ক্র্যাশ ডায়েটে হার্টের ক্ষতি
প্রত্যেকেই ওজন কমিয়ে নিজের শরীরকে ফিট দেখতে চায়। অনেকে এটিকে খুব দ্রুত অর্জন করতে চায়। আর এ জন্য বেছে নেয় ক্র্যাশ ডায়েট বা দ্রুত ওজন কমানোর পদ্ধতি। তবে গবেষকরা বলেন, ক্র্যাশ ডায়েটের মাধ্যমে শরীরে চর্বি ঝড়ালে হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি হয় এবং হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমে যায়।
স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়েবএমডিতে প্রকাশ হয়েছে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন।
গবেষণাটির প্রধান ড. জেনিফার রায়নার জানান, তবে ভালো খবর হলো এই প্রভাব স্বল্পকালস্থায়ী। আর স্বাস্থ্যকর ব্যক্তিরা হয়তো শরীরে কখনো কোনো রোগ চাইবে না।
এদিকে গবেষণায় আরো বলা হয়, যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে চর্বির এই স্থানান্তর উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
গবেষক রায়নার বলেন, ‘ওজন কমানোর অনেক স্বাস্থ্যকর দিক রয়েছে। তবে যাদের হার্টের অসুখ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের ডায়েট কতটুকু নিরাপদ, তা নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।’
গবেষকরা বলেন, ‘খুব অল্প ক্যালরির ডায়েট, প্রায় ৬০০ থেকে ৮০০ ক্যালরি প্রতিদিন, ওজন কমানোর কার্যকরী পদ্ধতি। এটি দ্রুত লিভারের চর্বি কমাতে কাজ করে এবং ডায়াবেটিস কমায়।’
গবেষণাটিতে গবেষকরা ২১ জন স্থূল লোকের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে দেন। তাঁদের বয়স ছিল ৫২-এর মধ্যে। গবেষকরা তাঁদের খাদ্যতালিকায় মিল্কসেক ও স্যুপ দেন।
প্রতিদিন আটশ বা তার থেকে একটু বেশি ক্যালরি দেওয়া হয় প্রতিদিনের খাবারে। এভাবে আট সপ্তাহ দেখা হয়।
এক সপ্তাহ পর দেখা যায়, পেটের মেদ ও লিভারের মেদ যথাক্রমে ৬ শতাংশ, ১১ শতাংশ, ৪২ শতাংশে নেমে এসেছে। ইনসুলিন রেসিসটেন্ট ও ব্লাড সুগারের মাত্রার উন্নতি হয়েছে। ব্লাডপ্রেশারেও উন্নতি এসেছে।
সাধারণত অন্যান্য মাত্রা যখন ভালো, হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যও ভালো থাকার কথা। তবে এখানে এ ঘটনা ঘটেনি। এক সপ্তাহের ডায়েটের পর হৃৎপিণ্ডের চর্বি ৪৪ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। এবং গবেষকরা দেখেন হার্টের কার্যক্রম কমে যাচ্ছে।
রায়নারের দল দেখেন, হঠাৎ করে ক্যালরির কমে যাওয়ার কারণে চর্বি রক্তের মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য জায়গায় চলে যায়। এটি হার্টের পেশিতে জমা হয়।
তবে এই নেতিবাচক প্রভাব স্থায়ী নয়। আট সপ্তাহ পর দেখা যায়, হার্টের কার্যক্রম ও হার্টের চর্বি স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে। শরীরের চর্বি, কোলেস্টেরল ও অন্যান্য বিপাক ক্ষমতার উন্নতি হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিায়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিভেনটিভ কার্ডিওলজির কো-ডিরেক্টর ড. জর্জ ফ্যানোরো বলেন, ‘গবেষণাটিতে ক্র্যাশ ডায়েটে হার্টের ক্ষতির কথা জানানো হয়েছে। তবে বিষয়টি কীভাবে ঘটে, সেটি ভালোভাবে বলা হয়নি। স্বাস্থ্যকর লোকের জন্য চিন্তার তেমন কিছু নেই। তবে যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে, তাদের ডায়েটে কোনো পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।’
গবেষণাটি প্রকাশিত হয় স্পেনের বার্সেলোনায় ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলজির মিটিংয়ে।