বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে লাগবে ১ মিনিট, ধ্বংসস্তূপ সরাতে ১ মাস
---
হাতিরঝিলে নির্মিত বিজিএমইএ ভবন বিস্ফোরক ব্যবহারের মাধ্যমে ভাঙার পরিকল্পনা করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সংস্থাটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, বিস্ফোরক পদ্ধতি ব্যবহার করে মাত্র এক মিনিটেই ১৫তলা ভবনটি গুঁড়া করে ফেলা হবে। এতে সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ প্রায় এক মাসের মধ্যে অপসারণ করা হবে।
রাজউক পরিচালনা পর্ষদের সদস্য (উন্নয়ন) প্রকৌশলী আবদুর রহমান বুধবার (২২ মার্চ) সন্ধ্যায় বলেন, ‘বিজিএমইএ ভবন ভাঙার প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। আদালতের নির্দেশ পেলেই ভবনটি ভাঙার কার্যক্রম শুরু করব। এজন্য চীনসহ কয়েকটি দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমরা কথা বলছি।’
জানা গেছে, বিস্ফোরকের মাধ্যমে ভবন ভাঙার পদ্ধতিটি হলো— প্রথমে সংশ্লিষ্ট ভবনের ড্রয়িং ডিজাইন সংগ্রহ করা হয়। এরপর বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও অন্যান্য ইউটিলিটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ডিজাইন অনুসরণে প্রতি তলায় পিলারের কাছে বিস্ফোরক দ্রব্য রাখা হয়। তৃতীয় ধাপে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে প্রথমে সর্বোচ্চ তলায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তারপর একে একে বিস্ফোরণ ঘটানো হয় প্রতিটি তলায়। সবশেষে বিস্ফোরণ ঘটানো হয় নিচতলায়। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে এক মিনিটও লাগবে না বলে দাবি করেন দায়িত্বশীলরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নির্মাণ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় প্রচণ্ড ধূলা, শব্দ ও কম্পন তৈরি হবে। এর ফলে বিজিএমইএ ভবনের কাছাকাছি থাকা বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া, কম্পনের কারণে হাতিরঝিলের আন্ডারগ্রাউন্ডে ও সংলগ্ন সড়কে থাকা পানি, গ্যাস ও বৈদ্যুতিক লাইন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কম্পন ও ধূলায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সোনারগাঁও হোটেলও।’ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এসব বিষয়ও বিবেচনা করতে হবে বলে জানান তিনি।
প্রকৌশলী আবদুর রহমান বলেন, ‘২০০৮ সালে বিজয় সরণির মুখে র্যাংগস ভবন ভাঙার সময় কয়েকজন নিহত হয়েছিলেন। এবার তেমন পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতে সুপরিকল্পিতভাবে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা হবে। ভাঙার আগে ভবনের চারপাশে থাকবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।’
রাজউকের এই প্রকৌশলী বলেন, ‘বিস্ফোরক দিয়ে ভবনটি ভাঙা হবে। এক মিনিটের মধ্যেই বহুতল ভবনটি ধসে পড়বে।’ এত বড় ভবনের ধংসস্তূপ সরাতে কতদিন লাগবে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আমরা কথা বলছি। সবকিছু চূড়ান্ত হলে তারা সরেজমিন এসে ভবনটি দেখবেন। ভবনের ডিজাইন দেখে পরিকল্পনা তৈরি করবেন। তখনই বলা যাবে ধংসস্তূপ সরাতে কতদিন লাগবে। তবে আমার মনে হয় এক মাসেরও কম লাগতে পারে।’
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিস্ফোরক দিয়ে স্থাপনা ভাঙার ঘটনা ৮/১০ বছর আগে একবার দেখার সুযোগ হয়েছিল। তখন চীনা কোম্পানি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উন্নয়ন করছিল। এই উন্নয়ন কাজের জন্য সাভারের ব্যাংক কলোনির কাছে একটি সেতু বিস্ফোরক দিয়ে ভাঙা হয়। প্রায় দু’শ ফুট দৈর্ঘের ব্রিজটি চোখের পলকে ধংসস্তূপে পরিণত হয়।’
জানা গেছে, বিভিন্ন দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার বিষয়ে রাজউক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত চীনা প্রতিষ্ঠানকেই বেছে নেওয়া হতে পারে এ কাজে। এতে ব্যয় কিছুটা কম পড়বে বলে ধারণা করছেন কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, গার্মেন্টস কারখানা মালিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) প্রধান কার্যালয়টির নাম ‘বিজিএমইএ কমপ্লেক্স’। এটি বিজিএমইএ ভবন নামে পরিচিত। অ্যাসোসিয়েশনের কর্ণধাররা রাজউকের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে হাতিরঝিল ও বেগুনবাড়ি খালের জলাশয়ের মাঝখানে ১৫তলা ভবনটি নির্মাণ করেন। এ নিয়ে আদালতে মামলা হলে আদালত বিজিএমইএ’র নিজ খরচে ভবনটি ভাঙার পক্ষে রায় দেন।
বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ আবেদন করা হলে গত ৫ মার্চ আদালত তা খারিজ করে দেন। বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে তখন ভবন সরাতে তিন বছর সময় প্রার্থনা করা হয়। ১২ মার্চ আদালত আলোচিত এ ভবনটি সরাতে ছয় মাস সময় বেঁধে দেন। আদালতের রায় অনুযায়ী, বিজিএমইএ নিজ উদ্যোগে ভবন না সরালে রাজউক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এ ক্ষেত্রে রাজউক ভবন ভাঙার ব্যয় বিজিএমইএ থেকে আদায় করে নেবে।
বাংলা ট্রিবিউন