গঠনমূলক সমালোচনা করুন : কাদের
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : গণমাধ্যম কর্মীদের আওয়ামী লীগের গঠনমূলক সমালোচনার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের সঙ্গে সম্পাদকমণ্ডলীর জরুরি সভা শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক একটি দল। আমাদের ঘরোয়া গণতন্ত্র, তর্ক-বিতর্ক নিয়ে, সঠিক তথ্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করুন। তথ্য যাচাই না করে রঙ চড়ানোর দরকার আছে কি? অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমাদের সমালোচনা আমরা করবো। কেউ কেউ এমন বিষয় নিয়ে আসেন, যেগুলো তথ্য নয়। আংশিক সত্যও আসে না।
পার্টির মুখপাত্রের সঙ্গে কথা বলে নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি কোনো নিউজ করার পক্ষে নই, গঠনমূলক সমালোচনা করলে আমরা দল হিসাবে শুদ্ধ হতে পারি। গণমাধ্যমকে আমরা শত্রু মনে করি না।
বিএনপির সমালোচনা করে কাদের বলেন, বিএনপির রূপকল্প বা ভিশন ২০৩০ মানেই বিভিন্ন জেলায় জেলায় নিজ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীষণ মারামারি। সদস্য সংগহের নামে তারা জেলায় জেলায় যেভাবে বিশৃঙ্খলা করছে তাতে করে দলটির নেতাকর্মীদের গায়ে কাপড় থাকে না, এগুলো দেখে হাসি পায়।
আওয়ামী লীগের পদক্ষেপ বিএনপি নকল করে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয় সেগুলো দেখার পর বিএনপি তা নকল করতে গিয়েই বিপাকে পড়ে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আমরা স্লোগান দিয়েছিলাম, এক মুজিব লোকান্তরে, লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে। পরে জিয়াউর রহমান হত্যার পরও বিএনপিকে দেখেছি ‘এক জিয়া। এগুলো খুব বেশি দিনের ইতিহাস নয়।
আ স ম আব্দুর রবদের চা চক্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক ভণ্ডুলের অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, শেষ না দেখা পর্যন্ত এ বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আমি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছি, আ স ম আব্দুর রব ভাই আমার নেতা ছিলেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। তার বাসায় উল্টাপাল্টা কিছু ঘটে থাকলে অবশ্যই খবর পেতাম। তেমন কিছু ঘটেনি। তারপরও আমি খবর নিবো।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরীক দল এরশাদের জাতীয় পার্টির আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে নতুন নতুন ধারা তৈরি হবে। গণতন্ত্রের দিক বিবেচনায় এটা চলুক সেটা আমরাও চাই।
বিএনপি-জামায়াত সরকারের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার কারণে এখনো নামাজে শেজদা দিতে পারি না। আমার চেয়ে অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। আইভী রহমানসহ ২৩ জন তো জীবনই দিয়েছেন। এরপর সেই সময়ের সরকার মামলার আলামত নষ্ট করে দিয়ে, তথাকথিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত, জজ মিয়া নাটক, এফবিআইকে তদন্ত করতে না দিয়ে সাধু সাজতে চেয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, ১৭ আগস্ট সারাদেশের ৬৩টি জেলায় সিরিজ বোমা হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। বাংলা ভাই-শায়খ আব্দুর রহমানদের উত্থান বিএনপির আমলেই হয়েছিল। শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য চট্টগ্রামে, বরিশালের গৌরনদী, নাটোর, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জায়গায় হামলা হয়েছে। কই খালেদা জিয়ার ওপর তো কোনা হামলার কথা শোনা যায়নি।
আমরা কি বেগম জিয়ার মিটিংয়ে হামলা চালিয়েছি এমন প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগের আহাসান উল্লাহ, শাহ এ এম এস কিবরিয়া, সাংবাদিক মানিকসহ কত নাম বলবো যাদের হত্যা করা হয়েছে। কত গুম, কত খুন করেছে বিএনপি তার হিসেব নেই। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নামে ২৫০ জনকে পুড়িয়ে মেরেছে। এখনো বার্ন ইউনিটে আহাজারি শোনা যায়।
আগস্ট মাসের কর্মসূচি পালনের নামে ভুয়া সংগঠন বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি যেন করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।