আমরা ফেরেস্তা নই; ব্যর্থতা থাকবেই : কাদের
নিজস্ব প্রতিবেদক : উন্নয়নের দিক থেকে আওয়ামী লীগ সরকার অন্য যে কোনো সরকারের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতা রয়ে গেছে স্বীকার করেছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি একে জীবনের অংশ হিসেবেই দেখছেন। বলেছেন, সরকার পরিচালনার দায়িত্বে আছেন সাধারণ মানুষই। আর মানুষ হিসেবে সাফল্যের পাশাপাশি কিছু ব্যর্থতা থাকবেই।
বর্তমান সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রাঙ্গণে শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণের সময় এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জন এবং সহিংস আন্দোলনের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি শপথ নেয় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। আজ এই সরকারের তিন বছর পূরণ হলো।
অবশ্য দলটি ক্ষমতায় আছে টানা আট বছর ধরেই। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ভোটে জয়ের পর ২০০৯ সালের ৮ জানুয়ারি ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এই দিক থেকে ধরলে সরকারের মেয়াদ আট বছর। বাংলাদেশে ভোটে নির্বাচিত কোনো সরকার এর আগে কখনও টানা এত সময় ক্ষমতায় থাকতে পারেনি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়নের পরিকল্পনা হাতে নেয়। আট বছরে এসব পরিকল্পনার অনেকগুলোই বাস্তবায়ন হয়েছে। বেশ কিছু কাজ বাস্তবায়নের পথে। এই সরকারের আমলে পাঁচ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উঠে এসেছে। নিম্নআয়ের দেশের তালিকা থেকেও বাংলাদেশ বের হয়ে এসেছে বর্তমান সরকারের মেয়াদেই। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বলে আশা করছে সরকার।
তবে অনেক অর্জন থাকলেও বেশ কিছু ব্যর্থতাও রয়েছে সরকারের। বিশেষ করে গণপরিবহন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে অনেকটাই হ য ব র ল অবস্থা বিরাজ করছে। সরকারের চেষ্টা থাকলেও জনভোগান্তি কমাতে প্রত্যাশিত সাফল্য আসেনি বলেই মনে করেন সমালোচকরা বিদ্যুৎ উন্নয়নের দিক থেকেও সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাগুলো আটকে আছে দীর্ঘসূত্রতায়।
এসব ব্যর্থতাতে ওবায়দুল কাদের দেখছেন স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাপ্তি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। আমাদের আগের ২৬ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে তার চেয়ে গত তিন বছরে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। এটা শেখ হাসিনা সরকারের অভাবনীয় সাফল্য। তবে আমরাও তো মানুষ, ফেরেস্তা নই; তাই ব্যর্থতা তো থাকবেই।’
ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকার ভবিষ্যতে এসব বিষয়ে সফল হওয়ার চেষ্টা করবে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
এ সময় বিএনপির আন্দোলনের হুমকি নিয়েও কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। বিশেষ করে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কেড়ে নেয়ার বিষয়ে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যকে রূপকথার রঙিন খোয়াব হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।
গত ৭ নভেম্বর এবং ৭ জানুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়েও পায়নি বিএনপি। বুধবার রাজধানীতে এম মানববন্ধনে রিজভী বলেন, ‘আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার জন্য পুলিশের কাছে বারবার আবেদন করেছি, কিন্তু আমাদেরকে দেয়া হয়নি। সেখানে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে এরশাদের মতো রাজাকারদের। তাই ভবিষ্যতে সমাবেশ করার জন্য বিএনপি পুলিশের অনুমতির অপেক্ষা করবে না, কেড়ে নেয়া হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।’
রিজভীর এমন ঘোষণার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের, ‘তিন বছরে যারা আন্দোলনে থাকতে পারেনি, তাদের মুখে এসব কথা রূপকথার রাজ্যের রঙিন খোয়াবের মতো। এসব কথা বলে কোনো লাভ নেই।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এ কর্মসূচির আয়োজন করে। আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সারাদেশে দলীয় নেতাকর্মীদের গরিব মানুষের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণের আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।