দালালের খপ্পরে নরসিংদীর ২ যুবক নিখোঁজ
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় কাউছার ও গোলাপ মিয়া নামের দুই যুবক দুই বছরের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ। সংঘবদ্ধ দালালচক্র মালয়েশিয়ায় চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের পরিবারের।দুই যুবক কোথায় আছে, কিভাবে আছে জানার জন্য দুই তাদের বাবা-মা ও স্বজনরা হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কোথাও কোনো হদিস করতে পারছেন না।
কাউছারের সন্ধানে তাঁর মা দেলোয়ারা বেগম, স্ত্রী তানিয়া ও একমাত্র শিশুকন্যা মারিয়া তাবাসসুম জুঁই নরসিংদী প্রেসক্লাবে এসে তাদেরকে প্ররোচনা দেয়ার কাহিনী বর্ণনা করেন।নিখোঁজ দুই যুবকের পরিবার সূত্রে জানা যায়, রায়পুরা উপজেলার মির্জানগর গ্রামের কাউছার মিয়া ও গোলাপ মিয়া দেশে সিএনজি অটোরিকশা চালাতেন। দুই বছর আগে একই গ্রামর হানিফ তাঁদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে প্রলোভন দেখাতে থাকে। মালয়েশিয়া প্রবাসী বাবুল ও বেদন মিয়ার পক্ষে তিনি দালাল হিসেবে কাজ করতেন। দালালের খপ্পরে পড়ে ২০১৪ সালের ১০ জানুয়ারি কাউছার মিয়া ও গোলাপ মিয়া মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর ১২ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে কাউছার একটি মোবাইল ফোনে স্ত্রী তানিয়া, বাবা হানিফ, মা দেলোয়ারা বেগম ও তার মেয়ে জুঁইয়ের সঙ্গে শেষবারের মতো কথা বলেন। তখন কাউছার জানান, ওই দিনগত রাতে তিনি জাহাজে উঠবেন।
এরপর তাদের সাথে আর কোন যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেনি পরিবারের লোকজন। ৪/৫ দিন পর দালাল হানিফ বাসায় গিয়ে কাউছারের পিতার কাছে ৩ লাখ টাকা দাবি করে। সে জানায়, কাউছার মালয়েশিয়ায় পৌঁছে গেছে। ৩ লাখ টাকা দিলে সে চাকুরিতে যোগদান করতে পারবে। পরিবারের লোকজন তাকে জানিয়ে দেয় যে, কাউছার তাদের সাথে ফোনে কথা বললে নিশ্চিত হয়ে তারা টাকা দেবে। কিছুক্ষণ পর দালাল হানিফ জানায়, কয়েক মিনিট পর কাউছার ফোনে কথা বলবে। এ কথা বলে হানিফ বাড়িতে অপেক্ষায় বসে থাকে। এরপর দালালচক্রের অপর এক সদস্য কাউছার পরিচয়ে তার পিতার কাছে ফোন করে এবং কথা বলে। কাউছার পরিচয়দানকারী দালাল এসময় হানিফকে টাকা দেয়ার জন্য কাউছারের পিতাকে অনুরোধ করে। কিন্তু ফোনে এই কাউছারের কণ্ঠ আর নিজ পুত্র কাউছারের কণ্ঠের মিল না পেয়ে পিতা হানিফের মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বুদ্ধি করে ফোনের কাউছারকে পারিবারিক কয়েকটি প্রশ্ন করলে সে উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়ে ফোনের লাইন কেটে দেয়। এতে কাউছারের পিতার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এটি দালাল চক্রের একটি কারসাজি।
কাউছারের পিতা হানিফ তাৎক্ষণিকভাবে দালাল হানিফকে আটক করে প্রকৃত ঘটনা জানতে চান। সে কোন ক্রমেই ঘটনা বলতে চায় নি। পরে আশপাশের লোকজন এসে তাকে চাপ দিলে সে জানায়, হাসনাবাদ পশ্চিমপাড়া গ্রামের ইসমাইল মিয়ার পুত্র মালয়েশিয়া প্রবাসী বেদন মিয়ার সাথে চট্টগ্রাম ও রায়পুরা অঞ্চলের এক বিশাল দালাল চক্রের যোগাযোগ রয়েছে। এ দালাল চক্রেরই নিম্ন পর্যায়ের সদস্য হচ্ছে হানিফ মিয়া। সে বেদন মিয়া ও চট্টগ্রামে তার দালাল চক্রের নির্দেশ ক্রমে কাজ করে। এছাড়া আর কিছুই সে জানে না। তাদেরই নির্দেশে সে কাউছার ও গোলাপ মিয়াকে মালয়েশিয়া যাবার জন্য পটিয়ে দালালদের হাতে তুলে দিয়েছে। এরপর তার সাথে আর কোন যোগাযোগ নেই। দালাল চক্রের সাথে ফোন ছাড়া অন্য কোনভাবে যোগাযোগ হয়নি এবং হওয়ার সুযোগও নেই। দালাল চক্রের অধিকাংশ সদস্যই রায়পুরা এবং চট্টগ্রাম এলাকার।
সে জানায়, দালালদের বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে। তারাই কাউছার ও গোলাপ মিয়াকে মালয়েশিয়ার কথা বলে জাহাজে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে কাউছার ও গোলাপ মিয়ার স্বজনরা তাদের সন্ধানে নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কয়েকদিন আগে কাউছার মিয়ার মা দেলোয়ারা বেগম প্রেসক্লাবে গিয়ে পুত্র হারানোর কথা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
একইভাবে তার স্ত্রী তানিয়া একমাত্র শিশু কন্যা জুঁইকে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে স্বামীর সন্ধান করে ফিরছেন। কিন্তু কোথাও খোঁজ মিলছে না।