নিজস্ব প্রতিবেদক : যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থের একটি অংশ কূটনীতিক তৎপরতার মাধ্যমে সরকার ফেরত আনতে পারলেও এখনও শনাক্ত হওয়া ৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আনা সম্ভব হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ফেডারেল রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া ডলারের বড় একটি অংশ ফিলিপাইনের বিভিন্ন জায়গায় ফ্রিজ করা রয়েছে।
সূত্র মতে, এ পর্যন্ত চুরি যাওয়া অর্থের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে ফিলিপাইন থেকে বাকি অর্থ উদ্ধারের আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাকি অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে চলতি মাসের শেষ দিকে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ফিলিপাইনে যাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজি হাসান।
উল্লেখ্য, রবিবার নয় মাস পর খোয়া যাওয়া অর্থের একাংশ ফেরত পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। রাজি হাসান বলেন, যত দ্রুত সম্ভব আমরা বাকি অর্থও ফেরত আনার চেষ্টা করব।
গত ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয়েছিল ফিলিপাইনে। ওই অর্থের দেড় কোটি (১৫ মিলিয়ন) ডলার শনিবার ফেরত দিয়েছে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই অর্থ জুয়ার টেবিলে চলে গিয়েছিল, এক ক্যাসিনো মালিক তদন্তের মুখে তা ফেরত দেয়।
ডেপুটি গভর্নর রাজি হাসান বলেন, চুরি যাওয়া ৩১ মিলিয়ন ডলার বিভিন্ন স্থানে ফ্রিজ করা আছে। এর মধ্যে ক্যাসিনোতে আছে ২৯ মিলিয়ন ডলার। ওই ছয় কোটি ডলার ফেরত আনতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি দল ফিলিপাইন যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে নিউইয়র্ক ফেড থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় এক বিলিয়ন ডলার সরানোর চেষ্টা হয়েছিল। একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। অন্যদিকে চারটি মেসেজের মাধ্যমে ফিলিপাইনের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকে (আরসিবিসি) সরিয়ে নেয়া হয় ৮১ মিলিয়ন ডলার। এর একটি বড় অংশ ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে চলে যায়।
বিশ্বজুড়ে তোলপাড় করা এই ঘটনাটি তদন্তের উদ্যোগ নেয় ফিলিপাইনের সিনেট কমিটি। সে দেশের আদালতেও গড়ায় বিষয়টি। এর মধ্যে ক্যাসিনো মালিক কিম অংয়ের ফেরত দেয়া দেড় কোটি ডলার পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করতে গত আগস্টে ম্যানিলা গিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি দল। দেড় কোটি ডলার ফেরত পাওয়ার বিষয়টির বিস্তারিত বর্ণনা সংবাদ সম্মেলনে দেন রাজি হাসান।
তিনি বলেন, ফিলিপাইনের আদালত গত ১৬ সেপ্টেম্বর চীনা বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ী কিম অংয়ের নগদে ফেরত দেয়া ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং ৪৮ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার পেসো বাংলাদেশের অনুকূলে ফেরত দেয়ার আদেশ দেয়।
ফিলিপাইনের আইন অনুযায়ী আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশকে অর্থ ফেরত দিতে এক্সিকিউশন অর্ডারের জন্য ফিলিপাইনের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস ফিলিপাইনের সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গত ২৭ অক্টোবর ৩০ দিনের মধ্যে বাজেয়াপ্ত করা অর্থ বাংলাদেশকে ফেরতের আদেশ দেয়।
ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখা পেসো ও ডলার ফেরতের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউর মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ এবং যুগ্ম-পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রব গত ৭ নভেম্বর ফিলিপাইন যান।
এরপর ৯ নভেম্বর দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এফআইইউ, ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস ও রিজিওনাল কোর্টের শেরিফের সঙ্গে ম্যানিলায় বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা সভা করেন। ওই সভায় অর্থ হস্তান্তরের বিষয় চূড়ান্ত আলোচনা হয়।
রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ আগেই জানিয়েছিলেন, ক্যাসিনো মালিক কিম অং এবং তার ইস্টার্ন হাওয়াই লেজার কোম্পানির ফেরত দেয়া দেড় কোটি ডলার ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গচ্ছিত ছিল। ক্যাসিনো মালিক অং দুই দফায় এক কোটি ডলারের বেশি ফেরত দেন, যা তিনি দুজন চীনা জুয়াড়ির কাছ থেকে নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন।