হাতিরঝিলে ছিনতাইকারী আর ‘রোমিও’দের উৎপাত
---
হাজার কোটি টাকার হাতিরঝিল এখন অরক্ষিত। দিনে-দুপুরে ছিনতাই, মাদক সেবনসহ চলছে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। দর্শনার্থীদের অভিযোগ, দায়িত্বশীলদের অবহেলায় সংঘবদ্ধ চক্র নানা অপকর্ম করে পার পেয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর দর্শনীয় এ স্থানটি ধীরে-ধীরে দুষ্টচক্রের অভয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে।
এছাড়া সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে হাতিরঝিলের রাস্তায়। ফলে শোভাবর্ধন ও প্রকল্পকাজ সম্পন্ন করার দায়িত্বে থাকা একটি বিশেষ বাহিনীর কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে এখনই সোচ্চার হওয়া দরকার বলে মনে করেন দর্শনার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাতিরঝিলে ঘোরা-ফেরা করছে কিছু উশৃঙ্খল যুবক। বিভিন্ন স্থানে মাদক সেবন করতেও দেখা গেছে এসব যুবকদের। দর্শনার্থী মেয়েদের লক্ষ্য করে টিজ করতেও দেখা গেছে এ যুবকদের।
হাতিরঝিলে স্বপরিবারে ঘুরতে আসা এক ব্যবসায়ী বলেন, হাতিরঝিল প্রকল্পটি দেখতে ও বিনোদনের জন্য খুব সুন্দর একটি জায়গা হলেও বর্তমানে হাতিরঝিলের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, বখাটে ছেলেদের উৎপাত ও ছিনতাইয়েকারীদের দৌরাত্ব বাড়ছে দিনে-দিনে। সেই সাথে এ স্থানটি মাদক সেবীদের সুবিধাজনক জায়গা হিসাবে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, কোনো উশৃঙ্খল তরুণ-তরুণী প্রকাশ্যে বেলেল্লাপনায় লিপ্ত হলেও দেখার কেউ নেয়। তাদের ঘনিষ্টতা বা চুম্বন দৃশ্য দেখে রিতিমত বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসা লোকজনকে। সেখানে নেই যথেষ্ট পরিমাণে নিরাপত্তাকর্মী। ফলে দর্শনার্থীরা সব সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।
তবে এসব বিষয় বিবেচনা করেই বর্তমানে দর্শনার্থী ও পথচারীদের সুবিধার্থে হাতিরঝিল বাস সার্ভিস। এই সুবিধায় ৬টি বাস ছাড়া হয়েছে যেটি সকাল ৭:৩০ টা থেকে রাত ১০:৩০ টা পর্যন্ত চলাফেরা করতে পারবে।
জানা গেছে, স্বপ্নের প্রকল্প হাতিরঝিল ২০০৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর তত্ত্বাবাধায়ক সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) শেষ বৈঠকে বহুল আলোচিত বেগুনবাড়ী-হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এক হাজার ৯৬০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, জলাবদ্ধতা ও বন্যা প্রতিরোধ, ময়লা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা।
রাজধানীর যানজট নিরসনে রামপুরা থেকে কারওয়ান বাজার বা কারওয়ান বাজার থেকে অল্প সময়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে গুলশান হয়ে বাড্ডা। এতে করে তেজগাঁও, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মৌচাক ও মগবাজারের অসহনীয় যানজট অনেকাংশে কমে আসবে। পরিবেশ ও নান্দনিকতার দিক থেকে হাতিরঝিল এখন ঢাকার একটি নতুন দিগন্ত। প্রকল্পের জন্য ৩০২ দশমিক ৮৭২৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের অধিকাংশ জমিই ব্যক্তি মালিকাধীন হওয়ায় ভূমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে এই ৭৬টি মামলার সূত্রপাত হয় যার অধিকাংশ নিস্পত্তি হয়ে গেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হাতিরঝিল প্রকল্পে যে ৭৬টি মামলা হয়েছে তার সবগুলোরই বাদী স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত অধিবাসী ও একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। হাতিরঝিল প্রকল্পের কাজ সম্পাদনের জন্য বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে রাজউককে ১ হাজার ১১৩ কোটি ৭ লাখ টাকা, এলজিইডিকে ২৭৬ কোটি টাকা, ঢাকা ওয়াসাকে ৮৬ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প সমীক্ষায় জড়িত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে ১ কোটি ৯২ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশনকে (এসডব্লিউও) ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে ১৫০ কোটি টাকা জাপানের ঋণ মওকুফ অনুদানের। বাকি টাকা অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার। ১ জানুয়ারি ২০১৩ সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক ভাবে এ প্রকল্প উদ্বোধন করেন।
উল্লেখ্য, হাতিরঝিল প্রকল্পটিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অরগানাইজেশনের পশ্চিম বিভাগের কর্মকর্তা ও সৈনিকরা মাঠ পর্যায়ে সামগ্রিকভাবে কাজের বাস্তবায়ন করছেন। রাজউক লিড অরগানাইজেশন হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে।