কোটা সংস্কার আন্দোলন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরাতে উৎসাহিত করছে সরকার: রিজভী
বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে রক্তাক্ত করার বীরত্বে তাদেরকে একইভাবে আগামী নির্বাচনে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করতে সরকার নির্দেশ দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন,বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, এদেশে গণতন্ত্রের-জমি এখন সম্পূর্ণভাবে বেদখল। প্রধানমন্ত্রীর সাথে হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাদের উক্ত বৈঠক নতুন করে প্রতিবাদকারিদের রক্ত ঝরাতে তাদের আরও উৎসাহিত করা হবে। কিন্তু যতোই অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ণ ও জেল-জুলুম চলুক না কেন যৌক্তিক আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যায় না। জুলুম নির্যাতনের ধারা এভাবে চলতে থাকলে জনগণের ক্ষোভের চিতায় আত্মাহুতির দিকেই তাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৫জুলাই) নয়াপল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্টিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন,কোটা সংস্কার বিষয়ে প্রতারণা ছেড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে যৌক্তিক সমাধানের দিকে অগ্রসর হন। অবিলম্বে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ ক্যাডারদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে শিক্ষাঙ্গনের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন।
তিনি বলেন,প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে রাখতে পুলিশ ও দলীয় ক্যাডারদের নগ্নভাবে ব্যবহার করছে আর্ন্তজাতিক খেতাবপ্রাপ্ত স্বৈরাচারী সরকার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর থেকে অবৈধ সরকার জনআতঙ্কে ভূগছে। একমাত্র সরকার দলীয় কর্মকান্ড ছাড়া আর কাউকে সভা-সমাবেশ কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না সরকার। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়সহ দেশের সকল বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনকালে যেভাবে ছাত্রলীগ ও পুলিশের নির্যাতন ও নিপীড়ণের শিকার হচ্ছে, যেভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষক ও উদ্বিগ্ন অভিভাবকদেরকে পুলিশি তান্ডবের শিকার হতে হয়েছে, যেভাবে শহীদ মিনারে ছাত্রলীগের হাতে ছাত্রীরা লাঞ্ছিত হয়েছে-ছাত্রলীগের এসব তান্ডব লগি-বৈঠারই পূনরাবৃত্তি বলে দেশবাসী মনে করে। প্রতিবাদী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন-ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। এবারে অবৈধ ক্ষমতার বিবর্তনে ছাত্রলীগ ভয়াল প্রেতাত্মা হয়ে ভীষণ মূর্তি ধারণ করেছে।
তিনি আরো বলেন,শুধু ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় নয়, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আগ্রাসী থাবায় সারাদেশই এখন বধ্যভূমি। গুম, খুন, অপহরণ, বিচার বহির্ভূত হত্যা, গ্রেফতার, নির্যাতন ও দলীয় সন্ত্রাসীদের তান্ডবই হলো এখন শেখ হাসিনার টিকে থাকার অবলম্বন। গণমাধ্যমে প্রকাশ গুম ও গ্রেফতার আতঙ্কে আছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা ভয়ে ক্যাম্পাসে যেতে পারছেন না। অথচ গতকাল জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনা শিক্ষার উন্নয়নের আষাঢ়ে গল্পের যে লম্বা ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন-যেটির সাথে বাস্তবতা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ এই সরকার শিক্ষার কোন উন্নয়ন করেনি বরং শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, নকলের উন্নয়ন হয়েছে, প্রশ্নফাঁসের উন্নয়ন হয়েছে, প্রশ্নপত্রের উত্তর না লিখেও পরীক্ষা দিলেই পাশ করিয়ে দেয়ার উন্নয়ন হয়েছে, শিক্ষাঙ্গনগুলোতে মেধাবীদের স্থান না দিয়ে দলীয় ক্যাডার নিয়োগ দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে নিন্মগামী করার উন্নয়ন হয়েছে, ছাত্রলীগের হাতে ছাত্রী লাঞ্ছনার উন্নয়ন হয়েছে। চানক্য ও মেকিয়াভ্যেলির নীতিই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নীতি, তাঁর কাছে ন্যায়-অন্যায়-আইন-বিবেক ইত্যাদির কোন স্থান নেই। সকল শিক্ষাঙ্গনগুলোতে এখন ছাত্রলীগ ও পুলিশের তান্ডবে বিভিষিকাময় অবস্থা বিরাজ করছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, পরশু দিন পুলিশ প্রতিবাদকারিদের ঠেকাতে যেভাবে প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়েছিল তাতে মনে হয়েছে তারাই যেন মানববন্ধন করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে গতকালও প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করেছেন। সেখানে তিনি তাদেরকে কি সবক দিয়েছে তা আল্লাহ মাবুদই জানেন।
আজও দুই মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হয়নি। শেখ হাসিনার নির্দেশে সাজানো মিথ্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যাঙ্গারু আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়ে কারাগারে বন্দী রাখার পর এখন তাঁর সকল জামিনযোগ্য মামলায় বাধা দিচ্ছে সরকার। আইন, আদালত, বিচার ও প্রশাসনসহ সবকিছু করায়ত্ত করে আওয়ামী লীগ দম্ভে ও গর্বে আত্মস্ফীত হয়ে উঠেছে। ন্যায়বিচারকে তারা বিলীন করে এক জড়ীভূত পরিবেশ তৈরী করেছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দুরে রাখতে নতুন নতুন নীলনকশা আঁটছে সরকার। অশুভ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ আদালতকে সরাসরি ব্যবহার করছে বলেই জনগণ বিশ^াস করে। এজন্য বেগম খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে আরও নতুন নতুন গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে সরকার। একের পর এক বেগম খালেদা জিয়ার জামিনযোগ্য মামলায় জামিন না দেওয়া সরকারের মনোবাসনা পূরণেরই বর্ধিতপ্রকাশ।