নিজস্ব প্রতিবেদক : নরসিংদীর রায়পুরা চরাঞ্চলীয় নিলক্ষায় আটটি গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই দলের অব্যাহত টেটা যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনে চারজন নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন- সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আ. হক সরকার সমর্থিত আমিরাবাদ গ্রামের আলতাফ মিয়ার ছেলে মানিক মিয়া (৪৫), সোনাকান্দী গ্রামের আরব আলীর ছেলে খোকন মিয়া (৩২) ও একই গ্রামের মঙ্গল মিয়ার ছেলে মো. মামুন মিয়া (২২ এবং বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে নেয়ার পথে মোমেন নামে আরো এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিলক্ষা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম ও পরাজিত সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হক সরকারের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধের অংশ হিসেবে এবারের টেটাযুদ্ধ রবিবার সকাল থেকে অব্যাহত রয়েছে।
দুই চেয়ারম্যানের দল ও পুলিশসহ ত্রিমুখী সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের গুলি ও টেটার আঘাতে আহত হয়েছেন রায়পুরা থানার ওসি মো. আজহারুল ইসলাম সরকার, এসআই আসাদুজ্জামান আসাদ, জিয়াউর রহমান, এএসআই তোফাজ্জল হোসেন, মাসুদুর রহমান মাসুদ, কনস্টেবল জিল্লুর রহমান ও সাইদুর রহমানসহ ৭ পুলিশ ও উভয় দলের প্রায় ৫০ ব্যক্তি।
রায়পুরা থানা ও নরসিংদীর পুলিশ লাইনের দাঙ্গা পুলিশ একত্রিত হয়ে এ টেটাযুদ্ধ নিয়ন্ত্রণের জন্য চেষ্টা করলে দাঙ্গাবাজ লাঠিয়ালরা পুলিশের উপর চড়াও হয়। আহতরা স্থানীয় নরসিংদী জেলা হাসপাতাল ও পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রায়পুরা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ূন কবিরের উপস্থিতিতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় গ্রামবাসীরা পুলিশের উপর ককটেল ও টেটা নিক্ষেপ করে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সংর্ঘষ অব্যাহত রয়েছে। রায়পুরা থানা পুলিশসহ নরসিংদী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে পুলিশ সূত্র জানা যায়।
রায়পুরা থানা পুলিশ উভয় পক্ষের ১৩ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন। এ ঘটনায় দুই দিনে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়িঘরে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম ও সাবেক চেয়ারম্যান আ. হক সরকারের দলের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের পর থেকে সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরই জের ধরে রবিবার থেকে এই সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। ফলে উভয় পক্ষ পুনরায় দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি বর্ষণের কথা স্বীকার করলেও তাৎক্ষনিকভাবে নিহতের তথ্য জানাতে পারেননি। ত্রিমুখী সংঘর্ষে কোনো নিহতের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন নরসিংদীর পুলিশ সুপার আমেনা বেগম।