লন্ডন হামলা: খুনিদের ‘পরিচয় জেনেছে’ পুলিশ
---
লন্ডন ব্রিজ ও বারা মার্কেট এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার কথা জানিয়েছে ব্রিটিশ পুলিশ।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলাকারীদের নাম ‘যত দ্রুত সম্ভব’ প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে লন্ডন মেট্রেপলিটন পুলিশ।
সাধারণ নির্বাচনের মাত্র চারদিন আগে গত শনিবার রাতে লন্ডন ব্রিজে ভিড়ের মধ্যে ভ্যান চালিয়ে দেওয়ার পর ছুরি হাতে সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হয় তিন হামলাকারী।
ওই হামলায় সাতজন নিহত এবং অন্তত ৪৮ জন আহত হন। তিন হামলাকারী পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট লন্ডন ব্রিজ হামলার দায় স্বীকার করে বার্তা পাঠায়।
সোমবার সকালে ব্রিটিশ পুলিশ জানায়, তাদের কর্মকর্তারা পূর্ব লন্ডনের নিউহ্যাম ও বার্কিং এলাকার দুটি ঠিকানায় তল্লাশি চালিয়েছেন।
এর মধ্যে বার্কিং থেকে ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হলেও ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
হামলার পর লন্ডন ব্রিজ এলাকায় বন্ধ থাকা ট্রেন ও টিউব স্টেশনগুলো সোমাবার সকাল থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে। ব্রিজ এবং সংশ্লিষ্ট সড়কগুলো থেকে পুলিশ কর্ডনও তুলে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে শনিবার রাতের হামলায় নিহত এক কানাডীয় নাগরিকের পরিচয় জানা গেছে। ক্রিস আর্চিবল্ড নামের ওই তরুণী কানাডায় গৃহহীনদের আশ্রায়নের জন্য কাজ করতেন। পরে বাগদত্তার সঙ্গে তিনি ইউরোপে চলে আসেন বলে তার পরিবার জানিয়েছে।
এদিকে নাম পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তির বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, হামলাকারীদের একজনের ব্যাপারে পুলিশকে আগে থেকে সতর্ক করা হলেও তারা গুরুত্ব দেয়নি।
মাত্র দুই বছরের মধ্যে ওই হামলাকারী বদলে যায় বলে ওই ব্যক্তির ভাষ্য।
“আমরা এমনই একটি হামলা নিয়ে দুজন কথা বলছিলাম। সেসময় খেয়াল করলাম, সে অন্য উগ্রবাদীদের মতই হামলার পক্ষে নানা কারণ দেখাচ্ছে। ওই দিনই আমি বুঝতে পারলাম এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম।”
এরপরও কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি অভিযোগ করে ওই ব্যক্তি বলেন, “আমি আমারটুকু করেছি… কর্তৃপক্ষ তাদেরটুকু করেনি।”
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার মার্ক রাওলি জানিয়েছেন, শনিবারের সন্ত্রাসী হামলায় আহতদের মধ্যে ২১ জনের অবস্থা গুরুতর।
হামলাকারীদের থামাতে গিয়ে চার পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী মার্ক টার্নবুল লন্ডন ব্রিজ ও বারা মার্কেট হামলায় তার দেশের চারজনের আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন।
এদের মধ্যে ব্রিসবেনের ক্যানডিস হেজ ও ডারউইনের অ্যান্ড্রু মরিসন হামলাকারীদের ছুরিতে আহত হন।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, সন্ত্রাসী হামলায় তার দেশের একজন নিহত এবং চারজন আহত হয়েছেন। আরও একজনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
হামলার ঘটনায় সোমবার সকালেও প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মের উপস্থিতিতে নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষ কোবরা কমিটির সভা হয়েছে।
মে তার বক্তৃতায় বলেছেন, নির্বাচন যথাসময়েই হবে।
লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, তার দল সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলায় ‘সস্তা কৌশল’ ব্যবহারে বিশ্বাসী নয়। মানুষের প্রাণ রক্ষায় করনীয় সবকিছু করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেছেন, লন্ডনকে আবারও ‘বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ’ শহরে পরিণত করা হবে এবং তার শহর সন্ত্রাসের কাছে নত হবে না।
ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় শোক জানিয়ে যুক্তরাজ্যের বেশিরভাগ দল রোববার নির্বাচনের প্রচারকাজ স্থগিত রেখেছিল। সোমবার সকাল থেকে তা আবার শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
হামলায় নিহত ও আক্রান্তদের স্মরণে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় দেশজুড়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শনিবারের এই হামলা নিয়ে গত তিনমাসে তিনবার রক্তাক্ত হল যুক্তরাজ্য। গত ২২ মে ম্যানচেস্টারে একটি ইনডোর স্টেডিয়ামে মার্কিন পপ তারকা আরিয়ানা গ্রান্ডের কনসার্টে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে শিশুসহ অন্তত ২২ জন নিহত হন। ইসলামিক স্টেট ওই ঘটনারও দায় স্বীকার করেছিল।
তার ঠিক দুই মাস আগে গত ২২ মার্চ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে এক জঙ্গি হামলায় পুলিশসহ পাঁচজন নিহত হন, আহত হন অন্তত ৪০ জন।
যুক্তরাজ্যে সন্ত্রাসী হামলার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে ২০০৫ সালের ৭ জুলাই। সেদিন লন্ডনের চার জায়গায় একসঙ্গে আত্মঘাতী হামলায় ৫২ জন নিহত হন।