মাহবুব খান বাবুল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে : ছিল না চিকিৎসক। ছিল না ঔষধ। অফিস সময়ে তালা ঝুলত সরাইলের শাহজাদাপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। চিকিৎসার আশায় এসে আশাহত হয়ে ফিরে যেত রোগীরা। পরে ওই কেন্দ্রের অব্যবস্থাপনা অনিয়ম ও দূর্নীতির উপর পরপর ২টি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া.কম অনলাইন পত্রিকায়। নজর পড়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের। ফার্মাসিষ্ট সুধাংশোকে প্রথমে শোকজ ও পরে বদলি করে দেয়া হয়। সবশেষে দীর্ঘদিন পর ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৩ জন মেডিকেল অফিসার পেল শাহজাদাপুরবাসী। এখন নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে গ্রামবাসী। দরিদ্র অসহ্য়া রোগীরাও নিয়মিত আসছে হাসপাতালে। ভূক্তভোগী স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক ছিল না শাহজাদাপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। এমএলএসএস রফিক ও ফার্মাসিষ্ট সুধাংশোর দায়িত্বেই ছিল কেন্দ্রটি। রফিক সব সময় ঘুরে ফিরে সময় কাটাতো। রাতে বিক্রি করতো ঔষধ। আর সুধাংশো আসত মাসে ২/১ বার। পেছনের হাজিরায় স্বাক্ষর ও রেজিষ্ট্রারে বড় তালিকা করে সুরো সপ্তাহের সরকারি ঔষধ চুরি করে নেয়াই ছিল তার মূল কাজ। অফিসের চেয়ার টেবিলে ছিল ধূলা বালির স্তুপ। রোগীরা এসে ঘুরে ফিরে সেবা বঞ্চিত হয়ে ফিরে যেত বাড়িতে। সরজমিন অনুসন্ধানে ওই কেন্দ্রের অব্যবস্থা দূর্নীতির উপর গত ১৭ নভেম্বর আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া.কম অনলাইন ‘শাহজাদাপুরে চেয়ার টেবিলে ধূলার স্তুপ’ শিরোনোমে একটি বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
দ্রুত ওই কেন্দ্রে ছুটে যান ইউএইচও। তিনি সেখানে পাননি সুধাংশোকে। মুঠোফোনে কর্তৃপক্ষকে মিথ্যা তথ্য দেয় সে। ১৬ নভেম্বর সকাল ১০টায় হাসপাতালে রোগীদের বিশাল লাইন। প্রধান ফটকে ঝুলছে তালা। ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষার পর রোগীরা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়। বিষয়টি ইউএইচও’কে জানান একজন জনপ্রতিনিধি। আবারও শাহজাদাপুরে ছুটে যান ইউএইচও। হাসপাতালে বসে সুধাংশোর মুঠোফোনে ফোন দেন ইউএইচও। তৃতীয় বার ফোনটি রিসিভ করে সুধাংশোর স্ত্রী বলেন তিনি তো হাসপাতালেই আছেন। ওইদিনই সুধাংশোকে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কারন জানতে চেয়ে শোকজ করেন। বিশেষ গুরুত্ব দেন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি সুধাংশোকে তার কৃত অপরাধের জন্য আখাউড়ায় বদলি করা হয়েছে। সেই সাথে শাহাজাদাপুরবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের নির্দেশক্রমে শাহজাদাপুরে ৩ জন চিকিৎসক দেয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা হলেন- ডাঃ কাজী শাহরিন বিন আজহার, ডাঃ মোঃ এনামুল হক ও ডাঃ আনাস ইবনে মালেক। দীর্ঘদিন পর চিকিৎসক পেয়ে দারুন খুশি সেখানকার চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত লোকজন। তাদের চোখে মুখে এখন আশার আলো। সন্তোষ্ট সেখানকার জনপ্রতিনিধিরাও।
তারা সকলেই আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া.কমকে জানাচ্ছেন সাধুবাদ। আর দোয়া করছেন ইউএইচও’র জন্য। ইউপি সদস্য মোঃ আজহার ও চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, হাসপাতাল থাকার পরও এখানকার জনগনের চিকিৎসার কষ্ট আমাদেরকে অনেক ভাবিয়েছে। মনে পীড়া দিয়েছে। ডাক্তার যেন সোনার হরিণ। উপজেলার সভায় অনেক চিৎকার করেছি। সুরাহা পায়নি। অবশেষে আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া.কমের প্রতিবেদনের পর ফাঁকিবাজ কর্মচারিকে বদলি করে এখানে ৩ জন ডাক্তার দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আমরাআমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া.কমের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। সেই সাথে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ হাসিনা আক্তার বেগম সুধাংশোকে বদলি করে দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, জেলা সি এস অফিসের নির্দেশে ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৩ জন চিকিৎসক দেয়া হয়েছে। তারা প্রত্যেকে সপ্তাহে ২ দিন করে মোট ৬ দিন নিয়মিত সেখানে রোগী দেখবে। গত শনিবার থেকে তারা সেখানে যাচ্ছেন।