বুধবার, ২০শে জুন, ২০১৮ ইং ৬ই আষাঢ়, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

গাজায় ঈদে মৃত্যুর কালো ছায়া

ডেস্ক রিপোর্ট : মধ্যপ্রাচ্যে ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপন হচ্ছে আজ শুক্রবার। বাদ নেই ফিলিস্তিনও। এই ঈদ ফিলিস্তিন তথা গাজাবাসীর কাছে কতটা আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছে? প্রশ্নটি সংগত। কারণ গত কিছুদিনে গাজা সীমান্তে অবরোধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানাতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছে অন্তত ১২৫ জন। তাই দীর্ঘ এক মাস সংযম পালনের পর আসা ঈদ ফিলিস্তিনিদের কাছে যতটা এসেছে আনন্দের উপলক্ষ হয়ে, তার চেয়েও বেশি করে এসেছে প্রিয়জনহীন উৎসবের মর্মবেদনা নিয়ে।
বছরের পর বছর ধরে অবরোধের মধ্যে থাকা গাজাবাসী আর্থিক সংকট ও ইসরায়েলি গুলিকে সত্য মেনেই ঈদ উদ্‌যাপন করে আসছে। এ নতুন কিছু নয়। নতুন যা, তা হলো ঈদের আগ মুহূর্তে মাত্র অল্প কয়েক দিনে শতাধিক মানুষের মৃত্যু।
রয়টার্সের তথ্যমতে, টানা অবরোধ, সংঘাত ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে গাজার অর্থনীতি এমনিতেই ভঙ্গুর। হামাস নিয়ন্ত্রিত ২০ লাখ মানুষের এই জনপদে বেকারত্বের হার প্রায় ৫০ শতাংশ। কিন্তু এসবই এবার ঢাকা পড়েছে। গাজাবাসীর এবারের ঈদ ঢাকা পড়েছে শত মানুষের মৃত্যুর কালো ছায়ায়।
গত ৭ জুন ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে ১৫ বছর বয়সী হাইতাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আসা ঈদ তাই তার মা ওরুদ আল-জামালের কাছে অর্থহীনতারই নামান্তর। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘এটা আমার জীবনের কঠিনতম ঈদ।’

আরও : সন্তানের নাম রাখা নিয়ে ভোটাভুটি

ঈদ সামনে রেখে মৃত্যুর মাত্র দুদিন আগে এক জোড়া জিনস প্যান্ট, জুতো ও একটি টি-শার্ট কিনেছিল হাইতাম। সেগুলো হাতে নিয়ে এখন বাকরুদ্ধ হয়ে বসে থাকেন তার মা। রয়টার্সের প্রতিবেদককে সেগুলো দেখিয়ে মুখে আর কিছু বলতে পারলেন না তিনি।
এ শুধু হাইতামের পরিবারের গল্প নয়। গাজার বহু পরিবারেরই ঈদের দিনের চিত্র ছিল এটি। শোক ও নৈরাশ্য তাদের ভুলিয়ে দিয়েছে ঈদ; ভুলিয়ে দিয়েছে নিত্য দারিদ্র্যকে।
গাজাবাসীর দারিদ্র্যকে বুঝতে হলে তাকাতে হবে ওমর আল-বায়ুকের দোকানের দিকে। পুরো মাস নানা রকম পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসে ছিলেন তিনি। কিন্তু কোনো ক্রেতা ছিল না। ফলে তাঁর ঈদও এসেছে নিরানন্দ হয়ে। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি খুবই খারাপ। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা একেবারে দুর্বল। অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় এবার বিক্রি অনেক কম হয়েছে।’
তারপরও ঈদ আসে। গাজার মানুষ ঈদের জামাতে ঠিকই যোগ দিয়েছে। কেউ কেউ নতুন কাপড়ও পরেছে। মৃত্যুর কালো ছায়াকে ভ্রুকুটি দেখিয়ে উৎসব আসে তার নিজের শক্তি নিয়ে। শোকের জীবনে আসে শুভাকাঙ্ক্ষীদের সমবেদনাভরা কণ্ঠের শুশ্রূষা। আসে অনির্বাণ হাসি। গাজার নুসিরাত শরণার্থীশিবিরের আবদেল-রহমান নফেলের মুখে যেমনটা লেগে আছে। ১৫ বছরের এই শিশুকে ঈদে নতুন পোশাক কিনে দিয়েছিল তার বাবা। সঙ্গে এক জোড়া জুতাও। কিন্তু সে এবার একটি জুতাই পরবে। আরেকটি তবে কী করবে সে?
নফেলের ভাষায়, ‘এক জোড়া জুতা কিনেছিলাম আমি, ঈদে পরব বলে। কিন্তু আমি শুধু একটিই পরতে পারব। আরেকটি রেখে দেব ঘরে।’
এখনো কারণটি বোঝা গেল না। গাজা সীমান্তে বিক্ষোভ করতে গিয়ে বাঁ পায়ে লেগেছিল ইসরায়েলি সেনাদের ছোড়া গুলি। কেটে ফেলতে হয়েছে তার ওই পা।
সূত্র : প্রথম আলো

Print Friendly, PDF & Email

এ জাতীয় আরও খবর

সন্তানের নাম রাখা নিয়ে ভোটাভুটি

তীব্র সমালোচনার পরও অনড় ট্রাম্প

পাকিস্তানের নির্বাচনে ইমরান-আব্বাসি-মোশাররফের মনোনয়নপত্র বাতিল

ইরাকে ৩০ জনকে অপহরণ করেছে আইএস

বিশ্বের ১০০ কোটি বন্দুকের ৮৫ শতাংশই সাধারণ মানুষের হাতে!

হাউজে কাউসার কিসের উপর অবস্থিত ?