ঈদ হোক সম্প্রীতিময়
দুয়ারে কড়া নাড়ছে ঈদুল ফিতর। সমাগত মুসলিম উম্মাহর উৎসবের দিন। বাঁধভাঙা আনন্দ প্রকাশের দিন। পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের দিন। প্রায় সাড়ে ১৪শ’ বছর পূর্ব নবি মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে যখন মদিনায় এলেন, দেখলেন- মদিনাবাসী বছরে দু’দিন আনন্দ-উৎসব করে। সেই উৎসব সম্পর্কে নবিজি (সা.) জানতে চাইলে তারা বলেছিল, জাহেলি যুগ থেকে আমরা এ দু’দিন উৎসব পালন করে আসছি। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে এই দু’দিনের বদলে উৎসবের জন্য আরও উত্তম দু’দিন দিয়েছেন। সে দু’দিন হলো- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।’ (আবু দাউদ : ১/১৬১)
ইসলামের শিক্ষা হলো- ঈদে নিজে আনন্দ কর, গরিবকেও করার সুযোগ করে দাও। নিজে ভালো পোশাক পরিধান করো, অসহায়কেও পরার সুযোগ করে দাও। নিজে ভালো খাবার খাও, প্রতিবেশীকেও খাওয়ার ব্যবস্থা করে দাও।
অথচ আমাদের সমাজে লক্ষ করা যায় বিপরীত চিত্র। ঈদ যেন কেবল বিত্তবানদের জন্যই আসে! ঈদের দিন বড়লোকের চোখেমুখে যেরকম আনন্দের ঝিলিক থাকে; গরিবের চেহারায় তা ফুটে উঠে না। ধনীরা নতুন দামি জামা পরে যেভাবে ঘুরে বেড়ায়, গরিবরা তা ছুঁয়েও দেখতে পারে না। এমনটি কখনই কাম্য নয়।
আরও : সন্তানের নাম রাখা নিয়ে ভোটাভুটি
ধনী-গরিবের এমন বৈষম্য ঘোচাতে ইসলাম কিছু বিধান জারি করে রেখেছে। নির্দেশ দিয়েছে- ধনীরা যেন সম্পদের জাকাত দেয়। ঈদের নামাজের আগেই যেন সদকাতুল ফিতর আদায় করে। এসব গরিবের হক। গরিবও যেন ঈদে নতুন জামা কিনতে পারে। ভালো খাবার খেতে পারে। অপার্থিব আনন্দের সঙ্গে একটি দিন কাটাতে পারে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের (সম্পদশালীদের) ধনসম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতের হক।’ (সুরা আল-জারিয়াত : ১৯)
হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সদকায়ে ফিতর নির্ধারণ করেছেন রোজাকে অনর্থক কথা ও অশ্লীল ব্যবহার থেকে পবিত্র করার এবং গরিবদের মুখে অন্ন তুলে দেওয়া জন্যে। (আবু দাউদ : ১৬১১)
ঈদে অপেক্ষাকৃত গরিব আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। তাদের হক আদায় করতে হবে। তারাও যেন উৎসব পালনে শামিল হতে পারে। কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘তোমরা ইবাদত কর আল্লাহর, তার সাথে কোনো কিছুকে শরিক করো না। আর সদ্ব্যবহার কর মাতা-পিতার সাথে, নিকট আত্মীয়ের সাথে, এতিম-মিসকিন, প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদেরকে, যারা দাম্ভিক, অহঙ্কারী।’ (সুরা নিসা : ৩৬)
অতএব আসুন, ঈদের আগে আগেই গরিবদের মাঝে আমাদের জাকাত, ফেতরা সঠিকভাবে পৌঁছে দিয়ে তাদের ঈদকেও আনন্দময় করে তুলি। যাদের জন্য জাকাত বা ফিতরা দেওয়া ফরজ নয়; তারাও দান-সদকার হাত প্রসারিত করতে পারি। অন্তত একটি গরিব পরিবার বা একজন অসহায় মানুষের ঈদ আনন্দের দায়িত্ব নিতে পারি আমি। তবেই না দূর হবে ধনী-গরিবের বৈষম্য। ঈদ হবে সম্প্র্রীতিময়। সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে অপার্থিব আনন্দ।