লন্ডন ব্রিজ হামলা : কমিউনিটিতে অজানা আতঙ্ক, চলছে ধরপাকড়
---
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : লন্ডন ব্রিজে হামলার তদন্তের অংশ হিসাবে পুলিশ সোমবার ভোরে বাংলাদেশি অধ্যুষিত ইস্ট লন্ডনের দু’টি বাড়িতে অভিযান চালায়। এটি তারই একটি বাড়ি।
গত মাসে ম্যানচেস্টার এরিনার হামলায় ২২ জন নিহতের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই শনিবার রাতে লন্ডন ব্রিজের হামলায় আরও ৭ জন নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ নিহত হন। এসব হামলার পর স্বাভাবিকভাবেই বর্ণবাদী একটি গোষ্ঠী মুসলিম কমিউনিটির দিকে আঙ্গুল তোলে। এতে ইসলাম এবং মুসলিম কমিউনিটি সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে চলে আসে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে রবিবার তাঁর বক্তব্যে ইসলামী জঙ্গীবাদ বলে মন্তব্য করেছেন। যদিও ইসলামে এসব জঙ্গীবাদের জায়গা নেই বলে বারবার বলে আসছেন মুসলিম কমিউনিটির মানুষ। তারপরও এসব ঘটনার পর বিভিন্নভাবে সাধারণ মুসলিমরা হেনস্থা, হয়রারি এবং হামলার শিকার হয়েছেন বিগত দিনে। লন্ডন ব্রিজে সন্ত্রাসী হামলায় ৭ জনের মৃত্যুর ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে সর্বত্র। আড়াই মাসের মধ্যে যুক্তরাজ্যে তিনটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২২ মার্চ ওয়েস্টমিনিস্টার হামলার পর ২২ মে ম্যানচেস্টার এরিনায় আত্মঘাতী হামলায় ৮ বছরের শিশুসহ ২২জন নিহত হন। সবশেষ লন্ডন ব্রিজ হামলার পর এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে সবখানে। বাংলাদেশি তথা মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার সঙ্গে আছে এক ধরনের সংশয় আর অজানা আতঙ্ক।
দ্য মুসলিম কাউন্সিল অব বৃটেন সংক্ষেপে এমসিবি এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সংগঠনের সেক্রেটারি হারুন খান বলেন, এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটায় তারা মুসলিম কমিউনিটির প্রতিনিধিত্ব করে না। ইসলামেও এ ধরনের নৃশংস ঘটনা অনুমোদন করে না। বরং ইসলামের নামে এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনা করে মুসলিম কমিউনিটিকে ‘ভিক্টিম’ বানানো হচ্ছে।
লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাহাস পাশা মনে করেন, সরকার এবং মুসলিম নেতৃবৃন্দ সবাইকে এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হতে হবে। যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি এ ধরনের কাজের জন্য কাউকে উৎসাহ দিলে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবেও প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
২২ মে হামলার পর ৩ জুন লন্ডন ব্রিজ হামলা। এই দুই হামলা আগামী ৮ জুনের সাধারণ নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলে সেটা নিয়েও ভাবনা আছে কমিউনিটিতে। লন্ডন ব্রিজ হামলার পর রবিবার একমাত্র ইউকিপ ছাড়া বাকী সব রাজনৈতিক দল তাদের নিবাচনী প্রচারণা স্থগিত রাখে।
এদিকে লন্ডন ব্রিজ হামলার তদন্তের অংশ হিসাবে পুলিশ সোমবার ভোরে বাংলাদেশি অধ্যুষিত ইস্ট লন্ডনের দু’টি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। নিউহ্যাম এবং ডেগেনহ্যামের দুটি বাড়িতে ভোর প্রায় ৪ টা ১৫ মিনিটের দিকে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মেট পুলিশ। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এসময় একটি বাড়িতে থেকে বেশ কয়েক বক্স ফয়েল উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ থার্টিন এলাকার ডেগেনহ্যামের একটি বাড়িতে অভিযানের সময় ভোর প্রায় ৪টার দিকে বেশ কয়েক দফা গুলির আওয়াজ শুনেছেন। সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীদের ধরতে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গত শনিবার রাত ১০টার পরে লন্ডন ব্রিজে হামলায় তিন হামলাকারীসহ ১০ জন নিহত হন। আহত হন ৪৮ জন। লন্ডনের ৫টি হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ২১ জনের অবস্থা বেশ গুরুতর। এই ঘটনার পর রবিবার ভোরে ইস্ট লন্ডনের বার্কিংয়ের দুটি বাড়ি থেকে ৭ জন পুরুষ এবং ৫ জন নারীকে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম পুলিশ।
অপর এক সংবাদে ডেইলি মেইল জানিয়েছে , ব্রিটেনের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেয়া ইসলাম সমর্থন করে না এমন বিষয় নিয়ে চিৎকার করার কারণে লন্ডন ব্রিজে হামলাকারী নিহত ৩ জনের একজনকে ২ বছর আগে বার্কিং জাবির বিন জায়েদ মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হয়। মূলধারার এক সংবাদ মাধ্যমে এই কথাটি বলেছেন মসজিদের ম্যানেজার। তবে তিনি তার নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, ২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য জাবির বিন জায়েদ মসজিদের ইমাম বক্তব্য দিলে সেই বক্তব্যের বিরোধীতা করে ওই ব্যাক্তি চিৎকার করে বলতে থাকেন, ব্রিটেনের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। এসময় সে খুব রাগান্বিত ছিলো। তখন তাকে শান্ত হতে বলা হয়। কিন্তু সে চিৎকার করতেই থাকে। এরপর তাকে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হয়।
মসজিদের ম্যানেজার আরও বলেন, মসজিদ থেকে বের করে দেওয়ার পর সে বলে, তার উপর জোর খাটানোর অধিকার কারো নেই! এটি আল্লাহর ঘর। সবকিছুর মালিক আল্লাহ! তখন তাকে বলা হয়, হয়তো সে সঠিক, তবে এখন এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে যারা তারা এর সিদ্ধান্ত নেবে। ম্যানেজার জানান, অভিযুক্ত লোকটির কোন বন্ধু ছিল না। সে নামাজের সময় আসতো, নামাজ শেষ করেই চলে যেতো। তাকে দেখতে অশিক্ষিত মনে হতো, এছাড়া তার তেমন কোন ইসলামিক জ্ঞান ছিল বলে মনে হয়নি।