g সরাইলে ড্রেজার দিয়ে পুকুর ভরাট : টানটান উত্তেজনা | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বৃহস্পতিবার, ২৭শে জুলাই, ২০১৭ ইং ১২ই শ্রাবণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

সরাইলে ড্রেজার দিয়ে পুকুর ভরাট : টানটান উত্তেজনা

AmaderBrahmanbaria.COM
ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭

---

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি : সরাইলে মামলার রায় ও প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে জোর করেই চলছে পুকুর ভরাটের কাজ। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই ড্রেজার দিয়ে মেঘনার বালু তুলে আনছেন হাবিব মিয়া। ভরাটের পর চার পাড়ের মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যহত হবে। সেই সাথে ধ্বংস হয়ে যাবে ৩০ লক্ষাধিক টাকার মাছ। আর এজন্যই পুকুরে হাবিবের নিজের কোন অংশ না থাকলেও কৌশলে জবর দখলের এ অপচেষ্টার বিরুদ্ধে বারবার রুখে দাঁড়াচ্ছেন প্রকৃত মালিকরা। হাবিবের মিথ্যা মামলার যাতাকলে দিশেহারা এখন অংশীদাররা। এ ঘটনায় পুরো গ্রামে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘাতের শঙ্কায় সন্ত্রস্থ্য এখন পানিশ্বর ইউনিয়নের দেওবাড়িয়া গ্রামবাসী। আর সর্বক্ষণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন প্রকৃত মালিকরা। ইউপি চেয়ারম্যান বলছেন ড্রেজারটিই সকল সমস্যার হোতা। সরজমিনে ঘুরে একাধিক জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা যায়, ৩ শতাধিক বছরের পুরাতন শাখাইতি মৌজার দেওবাড়িয়া গ্রামের সাবেক ৩৮০ ও হালে ৯৭৪ দাগের ২.১৬ একর আয়তনের পুকুরটি বংশপরাক্রমে দীর্ঘদিন ধরে ভোগ-দখলে করছেন হানিফ মিয়া, মুসলিম মিয়াসহ গ্রামের শতাধিক পরিবার। একই গ্রামের হাবিবুর রহমান হঠাৎ একটি বন্টননামা দলিল দেখিয়ে পুকুরে তার অংশ রয়েছে বলে দাবি করেন।

২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর দলিলটি প্রকাশ পেলে এ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয় দু’পক্ষের মাঝে। ১৯৮১ সালের দিকে করা ওই দলিলটি বিগত ৩০/৩৫ বছর ধরে গোপন রাখা হয়। হাবিবুরের এই বন্টননামা দলিল বাতিলের জন্যে ২০১৪ সালে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় বলা হয়, পুকুরের মালিকানার কম-বেশি অংশ নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে স্থানীয় বাসিন্দা কফিল উদ্দিন ও আবদুল খালেক কৌশলে একটি বন্টননামা দলিল রেজিস্ট্রি করে রাখেন। কিন্তু এ দলিলটি পক্ষগণ কিংবা ওয়ারিশদের কখনো দেখানো হয়নি। ওই মামলা দায়েরের পর হাবিবুর রহমান পুকুরের ওয়ারিশ হানিফ মিয়া ও মুসলিম মিয়াসহ অন্যান্য অংশীদারদের বিরুদ্ধে পরপর পাঁচটি মামলা দায়ের করেন। পুকুরের অংশীদাররাও হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। দুটি মামলাই আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এ অবস্থায় গত দেড় মাস আগে হাবিবুর রহমান পুকুর থেকে ১ কিলোমিটার দূরে মেঘনা নদীতে ড্রেজার বসিয়ে পুকুরে বালু ফেলে ভরাট করা শুরু করেন।

এতে চরমভাবে ক্ষুদ্ধ হন পুকুরের অংশীদাররা। ৩০ লক্ষাধিক টাকার মাছ রেখে অবৈধভাবে পুকুর ভরাটে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন তারা। সমগ্র গ্রামেই ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। উপজেলা প্রশাসন উভয় পক্ষকে ডেকে এনে ড্রেজার দিয়ে পুকুর ভরাটের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু হাবিবুর রহমান প্রশাসনের নির্দেশ মানছেন না। গতকাল বুধবার পর্যন্ত মেঘনায় বহাল তবিয়তে রয়েছে ড্রেজার। আর বাড়িঘরের উপর দিয়ে টানা জে আই পাইপ গুলো ও আছে আগের মতই। সুযোগ বুঝে ড্রেজার চালানোর চেষ্টা করেন হাবিব। আর সাথে সাথে প্রতিপক্ষের লোকজন প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষের শঙ্কায় ভুগছেন গোটা গ্রামবাসী। মুসলিম মিয়া, হানিফ মিয়াসহ পুকুরের প্রকৃত মালিকরা অভিযোগ করে বলেন, জাল দলিলে মালিকানা দাবী করার পর অবৈধভাবে পুকুর ভরাটে বাঁধা দেওয়ায় একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করছেন হাবিবুর রহমান। প্রভাবশালী টাউট প্রকৃতির কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি ভাগ নেওয়ার শর্তে হাবিবকে সহায়তা করছেন। ঢাকার রমনা থানায় দায়ের করা অপহরণ মামলায় নিরপরাধ মুসলিম মিয়াকে ২ মাস জেল খাটতে হয়েছে।

আমাদের দায়ের করা দেওয়ানী মামলা ২০৮/১৪ ও চলমান আছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশও মানছেন না হাবিব। নতুন কোন মামলায় আসামী হওয়ার আতঙ্কে দিন কাটছে আমাদের। ড্রেজারের চালক রঞ্জন দাস (৪৫) বলেন, এক মাস ধরে এখানে আছি। দৈনিক ১ হাজার টাকা ভাড়ায় পুকুর ভরাটের জন্য আমাদেরকে ইদন মিয়া এনেছেন। মাটি কাটা হউক আর না হউক টাকা ১ হাজার দিতেই হবে। পানিশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ দীন ইসলাম বলেন, এখানে মূল সদস্যা হচ্ছে ড্রেজার। এই ড্রেজারের কারনে গ্রামে খুন খারাবি হবে। পুকুরের অংশিদারিত্ব নিয়ে দুই পক্ষেরই আদালতে মামলা আছে। রায় আসলেই সব খোলাসা হয়ে যাবে। সংঘাত এড়াতে আমি এবং ইউএনও সাহেব উভয় পক্ষকে সংযত থাকার পরামর্শ দিয়ে ড্রেজার সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু ড্রেজারতো সরছে না। হাবিবুর রহমান বলেন, পুকুরে আমার ২৯ শতাংশ জায়গা ভরাট করতে গেলে তারা বাঁধা দেয়। অংশীদারদের সাথে কথা না বলা ও একের পর এক মিথ্যা মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার অংশ ভরাট করতে কথা বলব কেন? আর মামলা তারা দিয়েছে আমিও দিয়েছি। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা নাহিদা হাবিবা বলেন, এ বিষয়ে দ্রুতই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ জাতীয় আরও খবর