সরকারি চাকরিজীবীদের ঋণ সুবিধা বাড়ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারি যে কোন চাকরিজীবী এখন থেকে চাকরিরত অবস্থায় মারা গেলে অথবা অক্ষম হয়ে অবসর গ্রহণ করলে তার কাছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঋণের আসল ও সুদ বা দ-সুদসহ অর্থ মওকুফ করা হবে।
সরকার এ বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। এই নীতিমালার আলোকে আসল ও সুদ মওকুফের বিষয়ে সুপারিশ করার জন্য অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট-১), অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও সমন্বয়) মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের একজন প্রতিনিধি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি, যুগ্ম-সচিব (বাজেট-১), সরকারি কর্মচারি কল্যাণ বোর্ডের একজন প্রতিনিধি। অর্থ বিভাগের একজন উপ-সচিব বা সিনিয়র সহকারী সচিব এই কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। এই কমিটি আসল, সুদ বা দ-সুদ মওকুফের সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীর গ্র্যাচুইটি, বেতনের পেনশনযোগ্য অংশ (শেষ বেতনের ৫০ ভাগ) ইত্যাদি বিবেচনা করা হবে।
এই নীতিমালায় অক্ষম বলতে সম্পূর্ণ মানসিক প্রতিবন্ধী বা পঙ্গু হয়ে অবসর গ্রহণ করাকে বোঝাবে।
নীতিমালা সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এই নীতিমালা সরকারি কর্মকর্তাদের গৃহ নির্মাণ, গৃহ মেরামত, মোটরকার ও মোটরসাইকেল এবং কম্পিউটার ঋণের বেলায় প্রযোজ্য হবে। এসব ক্ষেত্রে নেওয়া ঋণের অপরিশোধিত আসল ও সুদ বা দ-সুদ মওকুফ করা হবে। এর আগে এ ধরনের ঋণের অর্থ চাকরিজীবীদের পাওনা থেকে অথবা উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে আদায় করা হতো। তবে প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম ও গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালায় নেওয়া ঋণ এ নীতিমালার আওতায় বিবেচিত হবে না।
জানা গেছে, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরতদের জন্য এসব খাতে একেক ধরনের ঋণ সুবিধা রয়েছে। চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর বিভিন্ন দপ্তরের কর্মীরা গৃহ নির্মাণ বাবদ ৫৫ লাখ থেকে ৮৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেয়ে থাকেন। মোটরকার বাবদ ৪৫ লাখ থেকে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত এবং মোটরসাইকেল বাবদ দেড় লাখ টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত এবং কম্পিউটার কেনা বাবদ ৫০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেয়ে থাকেন।
এদিকে গৃহঋণ সীমা বাড়ানোর চিন্তা করছে সরকার। অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলে ৫ শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা গৃহনির্মাণ ঋণ পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। ইতোমধ্যে এসব সুবিধা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে ফ্ল্যাট নির্মাণের ক্ষেত্রে দেয়া হবে বিশেষ রেয়াত সুবিধা। এছাড়া নতুন এ বেতন স্কেলে একজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী ৬০ থেকে ৮০ মাসের বেতনের সমান গৃহনির্মাণ ঋণ পাবেন। সেই হিসেবে বিভিন্ন গ্রেড অনুযায়ী ঋণের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারিত হবে। এতে দেখা যায়, সর্বনিম্ন গ্রেডের (গ্রেড-২০) একজন কর্মচারী সর্বোচ্চ ১২ লাখ টাকা এবং গ্রেড-১-এর একজন কর্মকর্তা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এছাড়া ২০ জনের একটি গ্রুপ করে জমি কেনার জন্যও ঋণ দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গৃহনির্মাণ ঋণ যাতে অন্য খাতে ব্যবহার না হয় সেজন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এই নীতিমালা প্রণয়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। এ ব্যাপারে সম্প্রতি একটি প্রস্তাব গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে গৃহনির্মাণ ঋণের ব্যাখ্যায় পে-স্কেলে উল্লেখ করা হয়, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ১৫ লাখ হলেও এর মধ্যে আবাসন সুবিধা পাচ্ছে মাত্র ১০ থেকে ১২ ভাগ। এছাড়া স্থান ভেদে বাসা ভাড়ার হারের তারতম্য রয়েছে, যে কারণে চাকরিজীবীদের একটি বড় অংশকে সরকারি আবাসিক সুবিধা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এছাড়া দেখা গেছে সর্বোচ্চ শ্রেণি থেকে সর্বনিম্ন শ্রেণি পর্যন্ত সব স্তরের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা খুব কম দেওয়া হচ্ছে। এসব দিক বিবেচনা করে স্বল্প সুদে গৃহনির্মাণ ঋণ চালু ও ফ্ল্যাট নির্মাণে বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রিপরিষদ সভায় নতুন বেতন স্কেল অনুমোদন দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে গৃহনির্মাণ ঋণ দেয়ার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
তবে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা এ সুযোগের আওতায় থাকছেন না বলে জানা গেছে। গৃহঋণ সংক্রান্ত এক বৈঠকে বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে বলা হয়, এমপিওভুক্তদের এ সুবিধায় আনা হলে সরকারের আর্থিক সংশ্লেষন বেড়ে যাবে। বৈঠকে বলা হয় এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের প্রস্তাবিত গৃহ ঋণ সুবিধা দেয়ার কোন সুযোগ নেই। শুধু বর্তমানে গৃহ নির্মাণ ঋণ সুবিধার আওতায় যে সব সরকারি চাকরিজীবীর ঋণ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে কেবল তারাই এই সুবিধার আওতায় আসবেন।