আওয়ামী লীগের ভোট বাড়বে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলে
---
নিউজ ডেস্ক : মিয়ানমারে চরম নির্যাতনের শিকার রাখাইন প্রদেশের মুসলিম রোহিঙ্গাদের দুরবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে বিজিবি কর্তৃক রোহিঙ্গাদের ঢুকতে না দেওয়া এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মমতার ঘটনায় মর্মাহত তারা। এসব ক্ষুব্ধ মানুষের অনেকেই মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী সু’চির নোবেল পদক কেড়ে নেওয়ার দাবি করছেন এবং সেদেশের সেনাবাহিনী এবং সু’চির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠার আহ্বান জানাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলছেন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না দিয়ে আশ্রয় দিন, তাহলে দেশের মানুষ অত্যন্ত খুশি হবে। তাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট বাড়বে। এরকমই একজন মন্তব্যকারী শরবত বিক্রেতা রফিক মিয়া। রাজধানীর মধ্যপাইকপাড়ার এই বাসিন্দা বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এতদিন আশ্রয় দিয়ে অসাধারণ উদারতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ।
কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে না দেওয়ায় কষ্ট পাচ্ছি। এ অবস্থায় নদীতে ভাসছে রোহিঙ্গারা। তাদের অনেকেই নৌকাডুবিতে মরছে। আর ইতোমধ্যে শত শত রোহিঙ্গা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনে মারা গেছে। এখনো যারা বেঁচে আছে তারাও শারীরিক-মানসিক নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয়ের আকুতি জানাচ্ছে। এই অসহায় নারী-পুরুষ ও শিশুদের কান্না শুনছে না কেউ। এ অবস্থায় তাদের ফিরিয়ে না দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় দিলে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা ও ভোট বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের নারী শিক্ষার্থী বলেন, গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনের পুরস্কার হিসেবে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী সু’চিকে নোবেল প্রাইজ দেওয়া উচিত হয়নি। তার নোবেল কেড়ে নেওয়ার দাবি জানিয়ে সু’চিকে সাবেক সামরিক জান্তার চেয়েও নিষ্ঠুর এবং হৃদয়হীন নারী বলে মন্তব্য করেন এই মেডিকেল শিক্ষার্থী। মিয়ানমারের শিশুদের মায়াভরা কান্না দেখে অনেকের চোখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোটভাই রাসেলের চেহারা ভাসছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময় বিপথগামী সেনা কর্মকর্তারা যেভাবে নিষ্পাপ ও মিষ্টি চেহারার রাসেলকে হত্যা করেছিল, অনেকটা সেভাবেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনীও শিশুদের হত্যা করছে।
বাংলাদেশে লুকিয়ে আশ্রয় নেওয়া এক রোহিঙ্গা নারী শরনার্থী অভিযোগ করেছেন তার কোল থেকে দুধের শিশুকে কেড়ে নিয়ে পানিতে ফেলে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এছাড়া মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা অপর শিশুটির হৃদয়স্পর্শী ছবি তো সারাবিশ্বকেই কাঁদিয়েছে। হবিগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের কর্মচারী তফুর মিয়া মোবাইলফোনে আমার সংবাদকে বলেন, একদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন প্রদেশের মুসলমান নারী-পুরুষ ও শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার তাদেরকে ফিরিয়ে দিয়েও মনে কষ্ট দিচ্ছে।
নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ব্যথায় ব্যথিত বাংলাদেশের মানুষও। তফুর মিয়া বলেন, তিনি গরিব কর্মচারী হতে পারেন, কিন্তু তার মন গরিব নয়। তাই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না দিয়ে যদি বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হয় তাহলে তিনি অন্তত ৫শ শরণার্থীকে তার গ্রামে খাওয়া-থাকার ব্যবস্থা করে দেবেন। তার মতে, এভাবে সব শরণার্থীকেই খাওয়া-থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আগ্রহ ও সামর্থ আছে হাজার হাজার মানুষের। তাতে রোহিঙ্গাদের খাওয়াতে সরকারের বাড়তি খরচ হবে না। সূত্র: আমার সংবাদ