g ছবিটি ‍‘ভুয়া’ | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

রবিবার, ৬ই আগস্ট, ২০১৭ ইং ২২শে শ্রাবণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

ছবিটি ‍‘ভুয়া’

AmaderBrahmanbaria.COM
জুন ৪, ২০১৭

---

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাঙামাটির দুর্গম উপজেলা লংগদুর চারটি গ্রামে অগ্নিকাণ্ডের ভুল ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। লংগদুতে আগুনের যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে সেটি ২০১৬ সালের। এমনকি ছবিটি কোনো পাহাড়ি এলাকার অগ্নিকাণ্ডের নয়। আগুনের এই ছবিটি গাজীপুরের টঙ্গীতে একটি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের।

২ জুন শুক্রবার লংগদু উপজেলায় যুবলীগের নেতার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়। পাহাড়িরা বলছেন, বাঙালিরা তাদের শত শত বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডের এই বিষয়টি নিয়ে দেশের প্রিন্ট এবং অনলাইন সংবাদমাধ্যমে ছবিসহকারে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

শুক্রবারের ওই আগ্নিকাণ্ডের গণমাধ্যমকে প্রকাশিত ছবিটি ভুয়া বলে ফেসবুকে সমালোচনা হচ্ছে। এই ছবিটি টঙ্গীর বিসিক শিল্প নগরীর ট্যাম্পাকো কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের বলে দাবি করা হয়েছে।

ওই ছবিটি ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টম্বর দৈনিক ভোরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন ফেসবুকে জানিয়েছেন।

অগ্নিকাণ্ডের এই ছবিটি ২০১৬ সালে দৈনিক ভোরের কাগজে প্রকাশিত হয়। 

ভোরের কাগজের অনলাইন ভার্সনেও ছবির সত্যতা মিলেছে। এই সংবামাধ্যমের অনলাইন ভার্সনে দেখা যায়, লংগদুর অগ্নিকাণ্ড বলে যে ছবি সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করেছে তা টঙ্গীর বয়লার বিস্ফোরণের। ওই সময় কারখানার বিস্ফোরণে ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটে।

যাচাই-বাছাই না করে সংবাদমাধ্যমে ‘ভুয়া’ ছবি প্রকাশিত হওয়াকে অপপ্রচার হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন আশরাফুল। ‘ভুয়া’ ছবি প্রকাশের প্রেক্ষাপটে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘৫৫ হাজার বর্গমাইল এর বাংলাদেশ সবার। সবাই এই দেশের নাগরিক। যে ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে তিনি একটি রাজনৈতিক সংগঠন করেন বলে প্রতিবাদ ও নিন্দা করা যাবে না এই মানসিকতা কাম্য নয়। আবার এর প্রতিবাদে যে সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করা হয়েছে ওইটারও প্রতিবাদ করা অত্যাবশ্যকীয়। এই পরিস্থিতি দমনে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়েছে সেটাও প্রশংসার দাবি রাখে। কোনো অঘটন ঘটবে না এই রকম সমাজ পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাবেন না। দেখতে হবে এর প্রতিকার হয় কিনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) যে দুটি ঘটনা ঘটে গেল তা অবশ্যই কারও কাছে কাম্য নয়। প্রতিবাদ জরুরি কিন্তু এটা নিয়ে সহিংসতা ছড়ানো অন্যায় এবং নিন্দনীয়। যারা প্রতিবাদ না করে ইস্যু তৈরি করার চেষ্টা করছেন তারা দেশ ও জাতির শত্রু। সমাজটাকে নষ্ট করতে চাইছে, তারা এর বিচার কিংবা প্রতিকার চাইছে না।’

লংগদুর আগুনের ঘটনা দৈনিক ইত্তেফাক ও সমকালে প্রকাশিত ছবি।

আশরাফুল আলম বলেন, ‘রাঙামাটির ঘটনাকে ইস্যু বানাতে গিয়ে আসলে মূল ঘটনাকে আড়াল করতে চাইছেন তারা। টঙ্গী এবং গাইবান্ধার ছবিগুলোকে লংগদুর ছবি বলে চালিয়ে দিয়ে আসলে আপনারা কি উদ্দেশ্য হাসিল করতে চান? দায়িত্বজ্ঞানহীন সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু লোকজন যেমন এইসব ছবি প্রচার করছেন, ঠিক কিছু সংবাদ মাধ্যমেও ছবিগুলোতে ক্যাপশন দিয়ে প্রচার করা হয়েছে। যা দুঃখজনক এবং রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকরও বটে।’

সংবাদমাধ্যমের প্রতি মানুষের ‘আস্থা নষ্ট’ হয়ে গেলে সমাজের ‘ভারসাম্য নষ্ট’ হয়ে যাবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘জাতির বিবেক সংবাদমাধ্যমকে এই দিকে আরও দায়িত্ববান হওয়া দরকার বলেই আমার বিশ্বাস। আপনি অন্ধ তাতে খুব একটা ক্ষতি নাই। পুরো জাতিকে অন্ধ করার অধিকার আপনার নাই। অন্ধ মানুষ কখনো কাউকে পথ দেখতে পারে না। বিভ্রান্ত করে, বিপথগামী করে।’

 

লংগদুর আগুনের ঘটনায় দৈনিক যুগান্তর ও বিজিনিউজে প্রকাশিত ছবি।

শুক্রবার সকালে লংগদু উপজেলা সদরের তিনটিলা পাড়া ও মানিকজুড় ছড়াসহ চারটি গ্রামে পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয় বলে জানান লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোমিনুল হক।

শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ৭৩টি বাড়ির তালিকা তৈরি করা হয় বলে জানান লংগদু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. তৈয়ব।

১ জুন বৃহস্পতিবার দুপুরে খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কে চার কিলোমিটার এলাকা থেকে যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত নুরুল ইসলাম উপজেলা সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তার বাড়ি লংগদু উপজেলা সদরে। ২ মে শুক্রবার সকাল আটটায় তার লাশ লংগদু বাত্যপাড়া গ্রামে নিয়ে আসা হয়।

ঘটনার পর উপজেলা পরিষদের মাঠে বাঙালিরা সমাবেশ করেন। সেখানে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, ১ মে বৃহস্পতিবার দুজন পাহাড়ি নুরুল ইসলামের মোটরসাইকেল ভাড়া করেন। এরপর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, পাহাড়িরা নুরুল ইসলামকে হত্যা করেছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা শাখার জনসংহতি সমিতির সভাপতি মনি শংকর চাকমা বলেন, পাহাড়িদের দায়ী করে ২ মে শুক্রবার সকালে বাঙালিরা তিন টিলা ও মানিকজোর ছড়া গ্রামে পাহাড়িদের দুই শতাধিক বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছেন। জনসংহতি সমিতির কার্যালয়ও পুড়িয়ে দিয়েছেন। তার ঘরও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।