বিশেষ প্রতিনিধি : সাংবাদিকতা বলতে এই নয় সত্যকে উপস্হাপন করার আগে নিজের কলমকে অন্য কোন ভাবে প্রভাবিত হয়ে আসল ঘটনা জেনে ও কলমকে ধাবিয়ে রাখা নতুবা কোন কৃএিম ঠান্ডা বাতাসের নিচে বসে বিশেষ কোন এজেন্ডার দালালি করা। পরাধীন ব্রিটিশ থেকে ঔপনিবেশিক পাকিস্তান আমল পর্যন্ত দীর্ঘ এক পথ-পরিক্রমা। এ সময়ে রাজনীতি, সাংবাদিকতা, সাহিত্য জগতে যারা ছিলেন পথিকৃৎ তারা দেশ বা জাতির স্বার্থে অভিন্ন ভূমিকা পালন করতেন। যদিও ওই সময়কার নেতৃবৃন্দের আদর্শিক পথ বা চেতনা ছিল ভিন্ন। কিন্তু রাষ্ট্রের জনগণের প্রশ্নে তারা ছিলেন অভিন্ন। কাজী নজরুল ইসলাম, ইসমাইল হোসেন সিরাজী, শেরেবাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক, কাঙাল হরিণাথ মজুমদার, বারীন্দ্র ঘোষ, মাওলানা আকরাম খাঁ, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মোহাম্মদ মোদাব্বের, মাওলানা মুজিবর রহমান, আবুল মুনসুর আহম্মদ, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ, তোফাজ্জেল হোসেন মানিক মিয়া প্রমুখরা ছিলেন এই উপমহাদেশে বাংলা সাংবাদিকতা জগতের বিরল এক দিকপাল। এসব ব্যক্তি একাধারে দার্শনিক, রাজনীতিক, সাংবাদিক ও সুসাহিত্যিক ছিলেন। তারা ছিলেন শতভাগ দেশপ্রেমিক। তারা দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে ব্রত ছিলেন। তারা অপশক্তির মুখোশ উন্মোচন করতেন। আমজনতার রাজত্ব কায়েমে জীবনবাজি রেখে লড়েছেন। অবশেষে জনগণের অধিকার বাস্তবায়ন করেছেন। এখন স্বাধীন দেশে নির্ভীক সম্পাদক বা সৎ সাংবাদিকের আকাল দেখা দিয়েছে, এটি শতভাগ ঠিক তা আমরা বলতে পারিনা। এখন প্রশ্ন বাংলাদেশের গণমাধ্যম সেবীরা কী পথ হারিয়েছেন? নানাজনের নানা মত। কেউ বলছেন, ঠিক পথ হারাননি হারিয়েছে নিতি আর বিবেক দিয়েছে বির্সজন । মূল শিকড় থেকে দূরে সরে গেছেন। অনেকে আবার দাস সাংবাদিকতায় নাম লিখিয়েছেন। সস্তা কিছু প্রাপ্তির আশায় রাজনীতির রঙ্গালয়ে হাবুডুবু খাচ্ছেন। তবে সব যে একই পথের পথিক তা কিন্তু নয়। আসলে সংবাদপত্র অন্য দশটি ব্যবসার মতো কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নয়। শুধুমাত্র মুনাফা লাভই তার উদ্দেশ্য নয়। এক সময় সংবাদপত্র কোনো রাজনৈতিক আদর্শের অনুরাগী হলেও তার স্হান ছিল সবার উপরে । তখন পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্টরা দেশ-জাতির স্বপক্ষে সুস্পষ্ট অবস্থান নিতেন। প্রতিটি সংবাদপত্রের স্বাধীন নীতিমালা ও আদর্শ থাকে। সম্পাদকীয় রীতিনীতি থাকে। তবে সব রীতিনীতি এবং আদর্শের মর্মমূলে অবস্থান করে গণমানুষের অধিকারের কথা। জাতীয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার কথা। সম্পাদক অন্য দশজনের মতো একজন হাতে-কলমে মানুষ। রয়েছে তার মানবীয় গুণাবলী আছে দায়িত্ববোধ। জাতির কাছে, দেশের কাছে একরাশ দায়বদ্ধতা রয়েছে। এ কথাগুলো এ কারণে বললাম যে, কোনো একটি লেখা সরকার বা বিরোধী দলের পক্ষে যেতে পারে, আবার নাও যেতে পারে। তবে লেখাটি তথ্যনির্ভর হতে হবে। গঠনমূলক ভূমিকা থাকতে হবে। দেশ-জাতির স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ডান-বামে না তাকিয়ে সত্য প্রকাশে নির্ভীক হতে বাধা কোথায়? যে লেখার কোনো গুরুত্ব নেই, দেশ-জাতির কোনো উপকারে আসে না এই রকম লেখার মূল্যই আছে কতটুকু?