‘অন্যের স্ত্রীকে’ বিয়ে করতে বাধ্য করা হলো যুবককে, অতঃপর
অন্যের স্ত্রীকে আরেক যুবকের সাথে চাপ দিয়ে বিয়ে করিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে রূপগঞ্জ পুলিশের বিরুদ্ধে। যদিও পুলিশ দাবি করেছে, পূর্বের স্বামীর সাথে নারীর আইন মোতাবেক ডিভোর্স হওয়ায় এই বিয়ে দেয়া হয়েছে এবং কোনো জোর বা চাপ প্রয়োগ করা হয়নি।
শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) রূপগঞ্জ থানার কাছে পুলিশের উপস্থিতিতে ভুলতা গোলাকান্দাইল এলাকার মোমেন মিয়ার ছেলে রাজীবের সাথে শীলা আক্তার নামে এক নারীর বিয়ে হয়। এই বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন গোলাকান্দাইলের কাজী মাসুম।
তিনি জানান, ডিভোর্স হয়েছে এবং আজ রবিবার (২ সেপ্টেম্বর) ডিভোর্সের কাগজ পৌঁছে দিবে- মর্মে থানা থেকে বলার পর বিয়ে পড়িয়েছি।
শীলার আগের স্বামীর নাম রিপন। তারা রংপুর জেলার বাসিন্দা। ইতিপূর্বে তারা রাজীবদের গোলাকান্দাইল এলাকার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন এবং চ্যানেল পাড় এলাকার নান্নু টেক্সটাইল মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
এর আগে শুক্রবার (৩১ আগস্ট) ভোর ৬টার দিকে ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজিমউজ্জামান রাজীবকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে ফাঁড়িতে নিয়ে যান। শীলা আক্তারের গর্ভে রাজীবের দুই মাসের সন্তান রয়েছেন, এমন অভিযোগে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে কথিত এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা পরিচয়দানকারী ব্যক্তি রাজীবের পরিবার থেকে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না পেয়ে ফাঁড়ির ভেতর রাজীবকে আটক রেখে নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন তার মা-বাবা।
রাজীবের মা জানিয়েছিলেন, তার ছেলের সাথে একই টেক্সটাইল মিলে কাজ করতো শীলা ও তার স্বামী রিপন। এই সুবাদে তাদেরকে বাসা ভাড়া দেয়া হয়। কিন্তু শীলার আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় তাদেরকে বাসা ছাড়ার নোটিশ দিলে ঈদুল আজহার পূর্বে তারা বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) শীলার মা এসে দাবি করেন তার মেয়ের গর্ভে রাজীবের সন্তান। গর্ভপাত করানোর জন্য তিনি রাজীবের মায়ের কাছে টাকা দাবি করে ব্যর্থ হয়ে হুমকি দিয়ে চলে যান। এরপরই শুক্রবার সকালে পুলিশ এসে রাজীবকে ধরে নিয়ে যায়।
এদিকে রাজীবের বাবা মোমেন মিয়া জানান, ছেলেকে মারধর করছে। এ কারণে বিয়ে করতে সে রাজি হয়েছে। ছেলে আমার হাঁটতে পারে না। পা ফুইলা গেছে। আমরা এ নিয়া বাড়াবাড়ি করমু না। গরিব মানুষ পুলিশের লগে পারমু না।
অপরদিকে রূপগঞ্জ থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান চাপ প্রয়োগ করে বিয়ে দেয়ার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।
তিনি জানান, শীলার গর্ভে দুই মাসের যে সন্তান রয়েছে তা রাজীব নিজের বলে স্বীকার করেছেন এবং বিয়ে করতে রাজি হওয়ায় বিয়ে করিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বিয়েতে ছেলে ও মেয়ে পক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
শীলা আক্তারের স্বামী রয়েছে এরপরও তাকে বিয়ে দেয়াটা আইনগত সিদ্ধ কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘তাদের আগেই ডিভোর্স হয়েছে।’
তবে কতদিন আগে ডিভোর্স হয়েছে তা তিনি নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেননি।
এদিকে, বিয়ে রেজেস্ট্রি করা গোলাকান্দাইলের কাজী মাসুম জানান, ‘আমি ডিভোর্সের কাগজ না দেখে বিয়ে রেজেস্ট্রি করাতে রাজি হচ্ছিলাম না। পরে থানা থেকে বলা হয়েছে ডিভোর্স হয়েছে এবং আজ রবিবার ডিভোর্সের কাগজ তারা আমাকে পৌঁছে দেবেন। এই শর্তে বিয়ে পড়িয়েছি।’
তাহলে তালাকের কাগজ না দেখে, নিশ্চিত না হয়ে বিয়ে রেজেস্ট্রি কেন করালেন, এটা কি আইনসিদ্ধ, এমন প্রশ্নে কিছুটা কাচুমাচু করে তিনি বলেন, ‘না এটা আইনসিদ্ধ নয়, এভাবে বিয়ে করানোর নিয়মও নেই। কিন্তু তারা কিছুটা চাপ দিচ্ছিল। তাই বিয়েটা করাতে বাধ্য হয়েছি।’
এছাড়া তালাকের তিন মাসের আগে পুনরায় বিয়ে করা যায় না, শরিয়ত ও প্রচলিত আইনে এমনই বিধান রয়েছে। সেক্ষেত্রে তাদের তালাকের সময় যদি তিন মাস না হয় এবং তালাক যদি না হয় এবং আগের স্বামী যদি আইনের আশ্রয় নেন তাহলে আপনি কী করবেন, এমন প্রশ্ন করলে কাজী মাসুম কিছুটা ভীত হয়ে যান।
তিনি বলেন, ‘আমি বিয়ে বাতিল করতে পারবো। তবে আজ (শনিবার) রাতের মধ্যে বাতিল করতে হবে। সে ক্ষেত্রে রাতেই তাদের কাছ থেকে তালাকনামা চাইবো। যদি দেখাতে না পারে তাহলে বিয়ে বাতিল করে দিবো।’