ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩ সপ্তাহে গৃহবধু নাজমা হত্যা মামলার কোন আসামী গ্রেপ্তার হয়নি
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩ সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও গ্রেপ্তার হয়নি সদর উপজেলার মজলিশপুরের গৃহবধূ নাজমা আক্তার-(২০) হত্যা মামলার আসামীরা। গত ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নাজমার মৃত্যু হয়। যৌতুকের দাবিতে ৭ মাসের অন্তঃসত্বা নাজমাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে নাজমার পরিবারের লোকজনের অভিযোগ।
এ ঘটনায় নাজমার বড় বোন কুলসুমা খাতুন শেলী বাদী হয়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামীরা হলেন সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের আমিরপাড়ার খুরশেদ মিয়ার ছেলে ও নাজমার স্বামী ফায়েজ মিয়া-(২৮),ফায়েজের পিতা খুরশেদ মিয়া-(৫২), ফায়েজের মা-(৪৮), ফায়েজের ভাই খায়েস মিয়া-(৩০),ইউনুছ মিয়া-(২৭),নাদিম -(২৪), সাব্বির-(২২),বোন বেবী-(৩৩) ও জয়া -(২০)। এদিকে হত্যা ঘটনার পর ৩ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও মামলার কোন আসামী এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। এতে মামলার ভবিষ্যত নিয়ে শংকিত নাজমার পরিবার।
এলাকাবাসী ও মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১১ আগষ্ট বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়নের সাতবর্গ গ্রামের সহিদ মিয়ার মেয়ে নাজমার সাথে সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের আমিরপাড়া গ্রামের খুরশেদ মিয়ার ছেলে ফায়েজ মিয়ার ৬ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয়।
নাজমার মা মাহেলা খাতুন জানান- বিয়ের সময় নগদ ৩ লাখ টাকা ও ৫ ভরি স্বর্ণালংকার যৌতুক হিসেবে দেন তারা। বিয়ের কিছুদিন পরই ফায়েজ মিয়া আরো ১০ লাখ টাকা দাবি করে। এজন্যে বিভিন্ন সময় নাজমার ওপর নির্যাতন চালায় তারা। শেষ পর্যন্ত যৌতুকের জন্য ৭ মাসের অন্তঃসত্বা নাজমার শরীরে কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
তিনি আরো জানান- গত ২২ মার্চ ফায়েজ তার নাজমাকে মারধোর করে কিছু না বলে বাড়ি থেকে চলে যায়। পরে আমরা জানতে পারি সে মালয়েশিয়া চলে গেছে। সেখান থেকে ২৪ মার্চ রাতে ফায়েজ তার ভাই খায়েস মিয়ার মোবাইলে ফোন করে নাজমার সাথে কথা বলে। এসময় সে নাজমার কাছে আবারো ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। নাজমা এই টাকা দিতে পারবে না বলার পর ফায়েজের ভাই খায়েস মিয়া,নাদিম ও সাব্বির মিলে নাজমাকে মারধোর কর।
নিহত নাজমার বড় বোন ও মামলার বাদী কুলসুমা খাতুন শেলী বলেন- নাজমাকে মারধোর করার খবর পেয়ে পরদিন ২৫ মার্চ সকালে আমি তাকে নিয়ে আসার জন্যে মজলিশপুরে যাই। আমি যাওয়ার পরই খায়েস তার ভাই ফায়েজকে ফোন করে টাকা চাইতে বলে। ফোনের লাউড স্পীকার দেয়া থাকায় আমি তাদের দু-ভাইয়ের কথা শুনতে পাই। ফায়েজ তার ভাইকে বলে ‘জানিয়ে দে টাকা না দিলে নাজমার অস্তিত্ব থাকবেনা। এরপর আমার সামনেই নাজমার শ্বশুর খুরশিদ মিয়া চুল ধরে টেনে মাটিতে ফেলে দেয় নাজমাকে এবং শ্বাশুরী ঝাড়– দিয়ে পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে ফায়েজের ৫ ভাই-বোন নাদিম,সাব্বির,খায়েস মিয়া,বেবী ও জয়া নাজমার শরীরে কোরোসিন ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে মুহুর্তেই তার শরীর পুড়ে যায়। এসময় তারা আমাকে আটকে রাখে। আমি চিৎকার শুরু করলে লোকজন ছুটে আসে। পরে আমার বোনকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ফায়েজের ভাই খায়েস মিয়াও আমাদের সাথে হাসপাতালে আসে। তারা হাসপাতালে পুলিশ দেখে নাজমাকে রেখেই পালিয়ে যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তির পর নাজমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়। সেখানে ঐদিনই (২৫ মার্চ) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে নাজমা মারা যায়।
নাজমার মা মাহেলা খাতুন বলেন- আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীদের কঠোর বিচার চাই। কিন্তু এখন পর্যন্ত আসামীরা ধরা না পড়ায় আমরা হতাশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার সাব ইন্সপেক্টর প্রেমধন মজুমদার বলেন, নাজমা আগুনে পুড়ে মারা গেছে এটা ঠিক। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনো আমরা পাইনি। আমরা তদন্ত করছি। তিনি বলেন, আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।