রাঘব বোয়ালরা গিলে খাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পদ!
নিউজ ডেস্ক : দেশের প্রতিটি জেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণে বরাদ্দকৃত অর্থ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট করে নিচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সরকারি সংস্থা গণপূর্ত অধিদফতরের (পিডব্লিউডি) কয়েক রাঘব বোয়ালরা। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না করে কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যয় বাড়িয়ে বাড়তি অর্থ বরাদ্দ হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে ত্রুটিপূর্ণ কাজ ও নিন্মমানের নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহার তো রয়েছেই। মুক্তিযোদ্ধারা এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটি ও মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন দফায় দফায়।
দুর্নীতির বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ায় বেশ ক’টি জেলা ও উপজেলা কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ মন্ত্রণালয় থেকে বন্ধ করে দেয়া হলেও অর্থ হাতিয়ে নেয়া রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১৩তম বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এসব বিষয় জানা গেছে। কমিটি ত্রুটিপূর্ণ কাজ ও অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে নির্মাণসামগ্রী পরীক্ষা ও নির্মাণ কাজ তদারকির নির্দেশনা দিয়েছে।
কমিটির সদস্য সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি কামরুল লায়লা জলি এ বিষয়ে বলেন, মাগুরা জেলার সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ত্রুটিপূর্ণ কাজের বিষয়টি ২ বছর ধরে কমিটিতে উত্থাপন করে আসছি। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তাস্তর ছাড়াই এখানে মুক্তিযোদ্ধারা উঠে পড়েছেন। সেখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায়-দায়িত্ব কে নেবে? ত্রুটিপূর্ণ ও অনিয়ম কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরীক্ষা করারও দাবি করেন তিনি।
কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আফছারুল আমিন বলেন, গত বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছিলেন, এক মাসের মধ্যে মাগুরা জেলা সদরের মুক্তিযোদ্ধা কপ্লেক্সের ব্যাপারে বুয়েট একটি প্রত্যয়নপত্র দেবে। কিন্তু আজও সে প্রত্যয়নপত্র পাওয়া যায়নি। বুয়েটের বিশেষঞ্জদের সুনির্দিষ্ট মতামত ব্যতীত সে ভবন ব্যবহার করা সমীচীন হবে না। একইভাবে সারাদেশে নির্মিত ভবনগুলোর কাজও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
কমিটির বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়, দেশের প্রতিটি জেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ২০১০ সালের জুলাই মাসে প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। কয়েক দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পরও এখন পর্যন্ত সব জেলা ও উপজেলার কাজ শেষ হয়নি। এ পর্যন্ত ৪৩টি জেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ শেষ হলেও এসব কাজ ত্রুটিপূর্ণ রয়েছে। ৮ জেলায় নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। ১৫টি জেলায় নির্মাণকাজ এখনো শুরুই হয়নি।
অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলা হয়, লক্ষ্মীপুর, গাজীপুর, মাগুরা, সিলেট বিয়ানীবাজার. মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলাসহ সারাদেশে জেলাগুলোতে কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব কারণে কয়েকটি জেলায় ভবন নির্মাণ কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলাগুলোর মধ্যে সুনামগঞ্জের শাল্লা, সিলেটের বিয়ানীবাজার, চাঁদপুরের কচুয়া, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছাসহ অনেক স্থানেই কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে বলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেছেন। লক্ষ্মীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন এক কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণে যথাযথ নিয়ম মানা হয়নি বলে জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার আনোয়ারুল হক, ডেপুটি কমান্ডার কাজল কান্তি দাস ও নুরুজ্জামান মাস্টার অভিযোগ করেছেন।
মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণে অনিয়মের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকও। প্রতিবেদনে তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি জেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ২০১০ সালের জুলাই মাসে প্রকল্প নিয়েছে সরকার। কয়েক দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পর ৪৩ জেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। তিনি বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে কয়েকটি জেলায় নির্মাণকাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। পিডব্লিউডিকেই এ ব্যাপারে দায়িত্ব নিতে হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন. পিডব্লিউডি এ ভবন নির্মাণ করেছে এবং তারাই এর ডিজাইন করেছে।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মাহমুদ রেজা খান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ দেখতে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল গিয়েছিল। তারা পরীক্ষা করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পদ নিয়ে কেউ অনিয়ম-দুর্নীতি করলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি।-মানবকণ্ঠ