রবিবার, ৭ই মে, ২০১৭ ইং ২৪শে বৈশাখ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

দেড় বছর ধরে তালা ঝুলছে জাবির বিজ্ঞান কারখানায়

AmaderBrahmanbaria.COM
মে ২, ২০১৭

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিজ্ঞান কারখানায় প্রায় দেড় বছর ধরে ঝুলছে তালা। ফলে উপযুক্ত ব্যবহারের অভাবে কারখানার অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চুরি হয়ে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ।

দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এ ক্যাম্পাসে বিজ্ঞান কারখানা থাকা সত্বেও নেই কোনো কার্যক্রম। এজন্য গবেষণার কাজ করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারিও চোখে পড়ছে না।

এখানেই শেষ নয়, প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আছে, অথচ তা ব্যবহার করতে দিচ্ছেন না বলে বিজ্ঞান কারখানার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক রবীন্দ্রচন্দ্র সিংহের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

বিজ্ঞান কারখানা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কারখানাটি বন্ধ রাখা হয়েছে। দাপ্তরিক কাজ ছাড়া কোনো কাজই হচ্ছে না এখানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল সব ধরনের কাজ করা হতো এখানে। এর সুবিধা পেতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কিন্তু প্রায় দেড় বছর ধরে সব কার্যক্রম বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

অফিসসূত্রে আরো জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্রের পেছনে বিজ্ঞান কারখানার পুরনো ভবন ছিল। ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে ফাটল ধরায় সিলগালা করে দেয়া হয়। একারণে অস্থায়ীভাবে ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্রের নিচতলায় বিজ্ঞান কারখানার অফিস করা হচ্ছে।

কিন্তু প্রয়োজনীয় ছোট ছোট যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ পুরনো ভবনে রেখেই তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তদারকি ও দেখভাল না করার কারণে জানালা ও গ্রিল ভেঙ্গে তিন দফায় কয়েক লাখ টাকার যন্ত্রাংশ চুরি গেছে। আর ভারি যন্ত্রাংশগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে নতুন বিজ্ঞান ভবনে রাখা হয়েছে। কিন্তু এগুলোর ব্যবহার না করার কারণে লাখ লাখ টাকার যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ মরিচা ধরে নষ্ট হতে বসেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান অস্থায়ী অফিসে আমাদের কোনো যন্ত্রাংশই রাখা হয়নি। বিজ্ঞান কারখানার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক রবীন্দ্রচন্দ্র সিংহ পুরনো ভবনটিতে তালা মেরে রেখেছেন। তার অনুমতি ছাড়া কোনো যন্ত্র আনতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই কোনো কাজই করা যাচ্ছে না।

বিজ্ঞান কারখানার জন্য তিনটি কম্পিউটার রয়েছে। দুটি নষ্ট হয়ে গেছে। প্রিন্টার আছে কালি নেই। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক রবীন্দ্রচন্দ্রকে একাধিকবার অনুরোধ করেও কোনো কাজ হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা বিজ্ঞান কারখানার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ দেয়া হয়। কিন্তু এই দেড় বছরে কোনো যন্ত্রপাতি কেনা হয়নি।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, বিজ্ঞান কারখানায় কোনো কাজ করতে দিলে সঠিক সময়ে করে দেয়া হয় না। এমনকি ছোট একটি কাজ করতেও কয়েক মাস লেগে যায়। একারণে বিরক্ত হয়ে অন্য জায়গা থেকে কাজ করতে হয়। ছোট একটি কাজের জন্য যদি বাইরে যেতে হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান কারখানা থাকার দরকারই বা কি?

এ বিষয়ে বিজ্ঞান কারখানার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক রবীন্দ্রচন্দ্র সিংহ বলেন, পুরনো ভবন যে কোনো সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে। তাই সেটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। নতুন ভবনে এখনো পর্যন্ত বিদ্যুৎসংযোগ দিতে পারেনি প্রশাসন। তাই নতুন ভবনে এখনো কাজ শুরু করতে পারিনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমরা তাদেরকে বলেছি দ্রুত নতুন বিজ্ঞান কারখানায় শিফট করার জন্য। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।