রোববার ৯ জুলাই থেকে পরীক্ষামূলকভাবে শুধু চট্টগ্রামে পর্যটকদের জন্য এই পদ্ধতি চালু করেছে ভারতীয় সহকারি হাই কমিশন। এর আগে অবশ্য মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ নাগরিক এবং নারীদের জন্যও একই পদ্ধতি চালু হয়েছে। সফলভাবে এটি চললে সারাদেশের জন্যই এই সুবিধা কার্যকর করবে ভারতীয় হাইকমিশন।
সহকারি হাই কমিশনার সোমনাথ হালদার বলেন, ভিসার জন্য আবেদনকারীদের কাছে আমাদের খুব বেশি চাওয়া নেই। শুধু আবেদনের ফরমে যেসব তথ্য দেবে সেগুলো যেন নির্ভুল দেয়। যেসব ডকুমেন্ট সাবমিট করছে সেগুলো যেন সঠিক হয়। ভারতে গিয়ে কোথায় থাকবেন সেই তথ্যটা চাইছি। সেগুলো তো কঠিন কিছু নয়।
‘আমরা চাই ভারতের জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধনটা দৃঢ় হোক। প্রত্যেক মানুষ যেন নির্বিঘ্নে ভারতে যেতে পারে। আমরা বাংলাদেশের জনসাধারণকে সম্মান দিয়ে ভিসা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এখন মানুষের উচিৎ হবে আমাদের সম্মান দেয়াটাকে সম্মান দেখানো’ বলেন এই কূটনীতিক।
এদিকে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারি হাই কমিশনের পরীক্ষামূলক এই পদক্ষেপে বদলে গেছে ভিসা সেন্টারের সামনের চিরচেনা দৃশ্যপট। আগের মতো সেই ভিড় আর কোলাহল আর নেই।
পর্যটকদের জন্যও একই সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে ভারত মূলত বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সব ক্যাটাগরিতে তাদের ভিসার দরজা খুলে দিয়েছে।
হয়রানি কমেছে, আবেদন করার ক্ষেত্রে অহেতুক বিড়ম্বনাও কমেছে। আর তাতেই খুশি সাধারণ ভিসাপ্রত্যাশীরা।
জানতে চাইলে ভারতের সহকারি হাই কমিশনার সোমনাথ হালদার বলেন, একসময় মানুষ অযথা হয়রানির শিকার হত। আমাদের মধ্যে কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু মানুষ শৃঙ্খলাবদ্ধ না থেকে কিংবা সঠিকভাবে আবেদন ফরম পূরণ না করে, একসাথে সবাই ঢুকতে চেয়ে নিজেরাই নিজেদের হয়রানি ডেকে আনত। আবার একটা গোষ্ঠী মানুষকে ভুল বোঝাত, ডকুমেন্ট নিয়ে প্রতারণা করত। এতে মনে হত ভারতের ভিসা পাওয়া বোধহয় কঠিন।
‘এজন্য আমরা পরীক্ষামূলকভাবে সর্বসাধারণের জন্য ভিসা উন্মুক্ত করে দিয়ে দেখছি। প্রথম ধাপে আমরা ১৫ দিন, এরপর এক মাস এই প্রক্রিয়ায় ভিসা দেব। এতে যদি মানুষের উপকার হয় তারপর সারাদেশে এটা চালু করার পরিকল্পনা আমাদের আছে’ বলেন সোমনাথ হালদার।
আগের নিয়মেই সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে ভিসা সেন্টারে জমা নেয়া হচ্ছে আবেদন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর খুলশীতে ভিসা সেন্টারের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, মাত্র চারজন পুরুষ ও একজন নারী আবেদন নিয়ে মূল গেইটে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে আবেদন ফরম পরীক্ষা করে মাত্র দেড়-দুই মিনিটের মধ্যেই তাদের ঢোকানো হল।
নতুন নিয়মে প্রথমদিন ভিসার আবেদন গ্রহণ তদারক করতে ভিসা সেন্টারের সামনে ছিলেন ভারতীয় সহকারি হাই কমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি শুভাশীষ সিংহ। তিনি বলেন, সপ্তাহের প্রথম খোলার দিন। ভেবেছিলাম অনেক ভিড় হবে। কিন্তু একদম ভিড় নেই। টিকেট-অ্যাপয়নমেন্ট ডেট লাগছে না।সবাই গেইটে এসেই ঢুকে যাচ্ছে।
রোববার সকাল ১১টা পর্যন্ত মাত্র ২২০টি আবেদন জমা পড়ার তথ্য দিয়েছেন ফার্স্ট সেক্রেটারি শুভাশীষ সিংহ। তবে দিন শেষে ৭৯১টি আবেদন জমা পড়েছে বলে ভিসা আবেদন সংগ্রহকারী স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছ। আর গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৭০০ জনকে ভিসা দেয়ার কথা জানালেন সহকারি হাই কমিশনার সোমনাথ হালদার।
ভিসা সেন্টারের সামনে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন খুলশী থানার এএসআই মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, প্রতিদিন গেইট থেকে রাস্তা পর্যন্ত ১০০-১৫০ মানুষের লম্বা লাইন থাকে। আজ একদম মানুষ নেই। যারা ঢুকছেন তারাও আধা ঘন্টা-৪৫ মিনিটের মধ্যে জমা দিয়ে বেরিয়ে আসছেন।
আবেদন জমা দিয়ে পাসপোর্ট ফেরত পাবার নিয়মও সহজ করেছে ভারতীয় সহকারি হাই কমিশন। আগে আবেদন জমা দেয়ার ছয়দিন পর মিলত পাসপোর্ট। রোববার ৯ জুলাই থেকে তিনদিনের মধ্যে পাসপোর্ট ফেরত দেয়া নিয়ম চালু করা হয়েছে বলে জানালেন সহকারি হাই কমিশনার সোমনাথ হালদার।
সহজে আবেদন জমা দিতে পেরে খুশি সাধারণ ভিসা প্রত্যাশীরা। নগরীর পাহাড়তলী থেকে আসা হেলাল উল্লাহ নামে একজন আবেদনকারী বাংলানিউজকে বলেন, পত্রিকায় দেখেছিলাম, টিকেট লাগবে না। অ্যাপয়নমেন্ট ডেটও লাগবে না। টিকেট এবং ডেট ছাড়াই এসেছি। আমার আবেদন জমা নিয়েছে। আমরা সবসময় এভাবে ভিসার আবেদন জমা দিতে চাই। এই নিয়মটা যেন সবসময় চালু থাকে।
তবে নতুন নিয়ম চালুর প্রথম দিনে ভিসা আবেদন সংগ্রহকারী স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার কর্মকর্তাদের উপর চাপ পড়েছে বলে জানা গেছে।
কর্মকর্তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভিসার আবেদন নেয়ার জন্য ডেস্ক আছে আটটি। সকালে আবেদনকারীদের প্রচণ্ড ভিড় থাকে। এজন্য আগে পাঁচজন করে ঢোকানো হত। কিন্তু এখন আবেদন থাকলেই ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। এতে কর্মকর্তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তবে ডেস্ক বাড়ালে এবং আবেদনকারীরা যদি ধাপে ধাপে আসেন সেক্ষেত্রে সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।