সোমবার, ৫ই মার্চ, ২০১৮ ইং ২১শে ফাল্গুন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

ত্রিপুরায় ২৫ বছরের বাম দুর্গের পতন

সকালে ফলাফল ঘোষণা শুরুর কিছু সময় পর পর্যন্তও বিজেপির সঙ্গে পাল্লা দিয়েই এগোচ্ছিল ২০ বছর ধরে ত্রিপুরা রাজ্যের ক্ষমতায় থাকা মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্পষ্ট হতে থাকে ২৫ বছরের বাম শাসনামলের অবসানের আভাস। ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত ফলাফল থেকে জানা যাচ্ছে, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিতে যে কয়টি আসন দরকার, তারচেয়েও বেশি সংখ্যক আসনে এগিয়ে আছে বিজেপি। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম বাম শাসনের অবসান হয়। তারপরও এতদিন ত্রিপুরার ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন মানিক সরকার। এবার সেই শাসনের অবসান হতে যাচ্ছে।

ত্রিপুরা বিধানসভায় মোট আসন ৬০টি। এরমধ্যে ৫৯টিতে নির্বাচন হয়েছে। একটি কেন্দ্রে বামফ্রন্ট প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। সেটিতে পরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজ সকাল থেকে ৫৯টি আসনের ভোট গণনাই শুরু হয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর অনুযায়ী, রাজ্যের ৬০ আসনের মধ্যে বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত ৪২ আসনের নিয়ন্ত্রণ বিজেপির হাতে। সিপিএম ১৬টিতে আর অন্যরা ১টিতে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, সকাল থেকেই আগরতলায় ভিড় জমিয়েছেন শাসক বামফ্রন্ট ও চ্যালেঞ্জার বিজেপির সমর্থকরা। তবে জমায়েতের বহরে বিজেপি অনেকটাই এগিয়ে। স্থানীয় বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা তো বটেই, বিভিন্ন জেলা থেকে, বিশেষত উপজাতি অঞ্চল থেকে বহু বিজেপি কর্মী-সমর্থক আজ আগরতলায় জড়ো হয়েছেন। আরএমএস চৌমোহনি থেকে আইজিএম চৌমোহনি পর্যন্ত এলাকা বিজেপি সমর্থকদের বিপুল জমায়েতে প্রায় অবরুদ্ধ। গোলমাল রুখতে অবশ্য পুলিশি বন্দোবস্তও কড়া। ব্যারিকেড দিয়ে সম্পূর্ণ আলাদা করে দেওয়া হয়েছে বাম ও বিজেপির জমায়েতকে।

ত্রিপুরায় বাম ফ্রন্ট প্রথম ক্ষমতায় আসে ১৯৭৭ সালে। ১৯৮৩ সালের নির্বাচনেও জয় ধরে রেখেছিল তারা। ১৯৮৮ সালে কংগ্রেস-টিইউজেএস জোটের কাছে হারলেও পরের ভোটেই (১৯৯৩ সালে) ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে বাম ফ্রন্ট। তারপর টানা চারবার ক্ষমতায় মানিক সরকার। গতবারও জিতেছিল ৬০টির মধ্যে ৫০টি আসন। টানা ৩৪ বছর শাসনের পর ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বাম শাসনের অবসান ঘটলেও মানিকের নেতৃত্বে ত্রিপুরায় দুর্গ আগলে রাখছিল তারা। এখন তাও হারাতে হলো।

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্যটিতে মানিক সরকারের নেতৃত্বেই বিজেপির কাছে পরাজিত হয়ে ক্ষমতা হারাতে হচ্ছে সিপিএমকে। অবশ্য এই নির্বাচনে জিততে সর্বশক্তি নিয়োগ করে হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি। ত্রিপুরার নির্বাচনি প্রচারণায় বিপুল সময় দিয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। প্রতিবেশী রাজ্য আসামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে আসা নেতা হেমন্ত শর্মা দীর্ঘ সময় দিয়েছেন।

ইন্ডিয়া টুডে বাম সরকারের এই পতনের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানিয়েছে, বেকারত্বের হারে ভারতের এগিয়ে থাকা রাজ্যগুলোর অন্যতম ত্রিপুরা। শ্রম দফতরের ২০১৫-১৬ সালের জরিপে রাজ্যের বেকারত্বের হার ১৯.৭ ।

Print Friendly, PDF & Email