।
এদিকে সম্মেলনের বিষয়ে অবগত নয় জেলা আওয়ামীলীগ। বিশেষ করে জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সদর সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ওমরা করতে সৌদি আরবে থাকা অবস্থায় এই সম্মেলনের তারিখটি করা হয়। জেলা আওয়ামীলীগকে পুরোপুরি পাশ কাটিয়ে এই সম্মেলনের তারিখ নিয়ে বিশেষ উদ্দেশ্যের অভিযোগ করছেন জেলা আওয়ামীলীগের নেতারা। দলের দায়িত্বশীল সুত্র জানিয়েছে- সম্মেলনের তারিখ ম্যানেজসহ সম্মেলন সফলে তৎপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা। যিনি জেলা মহিলা আওয়ামীলীগ সভানেত্রীর আত্বীয়। মিনারা আলম ও সাবেক ওই ছাত্রনেতা বিভিন্ন উপজেলার নেত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কাউকে কাউকে ভয়ভীতিও দেখানো হচ্ছে। সম্মেলনে না আসলে উপজেলা কমিটি বাতিল করারও হুমকী দেয়া হচ্ছে। জেলা আওয়ামীলীগের আরেক সিনিয়র নেতাও এই সম্মেলন নিয়ে সরব। হালে জেলা আওয়ামীলীগের এই নেতা দলের সভাপতির বিরুদ্ধে গ্রুপিং করছেন।
এব্যাপারে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন- জেলা ও বেশীর ভাগ উপজেলা ঘোষিত তারিখে সম্মেলন চাচ্ছেনা। তারা কেন্দ্রে সম্মেলন পেছানোর আবেদন করেছে। যেহেতু বেশীরভাগই এই তারিখে সম্মেলনের পক্ষে নয় সেকারনে জেলা আওয়ামীলীগও তাতে সুপারিশ করেছে। তিনি আরো বলেন- সাধারন সম্পাদক হচ্ছেন সংগঠনের প্রধান নির্বাহী। সেখানে জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী নিজেই কিছু জানেননা। তাকে কেন্দ্র থেকে কোন চিঠি দেয়া হয়নি। তার সঙ্গে লিয়াজো বা কোন রকম যোগাযোগ করা হয়নি। তাহলে সম্মেলনটা হয় কিভাবে।