কোরবানির পশুর বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা করা প্রত্যেক মুসলিমের ইমানি দায়িত্ব
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : মুসলমানদের দ্বিতীয় প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানি। প্রায় প্রতিটি মুসলিম পরিবারে ঈদুল আজহা পালিত হয়। কারণ প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহারও আলাদা মর্যাদা ও বৈশিষ্ট এবং লক্ষ-উদ্দেশ্য ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য রয়েছে।
ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো একান্তভাবে আল্লাহ মহানের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু কোরবানি করা। প্রতি বছর কোরবানির সময় ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ পশু কোরবানি হয়। আর সংস্কৃতি কেবল বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতিই নয়, বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশে অবস্থানকারী মুসলমানরা তাদের সময় ও আয়োজন অনুপাতে সাধ ও সাধ্যের মিল ঘটিয়ে পবিত্র ঈদুল আজহা উৎযাপন করেন এবং নিজ নিজ সংস্কৃতি অনুসারে পশু কোরবানি করেন।
বাংলাদেশের রজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব জেলা ও উপজেলা এবং গ্রাম-গঞ্জে কোরবানি উপলক্ষে পশুর রক্ত ও উচ্ছিষ্টাংশের অব্যবস্থাপনার কারণে পরিবেশ দূষিত হয়। অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় প্রকৃতি ও পরিবেশ। ছড়িয়ে পড়ে নানাবিদ রোগবালাই। এটা মোটেও ঠিক নয়, একটি কথা প্রত্যেক কোরবানিদাতা মুসলিমের স্মরণ রাখা উচিত- ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদে পশু কোরবানি করা যেমন একটি ইবাদত, পশুর উচ্ছিষ্টাংশগুলোকে সঠিকভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার স্বার্থে ঐগুলোকে সুব্যবস্থানা করাও একটি ইবাদত। কারণ নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ’। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধানও। তাই আমরা যারা কোরবানি দিচ্ছি বা দেবো, তাদের সবার ইমানি দায়িত্ব হলো সঠিকভাবে কোরবানির পশু জবাই করা এবং সব কাজ শেষে পশুর বর্জ্যের সুব্যবস্থাপনা করা।
এটা একান্তই একটি অসচেতনতা বা অবহেলার ফলাফল। সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতার অভাবে ঢাকা মহানগরীসহ দেশের প্রায় সর্বত্রই কোরবানির যদি যথাযথ ব্যবস্থাপনায় কোরবানির পশুকে নির্ধারিত স্থানে জবাই করা হয় এবং সচেতনতার সাথে পশুর রক্ত ও উচ্ছিষ্টাংশগুলোকে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা যায় তাহলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ রোধ হবে অন্যদিকে জবাই পরবর্তী উচ্ছিষ্টাংশ সমূহকে সম্পদে রূপান্তরিত করা সম্ভব হবে। সামান্য পরিকল্পনার এবং সচেতনতার অভাবে কোরবানির পশুর বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে পরিবেশ দূষিত হয়। ফিকে হয়ে যায় ঈদের আনন্দ। একটু সময় নিয়ে, ইমানি দায়িত্ব মনে করে কিছু নিয়ম মেনে বর্জ্যের সুব্যবস্থাপনা করলেই এসব সমস্যা এড়ানো যাবে।
উচ্ছিষ্টাংশসমূহকে কীভাবে সুব্যবস্থাপনা করা যেতে পারে? উদাহরণত বলা যায়- ১. বিচ্ছিন্ন স্থানে স্থানে পশু কোরবানি না দিয়ে এলাকার লোকজন মিলে এক স্থানে কোরবানি করা যেতে পারে। ২. কোরবানির পর পশুর রক্ত ও তরল্য জাতীয় বর্জ্য খোলা স্থানে না ফেলে গর্তের ভেতরে পুঁতে মাটিচাপা দিতে হবে। ৩. কোনোভাবেই নাড়িভুঁড়ি বা এ জাতীয় বর্জ্য পয়োনিষ্কাশন ড্রেনে ফেলা যাবে না। এছাড়া সিটি কর্পোরেশণ কর্তৃক এ ব্যাপারে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়, সেগুলো মেনে চললে আরো ভালোভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ করা সম্ভব।
সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের উচিত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাকে ইমানি দায়িত্ব মেনে কোরবানির পশুর সকল প্রকার বর্জ্যকে সুব্যবস্থাপণার আওতায় নিয়ে আসা। এতে একদিকে যেমন ইমানি দায়িত্ব পালন হবে, অন্যদিকে সুস্থা ও সুন্দর থাকবে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ।