বাঞ্ছারামপুর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা বললেন ‘বালি ও মাটি এক জিনিস’ !
---
ফয়সল আহমেদ খান,বাঞ্ছারামপুর : বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ ইউপি যুবদল সভাপতি ও স্থানীয় এক প্রভাবশালী ইউপি মেম্বার মিলে সরকারের রাস্তা নির্মানের প্রকল্পের কয়েক লাখ টাকা দূর্ণীতির সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় আওয়ামীলীগ,যুবলীগ,মু্িক্তযোদ্ধারা আজ বৃহস্পপ্রতিবার ফরদাবাদে সামান্য এক ইউপি যুবদল সভাপতি কি করে সরকারি টাকা রাস্তা নির্মানানের নাম করে আত্বসাত করলো তা নিয়ে দিনভর তোলপাড় হয়।
খোজ নিয়ে জানা গেছে,উপজেলার ফরদাবাদ ইউপির প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মেম্বার ইব্রাহিম তার অনুগত সুযোগ সন্ধানী কর্মীদের সাথে মিলে-মিশে সরকারী সড়ক সংস্কারের একটি প্রকল্পের টাকা লোপাট সহ স্থানীয় সাধারন জনগনকে ধোকা দিয়ে আরো প্রায় ১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।যার লিখিত অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছে।প্রশাসনের বক্তব্য আমাদের নিজস্ব তদন্ত চলছে।জানা গেছে,প্রশাসন সরকারি তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করতে গড়িমসি করার কারন ‘উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার জনৈক কর্মকর্তার সাথে যুবদল নেতা কাজল ঐ প্রকল্প মিলেমিশে করেছে।আর এই সরকারি কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাওয়ায় সেটি প্রকাশ করতে গড়িমসি করছে বলে জানা গেছে।
এদিকে,বাঞ্ছারামপুর উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও সাবেক যুগ্মসচীব মো.সিরাজুল ইসলাম যুবদল নেতার এহেন কুকীর্তি প্রসঙ্গে মুঠোফোনে বৃহস্পতিবার বলেন,-‘যুবদল সভাপতিকে ফার্মের মুরগী উল্লেখ করে বলেন-সে কিভাবে মাটি ভরাটের প্রকল্পের কাজ পায় ! যুবদল কিভাবে সাধারন জনগনকে ধোকা দিয়ে লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়?আমি বিষয়টি অবিলম্বে তদন্ত করে দেখবো।এ প্রতিবেদককে উদ্দেশ্য করে বলেন,-‘আপনারা খবর টি ভালোভাবে প্রকাশ করুন।জনগন দেখুক সরকার ঠিকই টাকা জনগনের জন্য ব্যৃয় করছে।কিন্তু বিএনপির প্রেতাত্বারা আ.লীগ সেজে দলের ভাবমূর্তী নষ্ট করছে’’।
খোজ ও সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে,বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ ইউনিয়নে গত ২৮ জানুয়ারী ২০১৭ হতে ২২মার্চ ২০১৭ হওয়াসম্প্রতি কর্মসংস্থান কর্মসীচী (ই জি পি পি,সৃজন প্রকল্প) ৪০ দিনের কর্মসূচীতে ৮৯ জন শ্রমীক নিয়োগ দেয়ার কথা।সে সাথে নিয়োগকৃত শ্রমীকদের ২ শত করে টাকা করে ৪০ দিন কাজ করিয়ে মজুরী দেয়ার কথা থাকলেও তা না দিয়ে মাটির পরিবর্তে সরকারি অর্থ আত্বসাতের জন্য মাটির পরিবর্তে বালি ফেলা হয়।
বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে,মাটির স্থলে বালি ফেলায় মাস না পেরুতেই সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে বালির রাস্তা ভেঙ্গে সেই আগের রুপ নিয়েছে।প্রস্থ ৮ ফিটের স্থলে পাওয়া গেছে সাড়ে ৬ ফিট বালি ফেলা হয়েছে।
স্তানীয়দের সাথে কথা বললে জানান- ‘বালির স্থলে সরকারি নিয়মে যদি মাটি ফেলা হতো তাহলে বৃষ্টিতে রাস্তা ভাঙতো না।’
খোজ নিয়ে জানা গেছে, এখানেই ঐ যুবদল সভাপতি কাজলের অপকর্মের শেষ নয়,কতিপয় নামধারী যুবলীগের সুবিধাভোগী কর্মীদের নিয়ে ফরদাবাদ সংলগ্ন রুপুসদী সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার আ:আলীমকে হাতকরে শ্রমীকদের পরিবর্তে ড্রেজারে বালি ভরাট সত্বেও মাটি ও ৮৯ জন ভূয়া মাটিকাটাল শ্রমীকের নাম,টিপ সই,সীল দিয়ে প্রকল্পের পুরো টাকা উত্তোলন করে আত্বসাত করে বলে লিখিত অভিযোগ জানা যায়।
এ ছাড়া রাস্তার পার্শ্ববর্তী বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে ১ হাজার হতে সব্বোর্চ ১৮ হাজার টাকা অবৈধভাবে বালি ভরাটের খরচ বাবদ নেয়া হয় বলে বাসিন্দারা এ প্রতিবেদককে জানান।
এ বিষয়ে ফরদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জানান,-‘প্রকল্পটির বিষয়ে ইব্রাহিম মেম্বার বলতে পারবে।আমি অসুস্থ্য অবস্থায় তখন ঢাকায় ছিলাম’।
এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ¦ নুরুল ইসলাম,নির্বাহী কর্মকর্তা মো.শওকত ওসমান,বীর মু্িক্তযোদ্ধা কমান্ডার মো.মহিউদ্দিন আহমেদ ,ছাত্রলীগ সভাপতি,সাধারন সম্পাদক,স্বেচচাসেবকলীগের আহবায়কের বক্তব্যে বলেন-‘একজন যুবদল সভাপতির অপকর্ম ও সহযোগী ইব্রাহিম মেম্বারের কারনে আজ সরকারের দূর্ণাম হবে-তা মোটেও কাম্য নয়।আমরা দ্রুত বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবো।
‘বালি ও মাটি এক জিনিস !’
বাঞ্ছারামপুরের ফরদাবাদ ইউপিতে ইউপি যুবদল সভাপতি কাজল মিয়া ও ইব্রাহিম মেম্বারের ৭ লক্ষ ৮৫ হাজার ২ শত টাকা লোপাট প্রসঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১২ টায় ফরদাবাদের রাস্তায় মাটির পরিবর্তে বালি ফেলা হয়েছে কেন এবং সাধারন মানুষ দের কাছ থেকে টাকা নেয়া প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা বলেন অভিযোগ আসলে প্রকল্পটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও)মফিদুল ইসলাম বলেন,-‘মাটি ও বালি তো একই জিনিস’ বালি ফেললে সমস্যা কি ?’ প্রকল্পে বলা হয় ১ লক্ষ ২৪ হাজার ঘনফুট মাটি ফেলা হবে।অভিযোগ আসে সেখানে তার অর্ধেক পরিমান বালি ফেলা হয়।উপকরন মজুরী বাবদ ৭ লাখ ১২ হাজার টাকা,অতিরিক্ত মজুরী(ননওয়েজ কষ্ট)৭১ হাজার ২ শত টাকা,সর্দার ভাতা দৈনিক ২ হাজার,দৈনিক মজুরী ২ শত টাকা কথা প্রকল্পের খরচ বাবদ দেয়া হয় বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।যা প্রকল্পের সামনে সাইনবোর্ডে টানিয়ে দেয়া হলেও বাস্তবে তার ৫০ ভাগ হয়েছে কি-না সরেজমিনে ঘুরে তার সত্যতা মিলেনি।
খোজ নিয়ে জানা গেছে,লক্ষ লক্ষ টাকা সরকার মাটি ফেলে রাস্তা সংস্কার করার কথা বলা হলেও মাটির পরিবর্তে বালি ,তাও আবার উল্লেখিত পরিমানের অর্ধেক ফেলে ভাগবাটোয়ারা করে প্রকল্প কমিটির চেয়ারম্যান মো.ইব্রাহিম মিয়া পুরো টাকার অর্ধেকই গায়েব করে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
সরেজমিনে গত বুধবার প্রকল্প এলাকায় গেলে,যে সমস্ত স্থানে রাস্তা মেরামতের নামে বালি ফেলা হয় তার আশ পাশের বাড়ির মালিকদের বলা হয় এটি সরকারি নয়,ব্যক্তিগত কাজ।সরকার নাম মাত্র সহায়তা দিচেছ।ফলে,প্রকল্পটির রাস্তার পাশর্^বর্তী প্রায় অর্ধশত বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা হতে সব্বোচ ১৮ হাজার টাকা বালি ফেলা বাবদ নেয়া হয়।
এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.শওকত ওসমান বলেন,অভিযোগটি আমি পেয়েছি,তদন্ত করবো’।পিআইও মফিদুল আলমের বিষয়ে মন্তব্য করতে বলা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে খানিক বিব্রতবোধ করেন। এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ¦ নুরুল ইসলাম বলেন,-‘আমি দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।পিআইও মফিদুলের বিষয়টি খতিয়ে দেখবো’।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো.মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন,-‘পিআইও মফিদুল ইসলামের এর দায় বর্তায়।এ ছাড়া তিনি মাটি ও বালি এক জিনিস তা কোন ক্রমেই বলতে পারেন না।তার কারনে সরকারের দূর্ণাম হচ্ছ।সরকার রাস্তা নির্মানের জন্য অর্থ বরাদ্ধ দিয়েছে।তিনি তা সুষ্ঠু তদারকি না করে দূর্ণীতির সুযোগ করে দেয়ার অধিকার তাকে কে দিলো? এখন অবৈধ ভাবে মাটির স্থলে বালি ফেলে যে ৫০ জন ব্যক্তির কাছ থেকে ফরদাবাদ ইউপি যুবদলের সভাপতি কাজল মিয়া ১ থেকে ১৮ হাজার টাকা নিলো হয়েছে তারা কি এখন সরকারের গুনগান গাইবে?’