মিয়ানমারের নাগরিকদের বিনামূল্যে ভিসা দেওয়ার ঘোষণা মোদির

---
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিনামূল্যে মিয়ানমারের নাগরিকদের ভ্রমণ ভিসা সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার মিয়ানমার সফরকালে রাজধানী নেইপিদোতে অং সান সু চির সঙ্গে এক বৈঠকে এ ঘোষণা দেন মোদি।
ভারতে ভ্রমণকারী কূটনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা ও জাতিসংঘের কর্মকর্তা এবং যারা ভারত সরকারের আমন্ত্রণে দেশটি সফরে যান তাদের ক্ষেত্রে বিনামূল্যের এই ভিসা সুবিধা কার্যকর হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি এমনই সময়ে এ ঘোষণা দিলেন যখন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জাতি-গোষ্ঠী নির্মূল অভিযান চালানোয় অভিযোগে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে রয়েছে অং সান সুচির সরকার।
এছাড়া সুচির সঙ্গে বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি রাখাইন সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ ও সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় মিয়ানমারের পাশে থাকবেন বলেও ঘোষণা দেন।
বৈঠক পরবর্তী এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচি ও মোদি বলেন, রাখাইন রাজ্যের সহিংসতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমরা আশা করি সব পক্ষই একসঙ্গে একটি উপায় খুঁজে বের করতে পারবেন; যার ফলে মিয়ানমারের ঐক্য এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে না। একই সময়ে, আমাদের শান্তি, ন্যায় বিচার, মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রাখতে হবে।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিম জাতি গোষ্ঠীর শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ মুসলিম ও ১০ ভাগ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। শত শত বছর ধরে রাজ্যটিতে বাস করা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি না দিয়ে মিয়ানমার সরকার এ জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ চালাচ্ছে।
এছাড়া গত ২৫ আগস্ট থেকে আরাকানে নতুন করে রোহিঙ্গা নির্মূল অভিযান শুরু করেছে সুচি সরকারে সেনাবাহিনী। এ অভিযানে এখনও পর্যন্ত ৪০০ জনকে হত্যা এবং ২৬০০ ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে দেশটির সেনাবাহিনী।
জাতিসংঘ বলছে, অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। প্রতিদিনই এ সংখ্যা বাড়ছে। এর আগে, জাতিগত দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে দেশটির সেনাবাহিনীর চালানো একই রকম অভিযানে কয়েকশত রোহিঙ্গা নিহত হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় হাজারো ঘরবাড়ি। ওই অভিযানের বর্বরতায় বাধ্য হয়ে অন্তত ৮০ হাজার রোহিঙ্গা পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করে।
অন্যদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর জেনেভায় ৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলাবর এক ব্রিফিংয়ে জানায়, আগস্ট মাস থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ১ লাখ ২৩ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সুচির নিরব ভূমিকার নিন্দায় সরব হয়েছে বিশ্ব। দেশে দেশে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ থেকে শান্তিতে এই নোবেলজয়ীর পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে।