বিশ্বব্যাংকের প্রেতাত্মারা অর্থ মন্ত্রণালয়ে বসে আছে : পাট প্রতিমন্ত্রী
পাট খাত নিয়ে এখনও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করছে সরকার। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংকের প্রেতাত্মারা (ভূত) অর্থ মন্ত্রণালয়ে বসে আছে। তারা পাটের কোনো ফাইল দেখলেই গতি কমিয়ে দেয়। অর্থমন্ত্রীও এ খাতের ব্যাপারে বিরূপ। পাটের কোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তিনি মনোযোগ দেন না।
সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত সেমিনারে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এসব কথা বলেন।
তার মতে, দীর্ঘদিন পর্যন্ত একটি ইস্যু নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি হচ্ছে। এসব চিঠি মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হবে।
ইআরএফের সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফয়জুর রহমান চৌধুরী, কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ, বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) চেয়ারম্যান ড. মো. মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এএফপির ব্যুরো চিফ শফিকুল আলম।
মির্জা আজম বলেন, দেশের পাট খাত ধ্বংসের জন্য বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্র ছিল। তাদের পরামর্শেই সরকারি পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয়। বিশ্ব ব্যাংকের ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে মির্জা আজম বলেন, প্রতিষ্ঠানটির পরামর্শেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাটকল আদমজী জুট মিল ২০০২ সালে খালেদা জিয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তখন মিল বন্ধ করতে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সরকারকে অর্থ সহায়তা দিয়েছে। ওই অর্থ দিয়ে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু একই সময়ে পার্শ্ববর্তী ভারত সরকারকে নতুন পাট মিল চালু করতে অর্থ সহায়তা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
তারমতে, আদমজী জুট মিল হতে আড়াই লাখ বেল (১ বেলে ১৮০ কেজি) পাট পণ্য রফতানি হতো। এটাই ছিল বিশ্বব্যাংকের চক্রান্ত। বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের প্রেতাত্মারা অর্থ মন্ত্রণালয়ে বসে আছে।
তিনি বলেন, ‘আমি মন্ত্রী হয়েও টেবিলে টেবিলে ঘুরে বেড়াই কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাটের ফাইল ছাড় হয় না’।
তিনি বলেন, স্বয়ং অর্থমন্ত্রী পাট খাতের ব্যাপারে বিরূপ। এ খাতের কোনো ফাইল গেলে তিনি মনোযোগ দিতে চান না। মন্ত্রীর কারণে ওই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও কাজ করতে চায় না। কর্মকর্তারা অন্যান্য কাজ স্বাভাবিকভাবে করেন। কিন্তু পাটের ফাইল গেলেই গতি কমে আসে। নানাভাবে জটিলতা সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, যখন পাটের দাম কম থাকে, তখন অর্থ ছাড় করে না। আর দেরিতে অর্থছাড় করায় প্রতিবছর প্রায় ৮০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়। এর কারণ অর্থ মন্ত্রণালয় বিশ্বব্যাংকের প্রেতাত্মা বসে আসে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য দুই বছর পর্যন্ত চিঠি চালাচালি হচ্ছে। এসব চিঠিগুলো মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীকে দেখানো হবে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর বন্ধ মিল চালু করেছে শেখ হাসিনা সরকার। এ সময়ে ৬টি পণ্যে পাটমোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। এরপরই পাটের অগ্রগতি শুরু। তবে অগ্রগতির পথে ধাক্কা কম আসেনি। ২০১৪ সালে হঠাৎ করে ভারত রফতানিকৃত কাঁচা পাটে বিধিনিষেধ জারি করে। এরপর এন্ট্রি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা হয়। কিন্তু তেমন ক্ষতি করতে পারেনি। এ সময়ে দেশের বাজারে চাহিদা বাড়াতে আরও কয়েকটি পণ্যে পাটের মোড়ক বাধ্যতামূলক করা হয়। বর্তমানে ১৭টি পণ্যে পাটের মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
তিনি বলেন, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। গত তিন বছরে পাটের অগ্রগতি হয়েছে। ২০১৫ সালে কাঁচা পাট উৎপাদিত হয়েছে ৬৮ লাখ বেল, ২০১৭ সালে কাঁচা পাট উৎপাদিত হয়েছে ৮৫ লাখ বেল। বর্তমানে তা বেড়ে ৯১ লাখ বেলে উন্নীত হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা পাটজাত পণ্যের বহুমুখীকরণে কাজ করছি। গত বছর পাটের পণ্যের বহুমুখীকরণের তালিকা পেয়েছিলাম ১৩৫টি, সেখানে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে সেটা ২৪০ এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, পাটকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কারণে পাটের বহুমুখী পণ্যের রফতানির উপর ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। বিজেএমসির লোকসান প্রসঙ্গে গণমাধ্যমের সমালোচনার জবাবে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে যে লোকসান হয়, তা যৌক্তিক। কারণ বর্তমানে এখানে ৬০ হাজার শ্রমিক রয়েছে। আর সরকারি ও বেসরকারি খাতের শ্রমিকদের মজুরির মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। মজুরি খাতে প্রতিবছর ৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে।
দেশে পাটের বীজ উৎপাদিত হচ্ছে না বলেই ভারত থেকে বীজ আনতে হচ্ছে। আর ভারত যে বীজ বাংলাদেশে রফতানি করে, তা ওই দেশের সবচেয়ে নিম্নমানের।
তিনি বলেন, পাটখাতে যেসব মেশিন রয়েছে, তা ৬০ বছর আগে কেনা। ফলে এই মেশিন দিয়ে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব নয়।
তারমতে, গার্মেন্টস পণ্য বিদেশে রফতানি করে অনেক টাকা আয় করলেও বাংলাদেশ গার্মেন্টস খাত শুধু দর্জির কাজ করে। বাকি সব পণ্য দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু পাটের কাঁচামালসহ সবকিছু দেশেই উৎপাদিত হয়। এতে রফতানি আয়ের পুরোটাই দেশে থাকে।