বৃহস্পতিবার, ৮ই মার্চ, ২০১৮ ইং ২৪শে ফাল্গুন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

এগিয়ে যাচ্ছে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর পারমাণবিক যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। গত ১ ডিসেম্বর পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখান থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার।

ইতোমধ্যে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দক্ষিণের দুই জেলার তিনটি স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করেছে সংশ্লিষ্ট কমিটি। এ তিন স্থানের যেকোনো একটিতেই হতে পারে দেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এ সংক্রান্ত স্টিয়ারিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান নির্বাচনের সমীক্ষা প্রকল্প অর্থাৎ দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অগ্রগতি বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক জানান, প্রাথমিকভাবে শনাক্তকৃত পটুয়াখালী জেলার গলাচিপার পক্ষিয়ার চর, বরগুনা জেলার তালতলীর খোট্টর চর ও তালতলীর নিদ্রার চর এই তিনটি স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে।

পরিদর্শনকালে জানা যায়, পক্ষিয়ার চরের ৪৭৫ একর জমি ‘রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড’ কর্তৃক বরাদ্দ নেয়া ও জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। পক্ষিয়ার চরটি বরাদ্দ দেয়া হলেও এর পার্শ্ববর্তী ‘চর কারফরমা’ ও ‘বোয়ালিয়ার চর’ এ এক ফসলি, খাস ও ব্যক্তি মালিকানাধীন আরও আনুমানিক ১ হাজার একর জমি রয়েছে। খোট্টার চরের ১০০ একর জমি কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট তৈরির জন্য ইতোমধ্যে আইএসও টেক ইলেকট্রিফিকেশন কোম্পানি লিমিডেটকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে ওই চরটিসহ পার্শ্ববর্তী ‘অংকুরজান পাড়া’ এলাকায় আনুমানিক ১ হাজার ৫০০ একর এক ফসলি, খাস ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি রয়েছে। নিদ্রার চরের প্রায় ২৬০ একর জমি বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে শিপইয়ার্ড তৈরির জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে চরটিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকল্পে আনুমানিক আরও ২ হাজার একর এক ফসলি, খাস ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি রয়েছে।

সভায় আলোচ্য প্রকল্পে পরামর্শক সেবা গ্রহণের মাধ্যমে ডাটা সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ‘রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্পের পরিচালক জানান, এ পর্যায়ে প্রকল্পে কোন ব্যক্তি পরামর্শক প্রয়োজন হবে না। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাসমূহের হাইড্রোজিওলজিক্যাল, সিসমোলজিক্যাল, জিওলজিক্যাল, জিওটেকটোনিক, বন্যা ও সুনামি, মেটেরোলজিক্যাল বিষয়গুলো ছাড়াও পরিবেশ দূষণ, মানব সৃষ্ট বিভিন্ন ঘটনার বিষয়ে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ডাটা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তাদের মূল্য প্রদান করার প্রয়োজন হতে পারে।

সভায় জানানো হয়, ‘বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান নির্বাচনের সমীক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্পটি সম্প্রতি অনুমোদিত নতুন প্রকল্প। বাস্তবায়নকাল জুন ২০১৭ থেকে জুন ২০১৯ পর্যন্ত। এ প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হলো দেশে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রাথমিকভাবে সাইট চিহ্নিতকরণে সাইট সার্ভে ও সাইট নির্বাচন পর্যায়ের কার্যক্রম সম্পাদন করা।

এ বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজগুলো চলছে। তবে এখন বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিষয়ে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ সম্পন্ন হলে দ্বিতীয়টির বিষয়ে জোরালোভাবে কাজ করা হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল নির্মাণকাজ শুরুর মধ্য দিয়ে বিশ্ব পরমাণু ক্লাবে ৩২তম সদস্য হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ছাড়া আরও কয়েকটি দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলছে। এর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বেলারুশ। দেশটির প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হবে ২০১৮ সালে। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, তুরস্ক ও মিসরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে ২০২২ সালে। ২০১৩ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের দুটি ইউনিট থেকে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। প্রকল্পের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পাঁচ স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনকালীন কোনো ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি নেই বললেই চলে। এছাড়া রয়েছে রুশ প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এরপরও যদি অনাকাঙ্খিত কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, এর তেজস্ক্রিয় পদার্থ জনগণের সংস্পর্শে যাবে না।

এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। ঋণ হিসেবে রাশিয়া দিচ্ছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। বাকিটা দিচ্ছে বাংলাদেশ।

Print Friendly, PDF & Email