পদত্যাগের চাপ বাড়ছে থেরেসার ওপর
---
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েছেন থেরেসা মে। আসন বাড়াতে গিয়ে নির্বাচনে গিয়ে উল্টো সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন মে। বিপরীতে বিরোধী দল লেবার পার্টিকে করে দিয়েছেন আরও শক্তিশালী।
২০২০ সালে যুক্তরাজ্যের পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিজের ক্ষমতাকে আরও নিরঙ্কুশ করতে হুট করে মধ্যবর্তী নির্বাচন দেন থেরেসা মে। মে শতাধিক আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরবেন বলে মনে করা হচ্ছিলে। কিন্তু নতুন করে আসন জেতা দূরের কথা, উল্টে তিনি ১১টি আসন হারিয়েছেন। যে কারণে ঝুলে গেছে দলটির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা। এককভাবে সরকার গঠন করতে প্রয়োজন ৩২৬ আসন।
ঘোষিত ৬৪৩টি আসনের ফলাফলে কনজারভেটিভ পেয়েছে ৩১৩ আসন। লেবার দল পেয়েছে ২৬০ আসন, যা আগের চাইতে ২৯টি বেশি। স্কটিশ জাতীয়তাবাদী দল ৩৫টি, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস দল ১২ ও নর্দান আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি) পেয়েছে ১০টি আসন।
ইসলিংটন নর্থ আসনে আবার জয়ের পর লেবার পার্টির নেতা জেরমি করবিন বলেন, ‘নিজের কর্তৃত্ব দৃঢ় করতে পার্লামেন্টে আরও সংখ্যাগোরিষ্ঠতা লাভের আশায় প্রধানমন্ত্রী আগাম নির্বাচন ঘোষণা করেছিলেন। আগাম নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি গণরায় জানতে চেয়েছিলেন। তিনি যা পেয়েছেন তা হলো; রক্ষণশীলরা আসন হারিয়েছে, ভোট হারিয়েছে, সমর্থন হারিয়েছে এবং আত্মবিশ্বাস হারিয়েছে।’
মে’র পদত্যাগের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, তার (থেরেসা মে) সরে দাঁড়ানোর জন্য এসব কারণই যথেষ্ট। বিশেষ করে এমন একটি সরকারের জন্য পথ ছেড়ে দেয়া, যারা সত্যিকার অর্থেই এ দেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে।’
কনজারভেটিভ দলীয় সাবেক মন্ত্রী অ্যানা সোবরি অবশ্য প্রকাশ্যেই বলেছেন যে, থেরেসা মে ‘শক্তিশালী ও স্থিতিশীল’ নেতৃত্বের জন্য এই নির্বাচন দিয়েছেন। কিন্তু তিনি তা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই তার সরে যাওয়া উচিত।
এদিকে কনজারভেটিভ দল এককভাবে সরকার গঠন করতে না পারায় ব্রেক্সিট সমঝোতার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হলো। কেননা একমাত্র নর্দান আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি) সরকার গঠনে কনজারভেটিভ দলকে সমর্থন দিতে রাজি। কিন্তু ওই দল ব্রেক্সিটের গুরুতর বিরোধী। ফলে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন প্রশ্নে দুই দলের একমত হওয়ার সমীকরণ অত্যন্ত জটিল।
মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে এটি যুক্তরাজ্যে তৃতীয় জাতীয় নির্বাচন। ২০১৫ সালে ডেভিড ক্যামেরনের নেতৃত্বে কনজারভেটিভ দল ৩৩০টি আসন পেয়ে এককভাবে ক্ষমতায় ফেরে। এরপর ২০১৬ সালের জুনে ব্রেক্সিট প্রশ্নে অনুষ্ঠিত হয় গণভোট। ওই গণভোটে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ইইউতে থাকার পক্ষে ছিলেন। জনগণ বিচ্ছেদের পক্ষে রায় দিলে ক্যামেরন পরাজয় মেনে পদত্যাগ করেন। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী হন থেরেসা মে।
গণভোটের রায় বাস্তবায়নে নিজের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে থেরেসা মের ইচ্ছায় এই মধ্যবর্তী নির্বাচন হয়। আর এই নির্বাচনে প্রত্যাশিত জয় না পাওয়ায় থেরেসার বিদায় অনেকটা নিশ্চিত। ব্রেক্সিট ইস্যু যুক্তরাজ্যের আরেকজন প্রধানমন্ত্রীর বিদায় ঘণ্টা বাজাচ্ছে।