ভবন মালিকদের অব্যবস্থাপনায় ঝরে গেলো ২৫টি তাজা প্রাণ
নিউজ ডেস্ক : প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের পর যে বিষয়গুলোর উপর যে বিষয়গুলোর উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়ে আসছে, সেগুলোর অভাব দেখা গেল বনানীর বহুতল ভবন এফআর টাওয়ারেও।ঢাকার বনানীর ২২ তলা এই ভবনে বৃহস্পতিবার দুপুরে আগুন লেগে চারটি তলা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়; অন্তত ২৫ জন নিহত এবং অর্ধ শতাধিক মানুষ আহত হন। রাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ জনে দাঁড়ায়।অনেকগুলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় থাকলেও এই ভবনে অগ্নি নির্বাপনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না বলে সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রীর কথায় উঠে এসেছে। যেটুকু ছিল, সেগুলোও কার্যকর ছিল না বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের ভাষ্য।
সুউচ্চ এফআর টাওয়ার গড়তে ভবন নির্মাণের নীতিমালা মানা হয়নি বলেও দাবি করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের ৩২ নম্বর হোল্ডিংয়ে ফারুক নামে এক ব্যক্তির জমিতে এই বাণিজ্যিক ভবনটি তৈরি করে রূপায়ন গ্রুপ। ভবন নির্মাণে অব্যবস্থাপনা নিয়ে তাদের কারও বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।ঢাকায় এর আগে বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের পর সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো থেকে শুরু করে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ভবন নির্মাণের নীতিমালা ও অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ও দুর্ঘটনা হলে বেরিয়ে আসার পথ রাখার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু তাতে যে কাজ হচ্ছে না, পুরান ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের দেড় মাসের মধ্যে এফআর টাওয়ারের আগুনের ঘটনা তাই আবার প্রকাশ করল।অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের দেখতে রাতে কুর্মিটোলা হাসপাতালে গিয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এফআর টাওয়ারে অগ্নি নির্বাপণের নিজস্ব কোনো ব্যবস্থা ছিল না।ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন অগ্নিকাণ্ডস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি ভেতরে গিয়েছিলাম; দেখেছি কিছু যন্ত্রপাতি ছিল, কিন্তু সেগুলো ইউজেবল (ব্যবহার উপযোগী) ছিল না।”
২২ তলা এই ভবনের মাঝামাঝিতে সপ্তম ও অষ্টম তলায় প্রথম আগুন দেখা যায়। পরে তা আরও কয়েক তলায় ছড়ায়। ওই সময় ভবনে থাকা মানুষগুলোর কেউ কেউ সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসতে চেষ্টা করেন। কেউ বা ছুটে যান উপরের দিকে।প্রতিমন্ত্রী এনামুর বলেন, “বিল্ডিংয়ের এমার্জেন্সি কলাপসিবেল গেইট বন্ধ ছিল। সে কারণে উদ্ধার কাজ বিঘ্নিত হয়েছে। এছাড়া বিল্ডিংয়ের সিঁড়িটা ছিল সরু।”এই ধরনের ঘটনায় ছাদে আশ্রয় নিলে তাদের উদ্ধার করতে পারেন উদ্ধারকর্মীরা। কিন্তু এফআর টাওয়ারের ছাদও খোলামেলা ছিল না বলে ডার্ডের কর্মী সাব্বির জানান।তিনি বলেন, জমির মালিক আর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের দ্বন্দ্বে ছাদও ভাগ করেছে তারা। সেখানে দাঁড়ানোর অবস্থাও ছিল না।
“দুই জনের বিল্ডিং এইটা। তাদের ঝামেলার কারণে ছাদটা পর্যন্ত ভাগ করে ফেলেছে। সেখানে সিকিউরিটিদের থাকার জায়গা করা হয়েছে। একটা ছাদে দেয়াল উঠাইছে প্রায় ১০ ফুট। এমন পরিস্থিতি যে ছাদে গিয়া একটু খোলা বাতাস খাওয়ার সুযোগ নাই।”অগ্নিকাণ্ডস্থলে গিয়ে দেখে আসার পর ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিক বলেন, ‘বিল্ডিং কোড’ মেনে ওই ভবনটি বানানো হয়নি।“আমি প্রাথমিকভাবে বলছি, এই ভবনটি বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোডের সব শর্ত মেনে করা হয়নি। তাদের ইমার্জেন্সি এক্সিটও ঠিক ছিল না। ।”নিজের পোশাক কারখানায় অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা রাখার অভিজ্ঞতা থেকে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিক বলেন, “বিল্ডিং কোড মেনে বানানো হলে তাদের ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা পুরোটা থাকত। তাদের ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকত, তাতে পানি উপরের ফ্লোর পর্যন্ত কাভার করতে পারত।”
আগুন নেভাতে যাওয়া অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর কর্মকর্তারাও পানি না পাওয়ার কথা বলেছিলেন।কীভাবে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে, সে বিষয়ে কিছু জানাতে না পারলেও আগুন ছড়িয়ে পড়ার কারণ দেখাতে পেরেছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক।তিনি বলেন, “ভেতর তো সাধারণত ভিনাইল বোর্ড দিয়ে ডেকোরেট করা থাকে, এখানেও তাই ছিল, তার সঙ্গে প্লাস্টিক বোর্ডও ছিল। যেগুলো ফুয়েল হিসেবে কাজ করছে এবং দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে।” বিডিনিউজ২৪