বিয়েবার্ষিকীর দুদিন পরই আগুনে ‘নিভল’ বৃষ্টি
যশোর প্রতিনিধি : ২৬ মার্চ স্বামীকে নিয়ে বিয়েবার্ষিকী উদযাপন করেন শেখ জারিন তাসনিম বৃষ্টি (২৬)। তবে বৃষ্টি-নূর দম্পতি কি জানতেন এটাই তাদের জীবনের শেষ বিয়েবার্ষিকী কিংবা দুদিন পরেই পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নেবে বৃষ্টি? কিন্তু এটাই ছিল নিয়তি। আগুন নিভিয়ে দিল বৃষ্টির জীবনপ্রদীপ। যশোরের মেয়ে বৃষ্টি চাকরি করতেন ঢাকার বনানির এফআর টাওয়ারের ১২তলায় একটি প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগে।
২০১৬ সালের ২৬ মার্চ সহপাঠী কাজী সাদ নূরের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। নূরের বাড়ি যশোরের পুরাতন কসবা এলাকায়। তিনি ঢাকার রেডিসন হোটেলের কর্মকর্তা। বৃহস্পতিবার, অগ্নিকা-ের রাতে আরএফ টাওয়ারের ১৮তলার সিঁড়ি থেকে বৃষ্টির মরদেহ পাওয়া গেছে বলে পরিবারকে জানিয়য়েছেন উদ্ধারকারীরা। নিহত বৃষ্টি যশোর শহরের বেজপাড়া বনানী সড়কের মোটর পার্টস ব্যবসায়ী শেখ মুজাহিদুল ইসলামের মেয়ে এবং একই শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়ার কাজী ইরাদ আলীর পুত্রবধূ।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, যশোর বিএনএফ শাহীন স্কুল ও কলেজ থেকে ২০০৬ সালে এসএসসি এবং ২০০৮ সালে এইচএসসি পাস করে ঢাকার ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানবসম্পদ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন বৃষ্টি। বিয়ের পরে স্বামী-স্ত্রী বসবাস করতেন ঢাকার খিলক্ষেতে। নিহত বৃষ্টির দেবর কাজী নিপুন বলেন, ভবনে আগুন লাগার পর ভাবি (বৃষ্টি) তাৎক্ষণিকভাবে ভাইকে (বৃষ্টির স্বামী) ফোন করে ঘটনার কথা জানান। ভাই ভাবিকে ভবনের ছাদে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
তবে ভাবি জানাচ্ছিলেন, ধোঁয়ায় কোনো দিকে যাওয়া যাচ্ছে না। এর পর থেকে ভাবির ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। একটানা ফোনে চেষ্টা করতে করতে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ফোনে কল ঢুকলে অপরপ্রান্ত থেকে ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মী রিসিভ করে ভাবির মৃত্যুর খবর জানান। ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মী আরও জানান, আগুনে ভাবির ফোন নষ্ট হয়ে গেলেও সিমকার্ড ভালো থাকায় ওই উদ্ধারকর্মী সিমটি নিজের ফোনে ঢুকিয়েছিলেন বলে দ্রুত মরদেহটি শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়াও আরএফ টাওয়ারের ১৮ তলার সিঁড়িতে মরদেহ পাওয়া গেছে বলে জানান উদ্ধারকারী দলের ওই কর্মী। উদ্ধারকর্মীদের ধারণা, আগুনের তাপে ও ধোঁয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টায় বৃষ্টির মরদেহ যশোরে এসে পৌঁছলে পরিবারের সদস্যরা শোকে বিহব্বল হয়ে পড়েন। গতকাল দুপুরে যশোর শহরের চৌরাস্তা জামে মসজিদে তার প্রথম জানাজা এবং বিকালে আসরের নামাজের পর বেজপাড়ায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে সন্ধ্যায় কারবালা কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।