বিদেশে সন্দেহজনক যোগাযোগ বাবুল আক্তারের!
---
নিউজ ডেস্ক : চাকরি থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া এসপি বাবুল আক্তার বিদেশে চলে যেতে পারেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি ইতিমধ্যে কয়েক দফায় ইউরোপের একটি দেশে তার বিশ্বস্ত বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তবে কথোপকথনের অনেকটাই হয়েছে ভাইবার অ্যাপসে। যে কারণে ফোনে আড়িপাতা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিস্তারিত জানতে পারেননি।
সূত্র জানায়, দু’দিন আগে সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে ফোন করেন তার এক প্রবাসী বন্ধু। তিনি মুঠোফোনে বাবুলকে বলেন, ‘এখানে (বিদেশে) চলে এসো, থাকা ও খাওয়া-দাওয়ার কোনো কিছুরই সমস্যা হবে না। সব ব্যবস্থা আমাদের।’ উত্তরে বাবুল বলেন, ‘এই লাইনে কথা বলা যাবে না। আমি ভাইবারে (অ্যাপস) কল দিচ্ছি।’ এরপর বাবুল ওই বন্ধুর সঙ্গে অ্যাপসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কথা সেরে নেন। তদন্তের স্বার্থে বাবুল আক্তারের সংশ্লিষ্ট বন্ধুর নাম-পরিচয় ও দেশের নাম প্রকাশ করা হল না।
এদিকে সম্প্রতি বাবুল আক্তারের আরেকজন প্রবাসী বন্ধু ফোন করে একই প্রস্তাব দেন। সেখানে ভাইবারে কথা বলার আগ পর্যন্ত তারা যেটুকু আলাপ সেরেছেন তাতে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, বাবুল ঈদের পর আর দেশে থাকতে চাইছেন না। সেক্ষেত্রে বাচ্চাদেরও সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন। এই ফোনালাপের শুরুতে বাবুল আক্তারের উদ্দেশে তার বন্ধু বলেন, ‘দেশে আর থেকো না, দেশে থাকা তোমার ঠিক হচ্ছে না।’ চুপ থাকার পর ওই বন্ধুর উদ্দেশ্যে এপাশ থেকে বাবুল আক্তার বলেন, ‘আমার তো দুইটা বাচ্চা আছে। ওদেরকে রেখে কীভাবে যাব…।’ পরে এ বন্ধুর সঙ্গেও বাবুলের পরবর্তী ফোনালাপ ভাইবার অ্যাপসেই হয়। জানা গেছে, তদন্তের স্বার্থে দায়িত্বপ্রাপ্ত গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকটি টিম বাবুল আক্তারের গতিবিধি নানাভাবে অনুসরণ করছে। এর অংশ হিসেবে একটি টিম তার সব ক’টি ফোন সংযোগ মনিটরিংয়ের কাজে সম্পৃক্ত আছে। সূত্রটি জানায়, বাবুল আক্তার ইদানীং বেশির ভাগ সময় দেশে ও বিদেশের সন্দেহভাজন কয়েকটি স্থানে দীর্ঘক্ষণ ভাইবার অ্যাপসে কথা বলেন। তারা প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে সেখানেও আড়িপাতার চেষ্টা করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, বাবুল আক্তার তার দুই শিশু সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি চিন্তিত। যে কারণে স্থির কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে তার বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়া মাকে হারিয়ে তার দুটি শিশু সন্তানও এখন বেশিরভাগ সময় বাবুল আক্তারের সঙ্গে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এটিও তার জন্য বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এ কারণে তার বিদেশের সহযোগী বন্ধুরা তাকে বিদেশে নিয়ে যেতে চাইলেও তিনি এক পা সামনে বাড়িয়ে আবার দু’পা পিছিয়ে যাচ্ছেন। তবে ধারণা করা হচ্ছে, দুই বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ইউরোপের কোনো দেশে চলে যেতে পারেন। অবশ্য এক্ষেত্রে ভিসা প্রাপ্তিসহ সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতা পাওয়ার প্রশ্ন জড়িত।
অপরদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নানা কারণে তারা এখন বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেনের ওপর কঠোর নজরদারি রাখছেন। বিষয়টি কিছুটা আঁচ করতে পেরে মোশাররফ হোসেনও ইদানীং গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন।
জামাতা বাবুল আক্তারের চাকরি চলে যাওয়ার পর তিনি সর্বশেষ গণমাধ্যমে তির্যক মন্তব্য করে খানিকাটা আলোচিত হয়েছেন। একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘সরকার তার যুদ্ধে জিতেছে। কতদূর জিতবে জানি না। এখন আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।’ তবে এখন কথার ধরন পাল্টে ফেলেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে মোশাররফ হোসেন দু’দিন আগে তার পরিচিত এক লোকের সঙ্গে ফোনালাপে বলেন, ‘তিনি এখন কোনো মামলা-মোকদ্দমায় যাবেন না।’ এতে সহজে অনুমান করা যায় তিনিও কঠোর নজরদারিতেই আছেন।
এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ঈদের পরই বাবুল আক্তারের সঙ্গে কথা বলবে তদন্ত দল। এ প্রসঙ্গে মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) কামরুজ্জামান বৃহস্পতিবার বলেন, মামলা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করতেই বাবুল আক্তারকে দ্বিতীয়বার ডাকা হতে পারে। একইদিনে বাবুল আক্তার তার প্রতিক্রিয়ায় যুগান্তরকে বলেন, তদন্ত সংস্থাকে যে কোনো সহায়তা দিতে তিনিও প্রস্তুত আছেন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৫ জুন চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ের অদূরে সন্তানকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে খুন হন আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। আর স্ত্রী খুনের পর নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে বাবুল আক্তারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই ৬ সেপ্টেম্বর তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। যদিও এই পদত্যাগপত্র নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার পর নানাভাবে আলোচিত ও সমালোচিত হন বাবুল আক্তার। চাকরি হারানো এই পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমানে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়ার ভুঁইয়াপাড়ায় শ্বশুরবাড়িতেই থাকছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অব্যাহতিপত্র জারির পর বাবুল প্রায় ২৪ ঘণ্টা নিরুদ্দেশ ছিলেন। এর আগে স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের ১৯ দিনের মাথায় ২৪ জুন শ্বশুরবাড়ি থেকেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। ওই সময় দীর্ঘ ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বাবুল আক্তারকে। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে ইস্তফা দেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করেন।যুগান্তর