আলোচনায় ছিল যে বিচ্ছেদগুলো
বিনোদন প্রতিবেদক : মনের অমিল কিংবা জীবনের হিসাব-নিকাশ না মেলার মতো অনেক কারণেই প্রিয়জনের সঙ্গে বিচ্ছেদের সুর বাজে। বিচ্ছেদ এবং ডিভোর্স সব জায়গায় হলেও আলোচনায় আসে কেবল তারকা সেলিব্রেটিদের। বিশেষ করে শোবিজ তারকাদেরটাই আগে চোখে পড়ে।
গণমাধ্যমগুলোও নানা রঙ মাখিয়ে সে খবর প্রকাশ করে। কারণ ভক্তরা প্রিয় তারকাদের এমন খবর জানার আগ্রহ দেখায়। তারকাদের বিয়ে বিচ্ছেদ নতুন কিছু নয়। আগেও হয়েছে, হচ্ছে এখনও। কিন্তু গত কয়েক বছরে এর মাত্রা কেবল বেড়েই চলেছে। আর ২০১৭-তে সেটা দাঁড়িয়েছে অবাক করা সংখ্যায়।
কিন্তু কেন? উত্তর চোখ বন্ধ করে দিতে পারবে প্রায় সবাই। বিচ্ছেদের খবর এখন পাঠকদের মাঝে এত পরিমাণ আসে যে, এখন তারকাদের বিচ্ছেদের খবর শুনতে শুনতে সাধারণ মানুষের কাছেও বিষয়টি সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তারকাদের ঘনঘন এ বিচ্ছেদের খবরে মিডিয়ার মানুষ সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণাও তৈরি হয়েছে। ফলে ইমেজ সংকটে পড়েছে পুরো শোবিজ অঙ্গন। কদিন পর পরই তারকাদের বিচ্ছেদ কিংবা সংসার ভাঙার খবর শুনতে মানুষও এখন বেশ অভ্যস্ত।
২০১৭ সালটি শুরুই হয়েছে ডিভোর্স দিয়ে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কণ্ঠশিল্পী হাবিব ওয়াহিদের ডিভোর্স দিয়ে শুরু হয় নতুন ট্রেন্ড। জানুয়ারিতে হাবিব ওয়াহিদের সঙ্গে তার স্ত্রী রেহানের বিচ্ছেদ ঘটে। বিচ্ছেদের সময় উভয়ের সম্মতিতেই কোনো কারণ না বলে ডিভোর্সের ঘোষণা দিলেও মাস-খানেক যেতে না যেতেই মুখ খোলেন রেহান।
জানান, তানজিন তিশার সঙ্গে হাবিবের সম্পর্কের জের ধরেই বিচ্ছেদের এই ঘটনা ঘটেছে। তবে তিশা বরাবরই এটি অস্বীকার করে আসছেন। আর হাবিব এ বিষয়ে থেকেছেন নীরব। তবে হাবিবের সঙ্গে তিশার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে- এটা এখন শোবিজের সবাই জানেন। পাঁচ বছরের সংসার ছিল তাদের।
তাদের ঘরে ফুটফুটে এক সন্তানও রয়েছে। তবে বছরের সবচেয়ে আলোচিত ডিভোর্স হচ্ছে তাহসান-মিথিলার। ভক্তদের অনেকে এখনও বিশ্বাস করতে পারেন না যে, এ তারকা জুটিরও ডিভোর্স হয়েছে। কারণ পর্দায় তাদের ভাবমূর্তি দর্শকরা সবসময় রোমান্টিক কাপল হিসেবেই দেখেছেন।
১১টি বছর পার করেছিলেন একসঙ্গে। আয়রা নামের একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে তাদের। কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় তাহসান ও মিথিলা দুজনই তাদের ডিভোর্সের বিয়ষটি মিডিয়াকে জানান। তাহসান ও মিথিলা ভক্তরা তাদের বিচ্ছেদের খবরে ফেসবুকে গ্রুপ খোলেন ‘তাহসান-মিথিলার ডিভোর্স চাই না’ শিরোনামে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদের বিষয়টি পাকাপাকি হয় তাদের। ভক্তরা ভেঙে পড়লেও এ তারকাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন তারা। শোবিজের আলোচিত জুটি ছিলেন নিলয় আলমগীর ও আনিকা কবির শখ। মডেলিং করতে গিয়ে শখ ও নিলয়ের পরিচয়।
মোবাইল অপারেটর কোম্পানি বাংলালিংকের একটি বিজ্ঞাপনে অংশ নেন এই জুটি। এই বিজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী বেশ পরিচিতিও পেয়ে যান তারা। সেই থেকেই একে অপরকে ভালো লাগা। গত কয়েক বছর ধরেই মিডিয়ার আলোচিত ছিল তাদের প্রেম।
মান-অভিমানে তাদের সম্পর্ক ভেঙেও গিয়েছিল। আবার জোড়াও লাগে। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। কিন্তু স্থায়িত্ব পেল না। চলতি বছর ডিভোর্স হয় তাদের। কারও প্রতি কারও অভিযোগের কথা জানালেও উভয়ের প্রতি উভয়ের যে পাহাড়সম অভিযোগ রয়েছে তা টের পাওয়া যায় তাদের মন্তব্য শুনলেই।
এরপর সংসার ভাঙে মডেল-অভিনেত্রী অর্চিতা স্পর্শিয়ার। সাবেক প্রেমিকের সঙ্গে ব্রেকআপ হওয়ার পর এক প্রকার জিদের বশেই রাফসান আহমেদ নামের তরুণ এক নির্মাতার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু রাফসান একেবারে বেকার।
আরও অনেক অভিযোগই রয়েছে তার মধ্যে। তাই বাধ্য হয়ে আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদে চলে যান। দেড় বছর প্রেম করে ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর বিয়ে করেছিলেন জনপ্রিয় নাট্য নির্মাতা মোহন খান ও অভিনেত্রী নোভা। ছয় বছর সংসার করার পর চলতি বছর ২৬ আগস্ট ঢাকা জজকোর্ট কাজী অফিসে তারা পরস্পরকে ডিভোর্স দেন। পারিবারিক সম্মতিতেই ডিভোর্স হয় তাদের।
ডিভোর্স প্রসঙ্গে নোভা বলেন, ‘কিছু সমস্যা তো ছিলই। আমাদের ছেলে সান্নিধ্য বড় হচ্ছে। আমি চাইনি এ সমস্যাগুলো সান্নিধ্যকে স্পর্শ করুক। বাবার প্রতি ওর শ্রদ্ধা যেন এতটুকু নষ্ট না হয়। তাই সময় থাকতেই আমরা আলোচনা করে দূরে সরে গেছি।’
সেপ্টেম্বর মাসে পপ গায়িকা মিলার ডিভোর্স হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সে সময় এ খবরকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন তিনি। অবশেষে সেই গুজবই সত্যি হলো। ৬ অক্টোবর দিবাগত রাত ৩টার দিকে মিলা তার ফেসবুক ভেরিফায়েড ফ্যান পেজে ডিভোর্সের বিষয়টি জানিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন।
মিলা ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘হ্যাঁ, আমি ডিভোর্স দিয়েছি। পারভেজ সানজার সঙ্গে ১০ বছর প্রেম করার পর বিয়ে করেছিলাম; কিন্তু বিয়ের মাত্র ১৩ দিনের মাথায় জানতে পারি আমার স্বামী একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িত। আমার স্বামী ক্রমাগত আমার সাথে প্রতারণা করতে থাকে। বিয়ের আগে যখন আমরা ডেটিং করতাম তখনও একাধিক নারীর সঙ্গে প্রেম করে আমার সঙ্গে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছিল সে। এমন প্রতারকের সঙ্গে বসবাস করা অসম্ভব।’
বছরের একেবারে শেষের দিকে এসে শোবিজে আলোচনার মাঠ গরম করলেন শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের ডিভোর্স। বেশ কিছুদিন ধরেই মিডিয়ায় গুঞ্জন ভাসছিল শাকিব-অপুর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটছে। বিশেষ সূত্রের বরাতে খবরও প্রকাশ করে গণমাধ্যম।
শেষ পর্যন্ত এটি আর গুঞ্জন হিসেবে থাকেনি।
অপু বিশ্বাসকে ডিভোর্সের চিঠি পাঠিয়েছেন শাকিব খান। তবে অপু বিশ্বাস এখনও এ ডিভোর্স মেনে নেননি। শাকিব খান এখন ছবির শুটিংয়ে ভারতে রয়েছেন। দেশে এলে আলোচনার মাধ্যমেই বিষয়টির সুরাহা করবেন বলে জানিয়েছেন অপু।
তবে তাদের সংসার যে আর হচ্ছে না এটি নিশ্চিত। এতে করে এ জুটির ৯ বছরের দাম্পত্য সম্পর্কের ইতি ঘটল। ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই দুজনে বিষয়টি গোপন রাখেন। এভাবেই আট বছর কেটে যায়।
অবশেষে চলতি বছর ১০ এপ্রিল হঠাৎ করেই শিশু সন্তান আব্রামকে নিয়ে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের লাইভে এসে অপু বিয়ে এবং সন্তানের বিষয়টি ফাঁস করে দেন। অপ্রকাশ্যে আট বছর সংসার করলেও প্রকাশ্যে এক বছরও টিকল না তাদের সংসার।
তবে খবরে গণমাধ্যমের কাটতি বাড়লেও এমন ধারাবাহিক বিচ্ছেদের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ করছে পুরো শোবিজ অঙ্গনকে। শোবিজের ইমেজ পড়ছে আরও বেশি সংকটে। তাদের এ বিষয়ে সমাজেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সমাজবিজ্ঞানীরা ধৈর্যের অভাব, ইগো সমস্যা, অসহনশীলতা, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের অভাব, অসহযোগিতাসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে তারকাদের মাঝে বিচ্ছেদ হচ্ছে বলে মনে করছেন।