মধ্যরাতেও অবরুদ্ধ রুয়েট উপাচার্য
---
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) ন্যূনতম ‘৩৩ ক্রেডিট’ পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন ২০১৪ ও ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুর দুইটা থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ২টা) তারা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে তার কক্ষের সামনে অবস্থান করছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকালে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হওয়ার পর একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। এরপর সিরিঞ্জ ব্যবহার করে নিজেদের শরীর থেকে রক্ত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের প্রবেশ পথে ঢেলে সেখানে অবস্থান নেন তারা। পরে দুপুর ২টার দিকে প্রশাসন ভবনের দ্বিতীয় তলার বারান্দায় উপাচার্যের কক্ষের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে দাবির বিষয়ে আলোচনায় বসতে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানায় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির বিষয়ে অনড়।
অন্যদিকে, এ বিষয়ে শনিবার বিকেলে জরুরি একাডেমিক সভা ডাকে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেখানে ৩৩ ক্রেডিট বাতিলের সিদ্ধান্ত দেয়নি একাডেমিক কাউন্সিল।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ২৮ জানুয়ারি থেকে আমরা আন্দোলন করে আসছি। আমাদের আন্দোলন দমাতে একটি হলের শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরেও আমরা দাবি আদায়ে আন্দোলনে নেমেছি। বিক্ষোভ মিছিল, রক্ত ঢালাসহ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। বর্তমানে উপাচার্যের কক্ষের সামনে অবস্থান করছি। আমাদের দাবির পক্ষে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত , আমরা আমাদের অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করবো না।
রুয়েট সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হবার ক্ষেত্রে দুই সেমিস্টারে বাধ্যতামূলক ৪০ ক্রেডিটের মধ্যে ন্যূনতম ৩৩ ক্রেডিট অর্জন করতে হয়। অন্যথায়, তাদের পুনরায় সেই বর্ষেই থাকতে হবে। এর আগে নিয়ম ছিল, কোনও শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অকৃতকার্য বা অনুপস্থিতির কারণে ন্যূনতম ক্রেডিট অর্জন না করলেও পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হতে পারতো। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে তাকে পরীক্ষা দিয়ে ওই ক্রেডিট অর্জন করতে হতো। তবে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে এ নিয়মে পরিবর্তন আনা হয়।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. জালালউদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষকরা এখনও অবরুদ্ধ আছেন। রবিবার বেলা ১২টায় জরুরি সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে শিক্ষার্থীদের জানানো হলেও তারা অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেনি। তারা এখনও সেখানে অবস্থান করছে।’
রুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক কামরুজ্জামান সরকার বলেন, ‘আমরা এখনও অবরুদ্ধ আছি।’ এরপরেই তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে রাতে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল আলম বেগ ফোন রিসিভ করেননি। তবে শনিবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ‘আজ বিকেলে ডাকা মিটিং-এ একাডেমিক কাউন্সিল ৩৩ ক্রেডিট বাতিলের সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই আমরা ৩৩ ক্রেডিট বাতিল করছি না।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা তাদের বারবার আলোচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের কোনও কথা না শুনে আমার কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট একই দাবিতে রুয়েটের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে প্রশাসন ভবনের সামনে আন্দোলন করেছিলেন রুয়েটের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। টানা দুই দিন আন্দোলনের পর ১২ আগস্ট রাতে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের সকল ক্লাশ-পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে প্রশাসনের অনড় অবস্থানের কারণে তখন শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে আসেন। দেড় বছর পর চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি থেকে একই দাবিতে ক্লাস বর্জনসহ আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। টানা চারদিন আন্দোলনের পর ৩১ জানুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। পরে ২ জানুয়ারি সকাল ১০টার মধ্যে টিনসেড হলে অবস্থানরত আন্দোলনকারী ১৪ ও ১৫ সিরিজের শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা হল ছাড়লেও শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে অংশ নেন।