বৃহস্পতিবার, ৮ই জুন, ২০১৭ ইং ২৫শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

আজ পঁচিশে বৈশাখ

AmaderBrahmanbaria.COM
মে ৮, ২০১৭
news-image

---

নিজস্ব প্রতিনিধি :  আজ আবারও এলো পঁচিশে বৈশাখ। ফিরে এলো উদার বিশ্ববোধের কবি, বাঙালির আত্মার মুক্তি ও সার্বিক স্বনির্ভরতার প্রতীক কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। আজ থেকে ১৫৬ বছর আগে ১২৬৮ বঙ্গাব্দের পঁচিশে বৈশাখ এবং ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ৬ মে (বাংলা বর্ষপঞ্জি পরিবর্তনে এখন বাংলাদেশে ৮ মে) কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

আজ, ১৫৬তম জন্মবার্ষিকী এবং ১৫৭তম জন্মদিন। যিনি তার জীবন ধরে কোটি কোটি বাঙালির স্বপ্ন আর হৃদয়ের আবেগ স্পন্দিত করে তুলেছেন তার বিপুল সাহিত্যকর্মে। যার সৃষ্টিতে ঠাঁই পেয়েছে প্রেম-বিরহ-প্রকৃতি-সংগ্রাম-মানুষের জীবনের খুঁটিনাটি সব বিষয়। তাই বাঙালির মন-মনন, চিন্তা-অভিব্যক্তিজুড়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ। হয়ে উঠেছেন বাঙালির প্রাণের মানুষ। বাঙালির জীবনে অপরিহার্য ও অবিচ্ছেদ্য এক অংশ। ভৌগলিক সীমা ছাড়িয়ে তার সৃষ্টি জায়গা করে নিয়েছে বিশ্ব দরবারে। তার সৃষ্টির আলোয় আলোকিত শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র বিশ্বজগৎ। এ জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আলাদা আলাদা বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সর্বমানবিকতার পথে নিরন্তর পথচলা এই যুগস্রষ্টা মহামানব-মানবজীবনের এমন কোন দিক নেই যে, যেখানে তার উপস্থিতি নেই। বিশেষ করে বাঙালির চেতনায়, মেধা ও মননে রবীন্দ্রনাথ সর্বব্যাপী। তিনি শুধু একজন কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, গীতিকবি ও নাট্যকারই নন তিনি; তিনি বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধের অপার আধারও। কেননা, তিনি সবসময় মেলাতে চেয়েছেন বৈশ্বিকসব জাতিসত্তাকে, কল্যাণ চেয়েছেন সাম্প্রদায়িক ঐক্য ও মানবিক সাম্যের পথে।

আমাদের বারবার কাছে ডাকা এই মহামনীষী-কবি হিসেবে বিশ্বব্যাপী খ্যাত হলেও রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি ছিলেন একাধারে একজন সঙ্গীতজ্ঞ, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী, দার্শনিক, প্রাবন্ধিক, শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক। পৃথিবীর সাহিত্য, সংস্কৃতি, সভ্যতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের পরিবর্তনকে তিনি আত্মস্থ করেছিলেন। ১২৮১ বঙ্গাব্দে ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘অভিলাষ’ তার প্রথম মুদ্রিত কবিতা। এরপর থেকে কবিতা, গল্প, সাহিত্য, উপন্যাস, সমালোচনা, চিঠিপত্র, প্রবন্ধ, সংগীত, চিত্রকলা যেখানেই তিনি হাত দিয়েছেন পেয়েছেন সফলতার শীর্ষস্থান। প্রায় একক চেষ্টায় তিনি বাংলা সাহিত্যকে আধুনিকতায় উজ্জ্বল করে বিশ্বসাহিত্যের সারিতে জায়গা করে দিয়ে প্রতিভার অনন্য স্বাক্ষর রেখেছেন। তারই ফসল স্বরূপ রেখে গেছেন ৫৬টি কাব্যগ্রন্থ, ১১৯টি ছোটগল্প, ১২টি উপন্যাস, ২৯টি নাটক, ৯টি ভ্রমণ কাহিনী, প্রায় ২২৩২টি গান ও দেশ-বিদেশে দেয়া নানা বক্তৃতা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার এক ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিবান ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু, তিনি বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয় শিক্ষা গ্রহণ করেননি। এজন্য গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এরপর বেশ কয়েক বছর তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত নর্মাল স্কুলে পড়াশোনা করেন। সেখানেই তার বাংলা শিক্ষার ভিত্তি রচিত হয়। পরে তিনি সেন্ট জেভিয়ার্সে ভর্তি হলেও নিয়মিত স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন এবং বাড়িতেই গৃহশিক্ষকের কাছে সংস্কৃত, ইংরেজি, সাহিত্য, পদার্থবিদ্যা, গণিত, ইতিহাস, ভূগোল, প্রাকৃতবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে তালিম নিতে থাকেন। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন।

দেশের শিক্ষার প্রতি অনাগ্রহ দেখে রবীন্দ্রনাথকে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ১৮৭৮ সালে ইংল্যান্ডে পাঠায়। সেখানে কিছুদিন ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলে এবং পরে লন্ডনের একটি ইউনিভার্সিটি কলেজে তিনি কিছুদিন পড়াশোনা করেন। তবে এ পড়াও সম্পূর্ণ হয়নি। এ সময় তিনি ইংল্যান্ডের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জ্ঞানার্জন করেন। ১৮৮০ সালে কোন ডিগ্রি না নিয়েই রবীন্দ্রনাথ দেশে ফিরে আসেন। ১৮৮৩ সালে তিনি বিয়ে করেন খুলনার মেয়ে ভবানী দেবীকে। বিয়ের পর তিনি যার নাম দেন মৃণালিনী দেবী। ১৮৯০ সাল থেকে তিনি কুষ্টিয়ার শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে বসবাস শুরু করেন। ১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯০২ সালে তার স্ত্রী মৃণালিনী দেবী মৃত্যুবরণ করেন। ১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৩ সালে তিনি ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য প্রথম অ-ইউরোপীয় হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘজীবনে তিনি বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেন। দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালের ৬ আগস্ট বাংলা ১৩৪৮ সনের ২২ শ্রাবণ কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে শ্রাবণের বাদলঝরা দিনে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

তার লেখা ‘আমার সোনার বাংলা/আমি তোমায় ভালোবাসি,..’ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও প্রেরণা জুগিয়েছিল তার অনেক গান। তার লেখা ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ গানটি ভারতের জাতীয় সংগীত।
করবে।