নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপিতে শুরু হয়েছে নানা হিসাব-নিকাশ।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি দলটি। এ সরকারের অধীনে সকল নির্বাচনে কারচুপি, ক্ষমতার দাপট, সরকার দলীয় প্রার্থীদের সন্ত্রাসী দ্বারা হুমকি, নির্যাতন, ভোটারদের ভোট দেওয়ার পরিবেশ না থাকার অভিযোগ করে আসছে। তবে দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, স্থানীয় নির্বাচনে সরকারকে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দেবে না বিএনপি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই মুহূর্তে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলাপ-আলোচনা এবং মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব। তিনি বলেন, বর্তমানে নির্বাচন ফার্স (হাস্যকর) হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে অনেক সন্ত্রাসী রয়েছে, সেখানকার পরিস্থিতি আমরা চিন্তাভাবনা করবো। কেননা পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা বলা যায় না। দলটির একাধিক নেতা বলেন, বিএনপির দীর্ঘদিনের দাবি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন। এ নিয়ে দফায় দফায় দেশজুড়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোট।
পাশাপাশি আগামী ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। বর্তমানে একটি গ্রহণযোগ্য এবং দলনিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি।
আগামী শুক্রবার এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলন করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু সরকার বিএনপিকে নানাভাবে ব্যস্ত রাখার কৌশল প্রয়োগ করে যাচ্ছে।
এমতাবস্থায় আবারো স্থানীয় সরকার নির্বাচন তথা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলটি অংশ নেবে কি না তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে বিএনপিতে। তবে স্থানীয় নির্বাচনে সরকারকে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দেবে না বিএনপি এমনটিই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। দলীয় সর্বোচ্চ ফোরামে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারকে এককভাবে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দেয়া হবে না।
বিএনপির একাধিক নেতার মতে, অতীতে বিভিন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে তাদের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির অবস্থান অনেক শক্তিশালী। এমতাবস্থায় তারা স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন।
প্রসঙ্গত, আগামী ২২ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারিত রেখে গতকাল সোমবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকীবউদ্দিন আহমদ। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা নেয়া হবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত। ২৬ ও ২৭ নভেম্বর বাছাই, ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার।
এই নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন ইসির উপসচিব মো: নূরুজ্জামান তালুকদার। সিটি করপোরেশন হিসেবে যাত্রা শুরুর পর নারায়ণগঞ্জে এটি দ্বিতীয় ভোট। তবে দলীয় প্রতীকে ভোট হবে এবারই প্রথম। নারায়ণগঞ্জে গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই নেতা সেলিনা হায়াৎ আইভী ও এ কে এম শামীম ওসমান প্রার্থী হয়েছিলেন। ২০১১ সালে নির্দলীয় ওই নির্বাচনে শামীম ওসমানকে এক লাখের বেশি ভোটে হারিয়ে প্রথম মেয়র হন সাবেক চেয়ারম্যান আইভী।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে একজন মেয়র, ২৭টি সাধারণ ও ৯টি সংরতি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ভোট হবে। মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪১ হাজার ৫১৪ এবং নারী ২ লাখ ৩৭ হাজার ৮৭৮। ভোটার বেড়েছে প্রায় পৌনে ১ লাখ।
জানা যায়, ২০১১ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু পরে ভোট বর্জন করলেও ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। এবারের বিষয়ে দলটির কোনো সিদ্ধান্ত এখনো জানা যায়নি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপি নির্বাচন মুখী ও জনগণের দল। বিএনপি সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এবং নিতে চায়। তবে সেটা তো নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচনের নামে তামাশা, জনগণের ভোট কেরে নেয়া হলে সেটাকে তো নির্বাচন বলা যায় না। আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে। নির্বাচনের পরিবেশ হলে আমারা নারায়নগঞ্জ সিটি নির্বাচনে যাব।
পূর্ব পশ্চিম থেকে