g কারাগারে বিলাসী জীবন কাটছিল মুফতি হান্নানের! | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শনিবার, ১৫ই জুলাই, ২০১৭ ইং ৩১শে আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

কারাগারে বিলাসী জীবন কাটছিল মুফতি হান্নানের!

AmaderBrahmanbaria.COM
মার্চ ৮, ২০১৭

---

কারাগারে বিলাসী জীবন কাটছিল আলোচিত জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের। কারাগারের ভেতরে থেকেই ব্যবহার করতো এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন। যাতে  ইন্টারনেটের সংযোগ ছিল। চালাত ফেসবুক। কথা বলতে ব্যবহার করতো বিশেষ অ্যাপস। বিকাশের একাউন্ট সংবলিত সিমও ছিল তার কাছে। সেই নম্বরে হরহামেশাই লেনদেন হতো বিপুল পরিমাণ অর্থ। কারাগারে থেকেই নিজের মুক্তির জন্য নির্দেশনা দিয়েছিল বাইরে থাকা অধীনস্তদের। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ীই মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য টঙ্গিতে প্রিজনভ্যানে অ্যাটাক করেছিল অনুসারী জঙ্গিরা। জঙ্গি নিয়ে কাজ করে এমন একটি ইউনিটের অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানাতে ইউনিটটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিশেষ প্রতিবেদন দেওয়ার প্রস্তুতিকালেই ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাটি ঘটলো।

জানতে চাইলে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘মুফতি হান্নান আমাদের কাছে যতদিন ধরে আছে, ততদিন এমনটি হওয়ার আশঙ্কা নেই। কারণ মুফতি হান্নানকে আমরা বিশেষ নজরদারির মধ্যে রাখি। সে কাশিমপুরের হাইসিকিউরিটি কারাগার ছাড়াও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও সিলেট কারাগারে ছিল। এছাড়া আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় সে কারাগারে বাইরে থাকে। ওই সময় সে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কিনা, আমার জানা নেই।’

গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়, ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর বাড্ডার বাসা থেকে গ্রেফতার হয় মুফতি হান্নান। তখন থেকেই তাকে ঢাকা, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও খুলনার কারাগারে রাখা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ সময় কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগারে রাখা হয়েছে তাকে। কারাগারে অবস্থান করেই মুফতি হান্নান বাইরে থাকা সহযোগীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতো। ‘হুজাইফা’ নামে তার একটি ফেসবুক আইডি ব্যবহার করতো। যে মোবাইল নম্বর দিয়ে মুফতি হান্নান যোগাযোগ করতো, সেই মোবাইল নম্বর দিয়েই ফেসবুক একাউন্টটি খোলা হয়েছিল। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, ফেসবুক আইডি দিয়ে সিক্রেট কনভারসেশন করার জন্যই তা খোলা হয়েছিল। বর্তমানে সেই একাউন্টটি বন্ধ রয়েছে।

নির্ভরযোগ্য ওই সূত্র জানায়, মুফতি হান্নান কারাগার থেকে ইন্টারনেটের সাহায্যে বিশেষ অ্যাপস ব্যবহার করে বাইরে থাকা যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতো, তাদের মধ্যে তিন জনকে শনাক্তের পর গ্রেফতার করা হয়েছে। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট গত ২২ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে মাহমুদ ওরফে আল হাদী ও জাভেদ নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে। এছাড়া গত ১ মার্চ শাহজাহানপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় সালেহ আহমেদ নাকে এক ব্যক্তিকে। কারাগারের অভ্যন্তরে থেকে এই তিন জনের সঙ্গে নিয়মিত মোবাইল ফোন ও অ্যাপসে যোগাযোগ করত মুফতি হান্নান। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, মুফতি হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করতো এমন আরও কয়েকজনের সন্ধান তারা পেয়েছেন। তাদের মধ্যে সালমান ও জুনায়েদ অন্যতম। এই গ্রুপের সবাইকে ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

সূত্র জানায়, কারাগারের ভেতরে থেকে মুফতি হান্নানের বাইরের যোগাযোগের অনুসন্ধান করতে গিয়ে গোয়েন্দারা একটি মোবাইল নম্বরের সন্ধান পান।  ওই মোবাইল নম্বরটিও কারাগারের ভেতর থেকে মুফতি হান্নান ব্যবহার করত। নম্বরটি দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলা হয়েছিল। পরে খোঁজ নিয়ে ওই নম্বরে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের তথ্যও পান গোয়েন্দারা। বিভিন্ন জায়গা থেকে ওই নম্বরে বিকাশের মাধ্যমে নিয়মিত অর্থ আসতো। সেই অর্থ নির্দিষ্ট কয়েকটি নম্বরে ট্রান্সফার করা হতো।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, মুফতি হান্নানের কাছে এসব অর্থ তার পরিবারের কাছে পাঠানো হতো। কারাগারে থেকে আর বের হওয়া সম্ভব নয় বলে মুফতি হান্নান ভেতর থেকেই দেশে এবং বিদেশে যোগাযোগ করে তার বিকাশ নম্বরে অর্থ পাঠাতে বলতো। বাইরে থেকে আসা অর্থ বিভিন্ন ভায়া হয়ে তার বিকাশ নম্বরে জমা হতো। এসব অর্থ দিয়ে তার অনুপস্থিতিতে পরিবারের সদস্যরা যেন ভালোভাবে চলতে পারে, সেই ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেছে। এছাড়া সাংগঠনিককাজেও কিছু অর্থ ব্যয় করা হতো।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, মুফতি হান্নানের কাছে যারা অর্থ পাঠিয়েছে এবং মুফতি হান্নান যাদের কাছে এসব অর্থ ট্রান্সফার করেছে, সেই লোকজনকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি বাংলাদেশ (হুজি-বি) নেতা মুফতি হান্নানের বিরুদ্ধে ঢাকা, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও খুলনায় ১৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা,  ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ওপর গ্রেনেড হামলা, ২০০০ সালে ২২ জুলাই কোটালিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলা, ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলা, ২০০৪ সালের ২১ মে ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার মামলা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব মামলার মধ্যে রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলা ও সিলেটে আনোয়ার চৌধুরী হত্যাচেষ্টা মামলার ঘটনার বিচার শেষে মুফতি হান্নানকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে আনোয়ার চৌধুরী হত্যাচেষ্টা মামলার ডেথ রেফারেন্সের অনুমোদনও দিয়েছেন উচ্চ আদালত। রমনা বটমূলে হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলছে। বাকি ১৫ টি মামলার মধ্যে ১৩টির বিচারকার্য চলছে। অধিকতর তদন্ত চলছে দু’টি মামলার।

banglatribune.com

এ জাতীয় আরও খবর