খালেদার ভিশন ২০৩০ প্রতিশ্রুতির রঙিন বেলুন : আ. লীগ
নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভিশন ২০৩০-কে ফাঁকা প্রতিশ্রুতির ফাপানো রঙিন বেলুন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়ায় লিখিত বক্তব্যে এমনটি জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
লিখিত বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, একটু আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির সামনে তাদের তথাকথিত ভিশন-২০৩০ উপস্থাপন করেছেন। খালেদা জিয়ার এই ভিশন-২০৩০ একটি ফাঁকা প্রতিশ্রুতির ফাপাঁনো রঙিন বেলুন। এই বেলুন অচিরেই চুপসে যাবে। জাতির সাথে একটি তামাশা ও প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।
তিনি বলেন, পরের মেধাসত্ব চুরি করা একটি নৈতিক অপরাধ। এটা এক ধরনের পলিটিক্যাল ডিজঅনেস্টি। একটি রাজনৈতিক দল কতটুকু দেউলিয়া হলে অপর একটি রাজনৈতিক দলের দেয়া আইডিয়া ও থটস্ নির্লজ্জভাবে চুরি করতে পারে! বিএনপি ইমিটেট করতে পারে কিন্তু ইনোভেইট করতে পারে না।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা বাঙালি জাতির সামনে ‘ভিশন-২০২১’ তথা রূপকল্প-২০২১ উপস্থাপন করেছিলেন। ইতিপূর্বে কোনো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কোনো ধরনের রোডম্যাপ উপস্থাপন করেনি। জনগণ ২০০৮ সালে নিরঙ্কুশভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘ভিশন-২০২১’ তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর ওপর আস্থা স্থাপন করে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ নিরবচ্ছিন্নভাবে গত ৯ বছর ধরে প্রত্যক্ষ করেছে একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য কী ‘ভিশন’ থাকা উচিত। জননেত্রী শেখ হাসিনা শুধু কাগজে কলমে নয়, স্বপ্নে নয়, বাস্তব অর্থেই তার ভিশন-২০২১ বাস্তবায়ন করে চলছেন। যার প্রতিফলন দেশের আজকে সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। এই ভিশন-২০২১ এর কারণেই আজ বাংলাদেশ নিন্ম মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যম বাংলাদেশের এই অগ্রগতিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশ আজ একটি অত্যন্ত শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েছে।
আমরা আশাবাদী, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অগ্রসরমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে আমরা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবো এবং ২০৪১ সালে উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হব।
ভিশন ২০৩০ আওয়ামী লীগের আইডিয়া থেকে চুরি করা উল্লেখ করে আরো বলা হয়, খালেদা জিয়ার আজকের এই ভিশন-২০৩০ একটি মেধাহীন, অন্তঃসারশূন্য, দ্বিচারিতাপূর্ণ ও জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রলাপ ছাড়া কিছুই নয়। প্রকৃতপক্ষে বিএনপির ভিশন হচ্ছে হাওয়া ভবন বানিয়ে লুটপাট, দুর্নীতি আর এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার ভিশন। এই বিএনপি এবং তার প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার সহযোগী ও বেনিফিশিয়ারি হিসেবে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল না করলে গণতন্ত্র, সংবিধান ও আইনের শাসনকে হত্যা না করলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বিশ্ব দরবারে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতো এবং খালেদা জিয়াকে আওয়ামী লীগের আইডিয়া চুরি করে জাতিকে ছবক দিতে হতো না। খালেদা জিয়ার আজকের বক্তব্য তার দলের অজ্ঞতাকে নগ্নভাবে প্রকাশ করেছে। তিনি অনেক বিষয়ে উপস্থাপন করেছেন যেগুলো ইতোমধ্যেই জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং চলমান রয়েছে।
বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, তাদের কাছে সততার বুলি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, মানবাধিকার ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার কথা শ্রবণ জাতির জন্য খুবই অপমানজনক। কারণ তাদের নেতা জিয়াই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর ইনডিমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বাংলাদেশে বিচারহীনতার নজির স্থাপন করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত চেতনা ও মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধানের চরিত্র পরিবর্তন করেছিল। আজকে তারা ঠিক একই কায়দায় বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চায়।
বিএনপির দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রস্তাবের সমালোচনায় কাদের আরো বলেন, বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ভারত নয়; ভৌগোলিক আয়তনের দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ একটি ছোট রাষ্ট্র। এখানে কোনো প্রদেশ নাই যে, এখানে একটি ফেডারেল গর্ভমেন্ট কার্যকর আছে। এটা স্বয়ং বিএনপির স্থায়ী কমিটি বৈঠকেও মতবিরোধ হয়েছে যা আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আজকে খালেদা জিয়া দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট দাবির মাধ্যমে আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করতে চায়। আমি তাকে প্রশ্ন করতে চাই, বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা স্বত্তেও তিনি এ ধরনের ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে কাদেরকে খুশি করতে চান? উনি কী করে রাষ্ট্রপতিকে সম্মান দেবেন? ক্ষমতায় থাকতে তো তিনি তার দলের রাষ্ট্রপতিকে বিনা কারণে অপসারণ করেছিলেন।
বিএনপি নেত্রীর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তিনি (খালেদা) সংসদকে কার্যকর করার কথা বলেছেন, অথচ তিনি তো বিরোধীদলীয় নেতা থাকতে মাত্র ১০ দিন সংসদে গিয়েছিলেন। তার মুখে সংসদ কার্যকরের কথা মানায় না।
বিএনপির ভিশন ২০৩০ স্বাধীনতা বিরোধীদের পক্ষের ভিশন উল্লেখ করে কাদের বলেন, বরাবরের ন্যায় এবারও বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছে। তিনি স্বাধীনতা বিরোধীদের পক্ষে আছেন এবং পক্ষেই থাকবেন। উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সাথে নিয়েই তারা রাজনীতি করবে। তাদের ভিশন যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার ভিশন, সন্ত্রাসবাদ কায়েমের ভিশন, দেশ বিক্রির ভিশন। পুলিশ এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বিএনপি নেত্রী মায়াকান্না করেছেন। আমি তাকে প্রশ্ন করতে চাই- আপনি তথাকথিত অবরোধের জন্য আপনার দলের নেতা-কর্মীরা যখন ২৮ জন পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলেন তখন আপনার ভিশন কই ছিল? আপনি তো, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের সময় অবরোধের নামে বোমা মেরে মানুষ ও পুলিশ হত্যা, সম্পদহানিসহ নাশকতা, নৃশংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন। বোমায় দগ্ধদের এবং নিহতদের পরিবারের কাউকে সমবেদনা জানানো দূরে থাক, কোনো প্রকার শোক প্রস্তাবেও তাদের নাম উল্লেখ করেননি।
বিএনপির ইতিহাসকে নেতিবাচক রাজনীতির ইতিহাস আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির স্রষ্ঠা বিএনপি। তাদের আন্দোলন করার মতো শক্তিমত্তা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের পদতলে দলিত হয়ে গেছে। ভিশন-২০৩০ সাল পর্যন্ত পৌঁছার পথ তাদের জন্য খোলা নেই। বেগম জিয়া ‘ভিশন-২০৩০’ বলে যে কর্মপরিকল্পনার কথা বলেছেন এসবের অনেক কিছুই আওয়ামী লীগ আগেই তাদের দেয়া ‘ভিশন-২০২১’-এ রয়েছে। বিএনপির ভিশন যেমনই হোক এতে কোনো নতুনত্ব নেই।
তিনি বলেন, জেনারেল জিয়া সৃষ্ট কারফিউ গণতন্ত্রের ধারক, প্রতিহিংসার নেশায় উন্মত্ত হয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে হত্যা প্রচেষ্টা, ইনডেমনিটি আইন করে জাতির পিতা হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করা এই বিএনপির মুখে কোনো ধরনের ভিশনের কথা বিশ্বাস করার মতো বোকামি বাংলাদেশের জনগণ আর কোনো দিন করবে না।