চীনে মুসলিমদের ওপর ডিজিটাল নির্যাতন
---
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের মুসলিম নাগরিকদের প্রত্যেকের মোবাইল ফোনে একটি নজরদারি অ্যাপ ইনস্টল করা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। এই অ্যাপের মাধ্যমে তাদের মোবাইল ফোনের সব তথ্য চলে যাবে কর্তৃপক্ষের কাছে। তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট মাশাবল এক রিপোর্টে এ কথা জানিয়েছে।
রেডিও ফ্রি এশিয়ার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, পশ্চিমাঞ্চলীয় মুসলিম অধ্যুষিত জিনজিয়াং প্রদেশে নজরদারির বিষয়ে তৎপর হওয়ার পর এক সপ্তাহ আগে চীনা কর্তৃপক্ষ এই নির্দেশ জারি করে। চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইচ্যাটের মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে উইঘুর ও চীনা ভাষায় লেখা একটি নির্দেশনা জিনজিয়াংয়ের রাজধানী উরুমকির বাসিন্দাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। জিনজিয়াং মুসলিম অধ্যুষিত প্রদেশ, যার বাসিন্দারা তুর্কি বংশোদ্ভূত উইঘুর সম্প্রদায়ের। দীর্ঘ দিন ধরেই এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টি চীনা কমিউনিস্ট শাসনের নিগড়ে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। জিনজিয়াংয়ে ৮০ লাখ মুসলিমের বসবাস। অঞ্চলটিতে তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এর আগে সেখানে মুসলিম শিশুদের ইসলামি নামকরণের ওপর নিষোধাজ্ঞা জারি করে চীনা কর্তৃপক্ষ।
জিনজিয়াংয়ের যেসব মুসলিম অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন তাদের জিয়াংওয়াং নামের নতুন এই অ্যাপটি ইনস্টল করার জন্য একটি কিউআর কোড স্ক্যান করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চীনা কর্মকর্তারা বলছেন, অ্যাপটি মোবাইলের অবৈধ ও সন্ত্রাসবিষয়ক ভিডিও, ছবি, ই-বুকসহ অন্যান্য তথ্য শনাক্ত করতে পারবে এবং মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীকে নির্দেশ করবে সেটি ডিলিট করতে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে ‘সন্ত্রাস সম্পর্কিত’ বিষয়গুলো কী হবে তা নির্ধারণ করবে সরকার। কেউ এই অ্যাপটি ইনস্টল না করলে কিংবা ইনস্টল করার পর তা আবার বন্ধ করে দিয়ে তাকে দশ দিনের জন্য কারাবরণ করতে হবে।
জিয়াংওয়াং অ্যাপের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত ফাইল, ছবি, ভিডিও চিহ্নিত করতে পারবে। চীন সরকার যেটিকে ‘সন্ত্রাসবিষয়ক’ মনে করে এমন কোনো বস্তু মোবাইল ফোনে থাকলে তার তথ্য সরাসরি পাঠিয়ে দেবে কেন্দ্রীয় সার্ভারে। সরকারি তথ্য বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত এসব তথ্য বিশ্লেষণ করবেন। এ ছাড়া অ্যাপটি মোবাইল ফোনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার, সিম কার্ড ও ওয়াইফাই লগ ইনের রেকর্ডও সংরক্ষণ করবে। অর্থাৎ এই অ্যাপ ইনস্টল করা থাকলে সেই মোবাইল ফোনের প্রতিটি কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে পারবে সরকারি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। উরুমকিসহ পুরো জিনজিয়াংয়ে মুসলিমদের ওপর নজরদারির সর্বশেষ পদক্ষেপ এটি। এর আগে গত মার্চ মাসে অঞ্চলটির সরকারি কর্মচারীদের একটি ‘সন্ত্রাস সম্পর্কিত’ চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক মায়া ওয়ং বলেন, ‘চীনের পুলিশ খুবই ক্ষমতাশালী-বিশেষ করে জিনজিয়াংয়ে। যেকোনো সময় যে কাউকে তারা আটক করতে পারে’। সূত্র : এক্সপ্রেস ট্রিবিউন