মাহবুব খান বাবুল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকেঃ
ঢাকা-সিলেট জতীয় মহাসড়কের সরাইল এলাকায় এখনো দাফুটে চলছে সিএনজি চালিত অটোরিকশা। বিশ্বরোড মোড় থেকে আশুগঞ্জ-ভৈরব ওদিকে শাহবাজপুর চান্দুরা ও মাধবপুর পর্যন্ত। কিছু জায়গায় মহাসড়কের উপরই রয়েছে সিএনজি ষ্ট্যান্ড। পিকআপ ভ্যানে বসে আছে পুলিশ। পুলিশের গাড়ি ঘেষে মহাসড়ক দিয়ে অবাধে চলছে সিএনজি। কোন অ্যাকশান বা শব্দ নেই পুলিশের। যেন পুলিশ প্রহরায় এখানে চলছে অটোরিকশা। এরপর রয়েছে জেলা থেকে ছেড়ে আসা ফিটনেস ও নিবন্ধন বিহীন লক্কর-জক্কর মার্কা বাস। ওই বাস গুলো মহাসড়কে চলে বেপরোয়া। এ ছাড়া দাপুটে চলছে নিবন্ধন বিহীন সিএনজি পিকআপ ভ্যান ট্রাক্টর ও নছিমন গাড়ি। আর লাইসেন্স বিহীন শিশু চালকের দখলে মহাসড়ক। তাই এ অঞ্চলের মহাসড়কে নিয়মিত ঘটছে দূর্ঘটনা। আর ঝরছে তাজা প্রাণ। শুধু গত দুই সপ্তাহে এখানে যন্ত্রদানব কেড়ে নিয়েছে শিশুসহ ১০ প্রাণ। আহত হয়েছে ৩০-৪০ জন। শ্রমিকদের দাবী হাইওয়ে পুলিশকে মাসিক মাসোয়ারা দিয়েই মহাসড়কে চলছে সিএনজি সহ সকল অবৈধ যানবাহন। কোন ভিআইপি বা মন্ত্রীর আগমনের খবর পেলে সিএনজি চালক ও মালিকদের উদ্যেশ্যে মহাসড়কে না চলার মাইকিং করা হয়। ফলে সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় অলিগলি। চরম দূর্ভোগে পড়েন সাধারন যাত্রীরা। এর পেছনে কি রহস্য রয়েছে? এমন প্রশ্ন যাত্রী ও জনগনের। সরজমিনে ঘুরে সিএনজি চালক, মালিক ও যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বছর দিন আগেই সরকার জনস্বার্থে প্রজ্ঞাপন জারি করে সারা দেশে মহাসড়কে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ বিষয়ে প্রথম দিকে মালিক শ্রমিকরা আন্দোলন সংগ্রাম করলেও এখন নিরব। কিন্তু দাফুটে সিএনজি এখন খুব বেশী সরব সরাইলের মহাসড়কে। বিশ্বরোড মোড়ে মহাসড়কের উপর রয়েছে ২-৩টি সিএনজি ষ্ট্যান্ড। ষ্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে মহাসড়কের কুট্রাপাড়া, বাড়িউড়া, শাহবাজপুর ও চান্দুরায়। বিশ্বরোড মোড় থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কের ৩-৪ জায়গায় রয়েছে সিএনজি ষ্ট্যান্ড। বিশ্বরোড হাইওয়ে থানা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অবৈধ কিছু যানবাহন আটক করলেও রাত ১০টার খালি হয়ে যায়। দালালদের মাধ্যমে টাকায় গাড়ি ছাড়িয়ে নেয় মালিকরা। বেশ কিছু ষ্ট্যান্ড থেকে মাসিক টাকা যাচ্ছে পুলিশের পকেটে এমন তথ্য জানালেন কতিপয় শ্রমিক নেতা। সবকিছু ম্যানেজ করে এখানে চলছে নিবন্ধন বিহীন সিএনজি চালিত অটোরিকশা, পিকআপ ভ্যান, ট্রাক্টর ও নছিমন নামের গাড়ি। এ ছাড়া অধিকাংশ চালকই শিশু। তাদের নেই কোন লাইসেন্স। ফলে এ সড়কে এখন নিয়মিত ঘটছে দূর্ঘটনা। গত দুই সপ্তাহে এ সড়কে ১০টি তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে যন্ত্রদানব। সর্বশেষ গত ১৮ সেপ্টেম্বর ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে আনতে গিয়ে মহাসড়কে দিগন্ত পরিবহনের বাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান সিএনজি যাত্রী সরাইল উপজেলার কাটানিশার গ্রামের ৫ সন্তানের জনক ধন মিয়া (৩০)। গত ১৬ সেপ্টেম্বর মহাসড়কের ইসলামপুর নামক স্থানে একটি অটোরিকশাকে ওভারটেক করতে চাইলে বরযাত্রী যাত্রীবাহী মাইক্রো ও এনা পরিবহনের কোচের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই বরসহ একই পরিবারের ৫ জন ও আরো ৩ জন প্রতিবেশী নিহত হন। এর ২/১ দিন আগে ট্রাক্টর ও পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে মহাসড়কের কুট্রাপাড়া এলাকায় এক চালক নিহত হন। ২০১৫ সালে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে সরাইলের জিলানী পাম্প সংলগ্ন মহাসড়কে অটোরিকশা দূর্ঘটনায় জয়ধরকান্দি গ্রামের চিকিৎসক ইলিয়াছ ও আইরল গ্রামের টেম্পু চালক দুজনই পৃথক অটোরিকশা দূর্ঘটনায় পরিবারের সকল সদস্যসহ মারা যান। তারপরও সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিশ্বরোড থেকে আশুগঞ্জ ভৈরব পর্যন্ত দেদারছে চলছে সিএনজি। আবার বিশ্বরোড থেকে শাহবাজপুর চান্দুরা মাধবপুরেও বন্ধ নেই। অনেক সময় দেখা যায় হাইওয়ে পুলিশের সামনে দিয়েই চলছে। আর পুলিশ দেখছে। ভোরে মহাসড়কের কিছু জায়গায় বিশেষ কাজে ব্যস্ত থাকে পুলিশ। আর সুযোগ বুঝে ইচ্ছেমত সিএনজি আপ-ডাউন করছে মহাসড়কে। আবার চালকরা মুচকিও হাসছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৩-৪ জন অটোরিকশা শ্রমিক নেতা বলেন, ষ্ট্যান্ড গুলো থেকে পুলিশকে মাসিক টাকা দিতে হয়। এ ছাড়া সড়কের কিছু জায়গায় গাড়ি আটক করলেই গুনতে হয় টাকা। পরে সড়কে চলতে সমস্যার কথা উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সিএনজি চালক বলেন, অনেক যন্ত্রণায় আছি। যারা পুলিশকে মাসে মাসে টাকা দেয়, তাদের গাড়ি ধরে না। যারা টাকা দেয় না, তারা গ্যাস আনতে গেলেও ধরে ফেলে। ৩-৪ হাজার টাকা দিলে দিন শেষে ছাড়া পাওয়া যায়। নতুবা মোটা জরিমানার মামলা নিয়ে বাড়ি আসতে হয়। আর মামলা শেষ করতে যেতে হয় মামলা। বিশ্বরোড খাটিহাতা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হুমায়ুন কবীর বিশ্বরোড মোড়ে চালক ও শ্রমিকদের এলোমেলো ভাবে গাড়ি রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, বর্তমানে এখানে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। আগে এখানে কি হয়েছে আমার জানা নেই। আমি এখানে যোগদান করেছি দেড় মাস হয়েছে। সড়ক ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের শান্তির জন্য দিনরাত পরিশ্রম করছি। মহাসড়কে নিয়মিত অভিযান করে অবৈধ যানবাহন আটক করছি। মামলা দিচ্ছি।